Image description

গণঅভ্যুত্থানে ভারতীয় আশীর্বাদপুষ্ট আওয়ামী সরকারের পতন হলেও দেশটি নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সেনানিবাসের অভ্যন্তরে অবস্থিত সরকারি একটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাওয়া গেছে ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদের অস্তিত্ব।

সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে (এমআইএসটি) দুটি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে ভারতীয় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর চার কর্মকর্তা নিযুক্ত আছেন বলে জানা গেছে। এতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক তথ্য ভারতে পাচার হওয়াসহ সার্বিকভাবে দেশের জন্য চরম নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখছেন বিশ্লেষকরা।

সূত্রমতে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান এমআইএসটি। ‘ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস’-এর অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম চালায় প্রতিষ্ঠানটি।

এমআইএসটির ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা কর্নেল অরিন্দম চ্যাটার্জি। একই বিভাগে ইন্সট্রাক্টর ক্লাস-বি হিসেবে কর্মরত ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার টি গোপি কৃষ্ণ।

ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গোপি কৃষ্ণ ২০২২ সালের আগস্ট থেকে পদটিতে কর্মরত। এর আগে তিনি ভারতের পুনে ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমিতে ইন্সট্রাক্টর হিসেবে ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত, মুম্বাইয়ে নেভাল সিভিলিয়ান পে অ্যান্ড পেনশন অফিসে ২০১৬ থেকে ২০১৮ এবং হায়দরাবাদে কম্পিউটার সায়েন্স করপোরেশনে ইআরপি ডেভেলপার হিসেবে ২০১০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর (ফরেন ফ্যাকাল্টি) হিসেবে কর্মরত ভারতীয় বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা গ্রুপ ক্যাপ্টেন সিদ্ধার্থ শঙ্কর পাটনায়েক ও গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এন সোমান্না। তবে এসব কর্মকর্তার বিস্তারিত তথ্য ওয়েবসাইটে নেই।

এর আগে বিভাগটিতে বিদেশি শিক্ষক হিসেবে ভারতীয় বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এল গোলানী ও গ্রুপ ক্যাপ্টেন কার্তিকিয়ান কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে।

দেশের সেনা দপ্তরের ভেতরে অবস্থিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়োজিত থাকার বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম আমার দেশকে বলেন, আমরা সংবাদ পেয়েছি শেখ হাসিনার সময় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর আন্ডার কভার অফিসারদের বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ৫ আগস্ট-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে আগের ধারাবাহিকতায় কোনো প্রতিষ্ঠানে ভারতীয়রা রয়েছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা যেতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, এমআইএসটিতে থাকা ভারতীয় প্রশিক্ষকরা বৈধ চুক্তিতে রয়েছেন কি না কিংবা তাদের সত্যিকারের স্ট্যাটাস কী এবং বর্তমানে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি নাÑএসব বিষয় সেনা কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে সে অনুযায়ী সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিতে পারে।

সূত্রমতে, এমআইএসটির কমান্ড্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত আছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল মোহাম্মদ নাসিম পারভেজ।

প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, তিন বাহিনী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এমআইএসটি কাউন্সিল, পরিচালনা পর্ষদ এবং একাডেমিক কাউন্সিল রয়েছে।

এমআইএসটি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিইউপির এক কর্মকর্তা আমার দেশকে জানান, প্রতিষ্ঠানটি বিইউপির অধিভুক্ত এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিচালিত। বিইউপি থেকে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিইউপির সঙ্গে এমআইএসটির আর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

সেনানীবাসের ভেতরে এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর পরিচালক লে. কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী আমার দেশকে জানান, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার অস্বাভাবিক তৎপরতা সর্বমহলে আলোচিত ছিল। হাসিনা সরকারের আস্কারায় সে সময় দেশের রাজনীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব বিস্তারের খবর পাওয়া যায়। বিশেষ করে গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানপূর্ব ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধেও দেশটির প্রকাশ্য অবস্থান ছিল।

এমনকি ওই আন্দোলন দমনে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় বাহিনীর লোকজনও অংশ নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদনে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভারতীয় বাহিনীর সম্পৃক্ততার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।