Image description

ভূমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব না থাকায় আটকে গেছে বগুড়া বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজ। ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে পাবনার ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটি। লালমনিরহাট বিমানবন্দরটিও চালুর কোনো উদ্যোগ নেই। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে শিবগঞ্জ এলাকায় ৫৫০ একর জমির ওপর নির্মিত ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটিও নানান কারণে বন্ধ রয়েছে। এ চারটি বিমানবন্দর চালু হলে উত্তরাঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থা পাল্টে যাবে। আকাশপথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটবে। ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসারসহ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসবে উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলা। বগুড়া, ঈশ্বরদী, লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁওয়ে নির্মাণকৃত বিমানবন্দরগুলো বাণিজ্যিকভাবে দ্রুত চালু করার দাবি উত্তরবঙ্গের কয়েক কোটি মানুষের।

জানা যায়, ১৬ বছর পর আগামী জুলাইয়ে বগুড়ার আকাশে বিমান উড়ার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব না থাকায় আটকে গেছে বগুড়া বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজ। প্রায় দুই যুগ পর বগুড়ায় বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে বগুড়া বিমানবন্দরের বিদ্যমান রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, ডাম্বল এবং এপ্রোন সারফেস এরিয়ায় সারফেসের কার্যক্রম চলছে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব না থাকায় বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ কাজ আটকে গেছে।

বগুড়ায় বিমানবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৮৭ সালে। কিন্তু নানান জটিলতায় সেই উদ্যোগে ভাটা পড়ে। এরপর ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের শেষদিকে এখানে বিমানবন্দর স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য সরকার ২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্পও অনুমোদন দেয়। ১৯৯৫ সালে সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে ১১০ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ সালে প্রকল্পের আওতায় রানওয়ে, কার্যালয় ভবন ও কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০০০ সালে। কিন্তু এরপর ২৪ বছরেও বগুড়া থেকে বিমান আর ওড়েনি আকাশে। সম্প্রতি বগুড়া বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালু করতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে বেবিচক। কমিটির সদস্যরা বিমানবন্দর এলাকা পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদনও দাখিল করেন। এরপর বিমানবন্দরের বিদ্যমান রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, ডাম্বল এবং এপ্রোন সারফেস এরিয়ায় সারফেসের কার্যক্রম শুরু হয়।

বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বগুড়া বিমানবন্দরের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তবে ভূমি অধিগ্রহণ প্রস্তাব না থাকায় আটকে গেছে সম্প্রসারণ কাজ। খুব দ্রত সময়ে এটির সমাধন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ঈশ্বরদী বিমানবন্দর : এদিকে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে পাবনার ঈশ্বরদী বিমানবন্দর। দীর্ঘদিন ধরে বন্দরটি চালুর জন্য দাবি করে আসছে পাবনাসহ আশপাশের তিন জেলার ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা। জানা যায়, নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ঈশ্বরদী ইপিজেডের কারণে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর ঘিরে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক, দেশি-বিদেশি ক্রেতা-বিক্রেতা ও কর্মকর্তারা বিমানবন্দরটি চালু হলে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পেতে পারতেন। এ ছাড়া এই বিমানবন্দরটি চালু হলে শুধু পাবনা নয়, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়াসহ আশপাশের ব্যবসায়ীরাও বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তার সমাধান করতে পারতেন। এসব পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন তৎকালীন বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান। কিন্তু চালুর ছয় মাস পর ২০১৪ সালের ২২ মে হঠাৎ বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর চালু হয়নি।

পাবনার ঈশ্বরদী থেকে ঢাকার দূরত্ব ১৭৫ কিলোমিটার। ঢাকা-আরিচা হাইওয়ে ধরে এ পথ পাড়ি দিতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। অপরদিকে পশ্চিম রেলওয়ের বিভাগীয় কার্যালয় ঈশ্বরদীর পাকশীতে। এখান থেকে বেশ কয়েকটি ট্রেন নিয়মিত ঢাকায় যাতায়াত করে। ট্রেনে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। বাস ও ট্রেনে প্রতিদিন বাধ্য হয়েই কয়েক হাজার মানুষ ঢাকায় যাওয়া-আসা করেন। এ ছাড়াও রূপপুর প্রকল্পে কর্মকর্তা, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পাঁচ হাজারের বেশি রাশিয়ান নাগরিক কর্মরত আছেন। সড়কপথে ঢাকায় যাতায়াতে তাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত পাবনার ঈশ্বরদী বিমানবন্দর থেকে ১৯৬২ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ঈশ্বরদী-ঢাকা ফ্লাইট চলাচল নিয়মিত ছিল। এরপর বন্ধ হয়ে বিমানবন্দরটি। পরে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করে ১৯৯৪ সালে বিমানবন্দরটি আবার চালু করা হয়। কিছু দিন বিমান চলাচলের পর যাত্রী সংকটে তা আবারও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৭ বছর পর ২০১৩ সালে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ঈশ্বরদী বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। তবে ৬ মাস ১১ দিন পর যাত্রী সংকটে ২০১৪ সালের ২৯ মে এই বিমানবন্দরে আবার বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, যা আজ অবধি বন্ধই রয়ে গেছে। পাবনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সুবিধার্থে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর আবারও চালু হওয়া দরকার। পুনরায় বিমানবন্দটির চালু হলে স্থানীয় ব্যবসাবাণিজ্যে প্রাণ সঞ্চার হবে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।

লালমনিরহাট বিমানবন্দর : লালমনিরহাট বিমানবন্দরটিও চালুর কোনো উদ্যোগ নেই। এটি চালু হলে রংপুর অঞ্চলে ঘটবে অর্থনৈতিক বিপ্লব। যোগাযোগের ক্ষেত্রে যোগ হবে নতুন মাত্রা। পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের দৃশ্যপট। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরটি চালুর আশ্বাসের কথা শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালুর জন্য বেবিচক চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিদর্শক দল পাঠানো হয়। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, সরকারিভাবে কোনো কাজ এখনো শুরু হয়নি। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরটি চালুর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এটি চালু হলে রংপুর অঞ্চলে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে। পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের দৃশ্যপট।

ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর : ১৯৪০ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে শিবগঞ্জ এলাকায় ৫৫০ একর জমির ওপর নির্মিত বিমানবন্দরটিও নানান কারণে বন্ধ রয়েছে। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময় ভারতীয় বিমানবাহিনী হামলা চালালে বিমানবন্দরের রানওয়েটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিমানবন্দরটি সংস্কার করা হয় এবং কয়েক বছর কিছু বাণিজ্যিক ফ্লাইটও পরিচালিত হয়। ১৯৮০ সালে লোকসানের কারণ দেখিয়ে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১৯৯৪ সালে পুনরায় বিমান চলাচল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। বিমানবন্দরটি চালুর বিষয়ে ঠাকুরগাঁ জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা জানান, ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি নানান কারণে বন্ধ রয়েছে। তবে পুনরায় চালুর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, খুব দ্রুত সময়ে সরকারিভাবে বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। এটি চালু হলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যোগ হবে নতুন মাত্রা।