Image description

রাজধানীর বনানী এলাকার হোটেল জাকারিয়ায় হামলার শিকার দুই নারী ছিলেন অতিথি। তাদের ওপর হামলা ও হোটেল ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

জাকারিয়া হোটেল থেকে জানা যায়, ঘটনার সময় যেই দুই নারীকে মারধর করা হয়েছিল, তারা ছিলেন অতিথি। এ হামলার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরে সেখানে দেখা যায়, দুই নারী আতঙ্কিত হয়ে সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নিচে নামার চেষ্টা করছেন এবং তখন তাদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়।

ঘটনা:  

মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে মহাখালী ওয়ারলেছ গেইটের এ.কে খন্দকার রোডের বাড়ি নম্বর ৩৫-এ অবস্থিত হোটেল জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনালে এ ঘটনা ঘটে। মনির হোসেন নামে এক যুবকের নেতৃত্বে একদল ব্যক্তি হোটেলে ঢুকে এ হামলা ও ভাঙচুর চালান। তবে এ মনিরের রাজনৈতিক পরিচয় জানার পরে সংগঠন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।

ভিডিও ফুটেজে যা দেখা যায়:
শাড়ি পরা এক নারী আতঙ্কিত হয়ে হোটেলের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিলেন। এসময় বিপরীত দিক থেকে এক ব্যক্তি তার পথ রোধ করে শরীরে আঘাত করেন। তার আঘাতে ওই নারী মেঝেতে পড়ে যান। এরপর আরও এক নারী দৌড়ে নামার চেষ্টা করলে তাকে পেছন থেকে ধাওয়া করে একজন মাটিতে ফেলে দেন। পরে হামলাকারীরা মিলে দুই নারীকেই বেধড়ক মারধর করেন। ভিডিওতে আট-১০ জনকে দেখা যায়, যারা দুই নারীর ওপর হামলা চালান। তাদের চিৎকারের শব্দ শোনা যায় এবং হোটেল ভাঙচুরের শব্দও ভিডিওতে পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী হোটেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য:
শুক্রবার (৪ জুলাই) বিকেলে ঘটনাস্থলে হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, লোকজনের উপস্থিতি কম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোটেল জাকারিয়ার এক কর্মকর্তা জানান, আমাদের এখানে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে এখনও কোনো অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বারে কোনো নারী কর্মকর্তা বা কর্মচারী নেই। ওই দিন যেসব নারী আক্রান্ত হয়েছেন, তারা ছিলেন অতিথি।

হোটেল জাকারিয়ার দারোয়ান মো. আছলাম বলেন, শুক্রবার বার বন্ধ থাকে, ওপরে কাজ চলছে। আশুরার কারণে শনিবারও বন্ধ থাকবে। মামলা-টামলা যা হওয়ার, দুদিন আগেই হয়েছে।

ঘটনার পেছনের বিবরণ: 
মামলার এজাহারে বলা হয়, ৩০ জুন রাত ৮টা ৫ মিনিটে হোটেল জাকারিয়ায় গিয়ে একটি ভিআইপি রুম ভাড়া চান বনানী থানা যুবদলের সেই সময়ের আহ্বায়ক মনির হোসেন। সব ভিআইপি রুম ভাড়া থাকায় হোটেল তাকে রুম দিতে পারেনি। পরে তিনি বারে বসে মদ্যপান করেন এবং বিল পরিশোধের সময় স্থানীয় নেতা পরিচয় দিয়ে ডিসকাউন্ট দাবি করেন। ছাড়ের বিল পরিশোধের পর তাকে ভিআইপি রুম না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে জাকারিয়া হোটেল এবং বারের স্টাফদের দেখে নেওয়ার হুমকি-ধামকি দিয়ে চলে যান মনির। পরদিন মনির হোসেন ফের ফিরে এসে তার লোকজনসহ হোটেল ও বারে ভাঙচুর চালান। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয় বরে দাবি হোটেল কর্তৃপক্ষের। এছাড়া ৭০ হাজার টাকা নগদ এবং পাঁচ লাখ টাকার মদ ও বিয়ার চুরি করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার অগ্রগতি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য: এ ঘটনায় বুধবার (২ জুলাই) বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করা হয়।  

আসামিরা হলেন- মনির (৪২), লিটন (৩০), হাসান (৩৫), সামু (৩২) ও জহির (৩০)। এছাড়া ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. এমদাদ বাংলানিউজকে বলেন, হোটেলে ভাঙচুর ও দুই নারীর উপর হামলার ঘটনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এখন পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। সিসি ফুটেজ বিশ্লেষণ চলছে। আসামিদের ধরতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

দুই নারীর পরিচয় কি জানা গেছে-এমন প্রশ্নের জবাবে এসআই বলেন, হামলার শিকার দুই নারী হোটেলের কোনো কর্মী নন। তারা অতিথি। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।  

দলীয় সিদ্ধান্ত:

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাতে যুবদল থেকে মনির হোসেনকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যুবদলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো অপকর্মের দায়দায়িত্ব দল নেবে না এবং দলীয় নেতাকর্মীদের তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।