
জাতীয় সংসদের নোয়াখালী-২ (সেনবাগ, সোনাইমুড়ি আংশিক) আসনটি জেলার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন। এই আসনটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। নির্বাচনি এলাকার ভোটারদের মাঝে নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কোনো কোনো প্রার্থী ইতোমধ্যে ভোটারদের সঙ্গে উঠান বৈঠক করছেন। বিএনপি, জামায়াতসহ সম্ভাব্য সব প্রার্থীরা পবিত্র ঈদুল আজহার আগে পরে ভোটারদের মন জয় করতে নানা কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফলে অনেকটা সরগরম ছিল পুরো নির্বাচনি এলাকা।
দীর্ঘদিন ভোট বঞ্চিত মানুষ এবারের নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। তাই আসন্ন নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে স্থানীয় সাধারণ ভোটারদের ধারণা। কিন্তু এ আসনে ২০১৪ সাল থেকে ভোটারবিহীন নির্বাচনে এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মোরশেদ আলম। বর্তমানে তিনি জেলহাজতে আছেন। এ ছাড়া আসনে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীরা পলাতক রয়েছেন। তারা প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছেন ও এলাকায় পোস্টার লাগিয়েছেন। অনেকে এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। অপর দিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পাশেও দাঁড়িয়েছেন কেউ কেউ।
নোয়াখালী-২ (সেনবাগ, সোনাইমুড়ি আংশিক) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক ১৯৯১ সাল থেকে একটানা পাঁচ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এয়োদশ সংসদ নির্বাচনে এমপি পদে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধী দলীয় চিফহুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমান ও নোয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্য আবদুল মান্নান।
অপর দিকে জামায়াতে ইসলামী থেকে একক প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালী জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সাইয়েদ আহমদ নাম ঘোষণা করেছেন। তিনি সেনবাগ, সোনাইমুড়ি আংশিকের সর্বত্র গণসংযোগ এবং সমাবেশ করে যাচ্ছেন। এ আসনে ইসলামি শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ খলিলুর রহমান, সেনবাগ উপজেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা তোফাজ্জল হোছাইন মিয়াজী, এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক, জাতীয় যুবশক্তির মো. কামরুজ্জামান দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু গণঅধিকার পরিষদের কোনো প্রার্থীর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
এ আসন বিএনপির শক্ত ঘাঁটি বলে দলের প্রার্থীরা সবাই বলেছেন, দল যাকে মনোনয়ন দিবে আমরা তার পক্ষে ধানের শীষ মার্কায় নির্বাচন করব। এই আসনে জামায়াতে ইসলামী একক প্রার্থী হিসেবে এবং ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলনের একক প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা শুরু করছে।যদিও বিএনপির হাইকমান্ড এখনো এই আসনে কাউকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়নি। বিএনপির নেতারা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য দলের সমর্থন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।তারপরও এ আসনে বিএনপির জয়নুল আবদিন ফারুক পাঁচ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন করেছেন। তার আমলে এলাকায় পুল-কালবার্ট, রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, মক্তব, মসজিদ, হিন্দুদের মন্দির-গ্রীর্জা, সামাজিক ও সাংকৃতিক বিভিন্ন সংগঠনসহ পুরো নির্বাচনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
তিনি আমার দেশকে বলেন, একটানা পাঁচবার সদস্য সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন করেছেন। তার আশা আসন্ন নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দিবে।
এ দিকে জামায়াতে ইসলামী থেকে একক প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালী জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সাইয়েদ আহমদ বলেন, তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এলাকায় গরিব ও বেকার যুব সমাজের কর্মসংস্থানের জন্য এলাকায় মিল-কারখানা স্থাপন করে বেকার সমস্যা দূর করবেন।
অপর দিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ খলিলুর রহমান। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে মাওলানা তাফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি। তারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ শুরু করেছেন।
নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের গণসংযোগ ও সরব উপস্থিতি চোখে পড়ছে। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ তারাও দলীয় কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু গণঅধিকার পরিষদ এ আসনে কোনো তৎপরতা নেই বললে চলে। তবে মাঠে নেই জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য কোনো প্রার্থী।
আওয়ামী লীগবিহীন রাজনৈতিক ময়দানে নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার ও সমর্থকদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে এই আসনের বিভিন্ন হাট-বাজার এবং গ্রামের চা-দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে আলোচনা-সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে।