Image description

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার দুপুর ১টার দিকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বিক্ষোভে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। 

‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থী সমাজ’ ব্যানারে এই বিক্ষোভ হয়। দুপুর ১২টার দিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেছেন।

 
ইডেন কলেজ, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেন।

 

বিক্ষোভ চলাকালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘কণ্ঠে আবার লাগা জোর, চাঁদাবাজের কবর খোঁড়, ‘চাঁদাবাজ চাঁদা তোলে, ইন্টেরিম কী করে?’, ‘চব্বিশের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘কে দিল রে জানোয়ার, মানুষ মারার অধিকার’ বলে স্লোগান দেন।

 

হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগের দশম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ফারাবি জিসান বলেন, ‘মিটফোর্ডের সামনে চাঁদাবাজির কারণে একজন মানুষকে পাথর দিয়ে থেঁতলে নৃশংসভাবে মেরে ফেলেছেন যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। অথচ দল দায় না নিয়ে তাঁদের শুধুই বহিষ্কার করেছে।

 
আমরা বলতে চাই, এখানে অবশ্যই দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। যেই ছাত্রসংগঠন থেঁতলে মানুষ মারতে পারে, সেই সংগঠন কোনো ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে পারে না। তাই ছাত্রদল হোক বা শিবির ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো দলের কমিটি থাকতে পারবে না।
 
আজকের মধ্যেই ছাত্রদলের কমিটি প্রত্যাহার করতে হবে।’

 

কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ সাকিব বলেন, ‘বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে সবাই মিলেমিশে কাজ করার যেই মানসিকতা তৈরি হয়েছিল, সেটা নষ্ট হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংসতা বেড়ে গেছে। একজন মানুষকে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী মুরাদ আল হাসান বলেন, ‘তারেক রহমানকে বলতে চাই, আপনি দেশে ফিরে আসুন।

 
আপনার দল সামলান, ভোটব্যাংক সামলান। আপনারা পরিবর্তনের রাজনীতি করুন।’

 

গত ১১ জুন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী এক বছরের জন্য সাত সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদল। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এই কমিটি প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কর্মসূচিতে বিতরণ করা একটি লিফলেটে এই তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো—এক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে যাদের কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে, সেটি অনতিবিলম্বে অফিশিয়ালি প্রত্যাহার করতে হবে। ভবিষ্যতে আবারও কেউ একই কাজ করার দুঃসাহস দেখালে তাকে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে। দুই, চকবাজার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসদের দলীয় শেল্টার দেওয়া রাঘববোয়ালদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। তিন, দেশের প্রতিটি জেলায় রাজনৈতিক পরিচয়ে মাঠ-ঘাট, বাজার-দোকানপাট, এবং বাসস্ট্যান্ড-টেম্পোস্ট্যান্ডগুলোতে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে।’

এ তিন দাবির মধ্যে সারা দেশে চাঁদাবাজি বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময়ের মধ্যে চাঁদাবাজি বন্ধে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দেখা না গেলে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের ঘোষণা দেন তারা।

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে একটি মিছিল ভাটারা এলাকা প্রদক্ষিণ করে এনএসইউর ১ নম্বর গেট এলাকায় এসে শেষ হয়। এ সময় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন।

দুপুর ১টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে প্রতিবাদী বিক্ষোভ সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। বিচার দাবিতে দুপুরে ইডেন কলেজের সামনে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন।

গত বুধবার রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯)। হত্যার আগে ডেকে নিয়ে তাঁকে পিটিয়ে এবং ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে তাঁকে বিবস্ত্র করা হয়। তাঁর শরীরের ওপর উঠে লাফায় কেউ কেউ।

এ ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এ ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা জানা গেছে। গতকাল সন্ধ্যায় এই মামলার দুই আসামিকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী যুবদল। হত্যা মামলার আরো দুই আসামিকে নিজেদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল।