
ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির মধ্যেও প্রত্যাশার চেয়েও বেশি প্রবৃদ্ধি চীনেরমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ এবং রিয়েল এস্টেট খাতে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সত্ত্বেও চীনের অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো করেছে।
চীনের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, জুন পর্যন্ত তিন মাসে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ৫.২% হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি। যদিও অনেক অর্থনীতিবিদ ৫.১% প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, এই হার আগের প্রান্তিকের তুলনায় কিছুটা কম।
চীন এখনো বড় ধরণের মন্দা এড়াতে সক্ষম হয়েছে, যার পেছনে রয়েছে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে নেওয়া সহায়তামূলক পদক্ষেপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক ধরনের দুর্বল বাণিজ্যিক সমঝোতা।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "চ্যালেঞ্জের মধ্যেও অর্থনীতি চাপ সামলে স্থিতিশীল অগ্রগতি বজায় রেখেছে।"
চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় অবদান এসেছে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে, যেখানে ৬.৪% প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিশেষ করে ৩ডি প্রিন্টিং যন্ত্র, বৈদ্যুতিক যানবাহন ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবটের চাহিদা বেড়েছে।
পরিসেবা খাত—যার মধ্যে পরিবহন, অর্থনীতি ও প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত—তাতেও ভালো অগ্রগতি দেখা গেছে।
তবে জুন মাসে খুচরা বিক্রির প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৪.৮%, যেখানে মে মাসে এটি ছিল ৬.৪%।
একই দিনে প্রকাশিত আরেকটি সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে চীনের নতুন বাড়ির দাম গত আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে কমেছে।
এতে বোঝা যায়, সম্পত্তি বাজারে সহায়তা দিতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও রিয়েল এস্টেট খাত এখনো ধুঁকছে।
সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ গু ছিংইয়াং বলেন, বিশ্লেষকেরা চীনের অর্থনীতিতে শুল্কের আরও বড় প্রভাব প্রত্যাশা করলেও দেশটি এখনো "অত্যন্ত সহনশীলতা" দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, সম্ভাব্য নতুন শুল্ক আরোপ বা রপ্তানীনীতির পরিবর্তনের আগেই অনেক প্রতিষ্ঠান রপ্তানি বাড়িয়ে দিয়েছে, যার ফলে প্রবৃদ্ধি কিছুটা ত্বরান্বিত হয়েছে।
তবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে পরিস্থিতি আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
"ফলে সরকারকে আরও শক্তিশালী প্রণোদনা দিতে হতে পারে। তবে তা সত্ত্বেও বার্ষিক ৫% প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন সম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।"
তবে কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, চীন এই বছরের "প্রায় ৫%" প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হতে পারে।
ইউরেশিয়া গ্রুপের চীনা বিভাগের পরিচালক ড্যান ওয়াং বিবিসিকে বলেন, "মূল প্রশ্ন হলো, কতটা কম হবে সেই প্রবৃদ্ধি। আমরা মনে করি, ৪% প্রবৃদ্ধি রক্ষা করবে চীন, কারণ এটিই রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য সর্বনিম্ন সীমা।"
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে শুল্ক যুদ্ধের ফলে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে ১৪৫% হারে শুল্ক আরোপ করেছে। এর জবাবে চীনও কিছু মার্কিন পণ্যে ১২৫% শুল্ক আরোপ করে।
তবে জেনেভা ও লন্ডনে আলোচনা চলার পর এসব শুল্ক কার্যকর আপাতত স্থগিত রয়েছে। দুই দেশের কাছে ১২ আগস্ট পর্যন্ত সময় আছে একটি দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে।
ওয়াশিংটন চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে—এমন দেশগুলোকেও ভারী শুল্কে আঘাত করেছে।