Image description

দীর্ঘ ছয় বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের মতামত গ্রহণ, গঠনতন্ত্র সংস্কার, নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রক্রিয়া চালুসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থীদের যাদের মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ ও ফল প্রকাশিত হয়েছে বা অছাত্র, তারা এবার ডাকসুর প্রার্থী বা ভোটার হতে পারছেন না। কিন্তু এ সেশনের শিক্ষার্থীরা চাচ্ছেন তাদেরকে সুযোগ দেওয়া হোক। তাদেরকে সুযোগ দেওয়া বা না দেওয়ার ব্যাপারে আইনী ব্যাখ্যা বা মতামত দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।

জানা যায়, ঢাবির ২০১৮-১৯ সেশনের অধিকাংশেরই মাস্টার্স সম্প্রতি শেষ হয়েছে। কিন্তু তারা তাদেরকে ডাকসুতে প্রার্থী ও ভোটার হিসেবে সুযোগ দেওয়ার দাবি তুলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী এ দাবির যৌক্তিকতা কতটুকু সে ব্যাপারে ডাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র সংশোধন/পরিমার্জন কমিটি সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মোহাম্মদ রায়হান উদ্দিনের কাছে মতামত জানতে চাইলে গত ৯ জুলাই (বুধবার) তিনি একটি লিগ্যাল অপিনিয়ন দিয়েছেন। যা গঠনতন্ত্র সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হক বরাবর পাঠানো হয়।

 

আইনজীবীর পাঠানো এ পত্রে বলা হয়, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্বাচন সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক আইন পর্যালোচনা করেছি। সেই পর্যালোচনা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স ডিগ্রি উত্তীর্ণ হয়ে গেছেন, তারা আর ডাকসু বা হল ইউনিয়ন নির্বাচনের ভোটার বা প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন না। অতএব, ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের যেসব শিক্ষার্থীর মাস্টার্সের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তারা আসন্ন ডাকসু বা হল ইউনিয়ন নির্বাচনে ভোটার বা প্রার্থী হওয়ার যোগ্য নন।

এতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ডাকসু সংবিধানের বিধান সংশোধনের ক্ষমতা রাখে। প্রশ্ন উঠতে পারে, সিন্ডিকেট কি ৪(খ) ও ১৪(ক) ধারা সংশোধন করে মাস্টার্স ডিগ্রি পাশ করা শিক্ষার্থীদের আবার নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে পারে কি না? উত্তর হলো: না। প্রশাসনিক আইনের নীতিমতে, এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা সিন্ডিকেটের নেই।

এতে আরও বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩-এর ২৪ ধারায় সিন্ডিকেটের ক্ষমতা ও কার্যাবলিব বর্ণনা করা হয়েছে। ৪(খ) ও ১৪(ক) ধারা সংশোধন করে মাস্টার্স সমাপ্ত শিক্ষার্থীদের আবার শিক্ষার্থী ঘোষণা করা ‘অযৌক্তিক’ এবং এই ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করবে। এমন সিদ্ধান্ত আদালতে Wednesbury unreasonableness নীতির আওতায় বাতিল হয়ে যেতে পারে।

এর আগে, গত ১০ জুলাই দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, এই সেশনকে নির্বাচনে সুযোগ দেয়ার বিষয়ে সকল ছাত্রসংগঠন দাবি জানিয়েছিল। আমরাও এটিকে সাদরে গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু এর ফলে পরবর্তীতে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে। যাদের ছাত্রত্ব নেই তাদেরকে যদি নির্বাচন করার সুযোগ দেয়া হয় তাহলে এর বিরুদ্ধে যে কেউ আদালতে গিয়ে রিট করতে পারে। এতে করে নির্বাচন আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অধ্যাপক গোলাম রব্বানী আরও বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টার কাছে আইনি বিষয়ে জানতে চেয়েছি। আইনের বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। সে অনুযায়ী আমরা এই সেশনকে রাখতে পারছি না। তবে এই সেশনের যাদের ছাত্রত্ব রয়েছে তারা নির্বাচনে প্রার্থী কিংবা ভোটার হতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, গত মে মাসে ডাকসু নির্বাচন ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আলোচনায় ফল প্রকাশিত হলেও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। এতে সায় দেয় ছাত্রসংগঠনগুলো।