
প্রয়োজনীয় যোগ্যতার অভাবে এমপিওভুক্তির (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) জন্য আবেদন করতে পারছে না বেশির ভাগ অনুদানভুক্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা। অনুদানভুক্ত এক হাজার ৫১৯টি মাদরাসার মধ্যে সোমবার পর্যন্ত আবেদন করেছে মাত্র ১৩৭টি। গত ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এমপিওভুক্তির আবেদন গ্রহণ কার্যক্রম শেষ হচ্ছে আজ (মঙ্গলবার)। জমা দেওয়ার আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকার সারসংক্ষেপ আগামী ২০ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, এমপিওভুক্ত হতে মাদরাসাগুলোকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা স্থাপন, পাঠদান স্বীকৃতি, পরিচালনা ও জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা, ২০২৫-এর নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে যোগ্য হতে হবে। পূরণ করতে হবে বেশ কিছু শর্ত। আর এসব শর্তই পূরণ করতে পারছে না অনুদানভুক্ত বেশির ভাগ মাদরাসা।
এই বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদরাসা) মো. সাইফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনুদানভুক্ত এক হাজার ৫১৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাকে এমপিওভুক্তির জন্য নীতিমালা করা হয়েছে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, অনুদানভুক্ত এক হাজার ৫১৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা বলা হলেও বাস্তবে বেশির ভাগ মাদরাসার ক্ষেত্রে ভৌত অবকাঠামো, প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নেই। নেই সংরক্ষিত ও সাধারণ তহবিল। নীতিমালায় একটি মাদরাসার মৌলিক যে উপকরণের দরকার তা থাকা সাপেক্ষে এমপিও দেওয়া হবে। বেশির ভাগ মাদরাসায় সেই মৌলিক উপকরণই নেই। এ কারণে অনেক মাদরাসা আবেদন করতে পারছে না।
ইসলামী ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বয়ে যে শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে, সেই আলিয়া মাদরাসা পদ্ধতিতে পঠন-পাঠন হয় ইবতেদায়ি মাদরাসায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমমান এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন হয় ১৯৮৪ সালে। এরপর চার দশক কেটে গেলেও শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে অনুদানভুক্ত এক হাজার ৫১৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা এবং সহকারী শিক্ষকরা তিন হাজার টাকা করে অনুদান পান। এর বাইরে দেশে আরো পাঁচ হাজার ৯৩২টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা রয়েছে, যেগুলো সরকারি কোনো অনুদান পায় না। শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে এ বছরের শুরুতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোকে প্রথমে এমপিওভুক্ত করে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ঘোষণা দেওয়া হয়।
গত ২৫ জুন ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তির নীতিমালা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালা অনুসারে মাদরাসাগুলোর মোট ছয়টি পদ এমপিওভুক্ত হবে। ইবতেদায়ি প্রধান বেতন পাবেন দশম গ্রেডে। আর সাধারণ, বিজ্ঞান ও আরবি বিষয়ের সহকারী শিক্ষকের বেতন হবে ১৩তম গ্রেডে। আর কারি বা নুরানি বিষয়ের সহকারী শিক্ষকরা ১৬তম গ্রেডে বেতন পাবেন। আর প্রতিটি ইবতেদায়ি মাদরাসার অফিস সহায়ক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, যে পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা ২০তম গ্রেডে বেতন পাবেন। নীতিমালা অনুসারে, মাদরাসাগুলোর শিক্ষক পদে এনটিআরসিএর সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। নীতিমালায় মাদরাসাগুলোর ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নির্দেশনা এসেছে। প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহায়ক পদে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ হবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।
এমপিওভুক্তির জন্য ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোর গ্রেডিং পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে। একাডেমিক স্বীকৃতি, প্রতিষ্ঠানের জমি, প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা, বার্ষিক পরীক্ষার গড় নম্বর, পরিবেশ ইত্যাদি সূচকে নম্বর নির্ধারণ করে মাদরাসাগুলোর গ্রেডিং করা হবে। নীতিমালায় মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আহবায়ক করে সাত সদস্যের এমপিও কমিটি গঠন করা হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর মাদরাসাগুলোর কাগজপত্র যাচাই করে এমপিও দেবে। প্রথমে মাদরাসাগুলোকে এমপিও কোড দেওয়া হবে। শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির তারিখ থেকে বা এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে যোগদানের তারিখ থেকে এমপিও পাবেন।