Image description

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত মাদ্রাসাছাত্র আদিলুর রহমান আদিলের (১৭) মা আয়শা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আত্মীয়-স্বজনরা ফোন করে বলে তাদের সন্তান এসএসসিতে গোল্ডেন পেয়েছে। এজন্য পাড়া প্রতিবেশীদের মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। তাদের ঘরে ঘরে এসএসসি পাশের উৎসব চলছে। আমার আদিলও এবার এসএসসি পরিক্ষার্থী ছিল। তাদের মত আমার ঘরেও আজ উৎসব হওয়ার কথা ছিল। জুলাই আন্দোলনে ফ্যাসিস্টদের গুলি আমার উৎসব কেড়ে নিয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে যুগান্তরের প্রতিবেদক ফতুল্লার ভুইগড় কড়ইতলা এলাকার বাড়িতে গেলে এসব কথা বলেন আয়শা আক্তার। এ সময় তার পাশে ছিলেন আদিলের বাবা ব্যবসায়ী আবুল কালাম।

আদিলের মা আরও বলেন, ঘরের আলমারিতে আদিলের জামা-কাপড়গুলো যখন চোখে পড়ে তখন বুক ফেটে কান্না আসে। মনটাকে বুঝাতে পারি না আদিল আর ঘরে ফিরবে না। জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৫ লাখ ও বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকা পেয়েছি। টাকা দিয়ে সন্তানের ভালোবাসা পূরণ করা যায় না। প্রতিটি বাবা-মায়ের কাছে সন্তান কলিজার টুকরা। আমার আদিল লেখাপড়ায় মেধাবী ছিল। সে মেধাবীদের জন্য বৈষম্যের বিরুদ্ধে জীবন দিয়েছে। দেশে যেন মেধাবীদের মূল্যায়ন করা হয়।

আবুল কালাম বলেন, বয়সের তুলনায় আমার আদিল অনেক লম্বা হয়েছিল। সেদিনের কথা চোখে ভাসছে আদিল রেজাল্ট বই এনে আমার হাতে দিয়ে বলছে বাবা আমি সবার সেরা। দেখ আমার রেজাল্ট। আব্বা আমি পড়ালেখা শেষে সেনাবাহিনীতে যোগ দিব। বড় অফিসার হয়ে দেশের সেবা করব। ছেলের সেদিনের কথা এখনও বার বার মনে পড়ে। আমার সন্তান দেশের সেবা করতে না পারলেও দেশের জন্য জীবন দিতে পেরেছে। তিনি আরও বলেন, আমার বড় ছেলে আব্দুল্লাহ আল নোমান দুবাই মাস্টার্সে লেখাপড়া করছে। মেজ ছেলে বাইজিদ নার্সিং পাশ করে ইন্টার্নি করছে। আমার ৩ ছেলের মধ্যে আদিল ছোট।

দেশের সবচেয়ে ভালো মানের মাদ্রাসা যাত্রাবাড়ী এলাকায় অবস্থিত তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র ছিলেন আদিল। এ মাদ্রাসা থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। ঘটনার দিনের কথা স্মরণ করে আবুল কালাম বলেন, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই দুপুর ১টায় প্রতিবেশীরা এসে বাড়িতে বলেন আমাদের বাড়ির কাছেই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে ভুইগড় এসবি গার্মেন্টসের সামনে আদিলের বুকে গুলি লেগেছে। প্রতিবেশীর মুখে এমন কথা শুনে কাঁদব না দৌড়ে ছেলের কাছে যাব কিছুই মাথায় আসছে না। মনে হচ্ছে গুলিটা আমার কলিজাতে লেগেছে। কোনো মতে আদিলের কাছে গিয়ে দেখি তার বুকটা একাধক গুলিতে ফুটো হয়ে গেছে। নিথর দেহ বুকে নিয়ে কাঁদতে পারছি না। বুকটা ফেটে যাচ্ছে কান্না আসছে না। আদিলের সহপাঠীরা এসে আদিলের নিথর দেহসহ আমাকে বাসায় নিয়ে আসে। আমাদের দাবি যারা আদিলকে হত্যা করেছে তাদের যেন সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হয়।

এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, এ মামলায় ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনাসহ দুই শতাধিক আসামি রয়েছে। তাদের মধ্যে একাধিক আসামিকে গ্রেফতার করেছি।