
যখন সারাহ এবং বেন ব্রিউইংটন বিয়ে করে লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাস শুরু করেন; তখন তারা আশা করেছিলেন, তাদের জীবনের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে সন্তান নেওয়া। তবে তা হয়নি। বরং প্রথম সন্তান জন্ম দেওয়ার চেয়ে তারা ক্যারিয়ারের দিকে মনোনিবেশ করেন, ভ্রমণ করেন এবং বন্ধুদের সাথে সময় কাটান।
সংবাদমাধ্যম এনপিআরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাচ্চা নেওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করায় ব্রিউইংটন দম্পতির মধ্যে কোনো অপরাধ বোধ নেই। এই দম্পতি বলছেন, তারা একটি বৃহত্তর প্রবণতার অংশ। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়েই কম সন্তান নেওয়ার প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সারাহ মার্কিন সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, ‘আমি মনে করি, ক্রমহ্রাসমান জন্মহার সরকারের জন্য উদ্বেগের বিষয়। কারণ এমন এক সময় আসবে যখন সবাই অবসরে যাবে এবং কর্মী পাওয়া যাবে না।’
অনেক গবেষক বিশ্বাস করেন যে, এই বৈশ্বিক পরিবর্তন মূলত একটি ইতিবাচক বাস্তবতার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। তরুণ দম্পতি, বিশেষ করে নারীরা এখন অনেক বেশি স্বাধীন এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। তারা তাদের জীবনে বাচ্চার ভূমিকা সম্পর্কে অনেকে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধাত্য ও জনসংখ্যার প্রবণতা নিয়ে গবেষণা করা অর্থনীতিবিদ মেলিসা কার্নি বলেন, ‘এমন নয় যে মানুষ আগের মতো আর বাচ্চা পছন্দ করে না। বরং তারা তাদের ক্যারিয়ারে সময় দেয়, আরো বেশি সময় অবসর কাটাতে পারে। এটি সামাজিকভাবে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য।’
জাতিসংঘের নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী গড় জন্মহার সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রায় প্রতিটি দেশ এবং সংস্কৃতিতে, নারীরা কম সন্তান ধারণ করছেন। জাতিসংঘের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী, একজন নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তানের সংখ্যা ১৯৬০ সালে পাঁচটি থেকে কমে গড়ে ২ দশমিক ২ এ দাঁড়িয়েছে।
কার্নে বলেন, ‘বিশেষ করে যেসব দেশে লোকজজনের রোজগার অনেক বেশি সেসব দেশে। আমরা সত্যিকার অর্থেই জনসংখ্যা হ্রাসের প্রশ্নে মুখোমুখি।’
অনেকে নারী সন্তান নিতেই আগ্রহী নন
কার্নির মতে, মার্কিন নারীদের অর্ধেক এখন ৩০ বছর বয়সেও সন্তানহীন। দুই দশক আগে যেখানে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ মার্কিন নারীর এই বয়সে সন্তান ছিল না। অনেকে বাচ্চা পছন্দ করলেও বাচ্চা প্রতিপালন অনেক বেশি ব্যয় বহুল হওয়ায় একটির বেশি সন্তান নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য, কোনো বৃদ্ধি বা হ্রাস ছাড়াই গড়ে একজন নারীর প্রায় ২ দশমিক ১ সন্তান জন্মদান করা প্রয়োজন।
জনসংখ্যার বিস্ফোরণ হচ্ছে না
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পরিবেশগত ক্ষতি এবং জীবনযাত্রার মানের প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী গত কয়েক দশক ধরে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে। বেশিরভাগ জনসংখ্যাবিদ এখন বলছেন, জনসংখ্যার বিস্ফোরণ এখন স্তিমিত হয়ে গেছে।
জাতিসংঘের গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের কারণে সন্তান জন্মদানের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে প্রতি ১০টি দেশের মধ্যে ১টির বেশি দেশে দম্পতিরা সন্তান ধারণের হার এতটাই কমিয়ে দিয়েছেন যে অনেক বিজ্ঞানী উদ্বিগ্ন।
চীন, ইতালি, জাপান, রাশিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক দেশে এরইমধ্যে জনসংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করেছে।
তবে কার্নি বলছেন, জনসংখ্যা হ্রাস সম্পর্কে আশঙ্কাগুলো অতিরঞ্জিত এবং বিভ্রান্তিকর। বেশিরভাগ দেশে, জনসংখ্যাগত পরিবর্তনগুলো কয়েক দশক ধরে ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফ্রান্সসহ কিছু দেশ ক্রমহ্রাসমান গর্ভধারণ স্থিতিশীল করতে সক্ষম হয়েছে।
জন্মহার হ্রাস একটি বাস্তব সমস্যা
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই একমত যে, জন্মহার হ্রাস একটি বাস্তব এবং গুরুতর সমস্যা। যা রাজনীতিদ ও নীতিনির্ধারকদের সমাধান করা উচিত।
তবে রাজনীতিবিদ এবং বিজ্ঞানীদের মধ্যে যারা জনসংখ্যা হ্রাসকে একটি গুরুতর উদ্বেগ হিসেবে দেখেন, তারাও একমত যে দম্পতিরা আরো বেশি সংখ্যক সন্তান নিতে আগ্রহী হবেন, এমন একটি সংস্কৃতি এবং পরিবেশ তৈরি করা কঠিন এবং ব্যয়বহুল।