Image description

মো. বিলাল হোসেন। বিএনপি’র সক্রিয় কর্মী। ১৯৯৬ সালে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন। ওই সময়ে নাশকতা, ককটেল নিক্ষেপ ও গাড়ি পোড়ানোর ৩ রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে ১৯৯৭ সালে দেশ ছাড়েন। গ্রেপ্তার এড়াতে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। তখন থেকেই মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে বসবাস করছেন। দীর্ঘদিন পেনাং শহর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৮ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে বিলাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিবাদ সভা হয়। সভা শেষে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি টাঙিয়ে প্রতিবাদ করা হয়। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মালয়েশিয়া হাইকমিশন এতে চরম বিরক্তি প্রকাশ করে। পরে ২৬শে ফেব্রুয়ারি বিলাল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে চিঠি লেখেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত তৎকালীন হাইকমিশনার। 

চিঠিতে তিনি সরকার প্রধানের প্রতি অবমাননাকর ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার অভিযোগ তুলে প্রবাসী বিএনপি নেতা বিলাল হোসেনের বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাতিলের সুপারিশ করেন। পরে ১৯শে এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব একেএম মুখলেছুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অবিলম্বে বিলালের পাসপোর্ট বাতিল করতে নির্দেশ দেন। পরের মাসে পাসপোর্ট অধিদপ্তর বিলালের পাসপোর্ট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। তখন থেকে সীমাহীন বিড়ম্বনায় পড়েন বিলাল। পাসপোর্ট না থাকায় তিনি মালয়েশিয়ায় অবৈধ হয়ে পড়েন। মালয়েশিয়ায় ২০ বছর ধরে তিলেতিলে গড়ে তোলা ব্যবসা হারিয়ে পথে বসতে হয় বিলাল হোসেনকে। পাসপোর্ট না থাকায় পালিয়ে বেড়াতে হয়। এমনকি এই ঘটনার পর থেকে তিনি আর দেশেও ফিরতে পারেননি। পাসপোর্ট না থাকার কারণে প্রতিনিয়ত নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বিলাল। জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরে পাসপোর্ট ফেরত চেয়ে দূতাবাসে আবেদন করেন বিলাল হোসেন। তবে দূতাবাস তার ওই আবেদন গ্রহণ করেনি। উপায়ন্তর না পেয়ে পাসপোর্ট ফেরত চেয়ে গত আগস্টের শেষ সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে আবেদন করেন বিলাল। পরে ডিসেম্বরে সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে অনতিবিলম্বে বিলাল হোসেনের নামে একটি নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু পাসপোর্ট ফেরত চেয়ে বিলালের আবেদনের ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও বিলালের পাসপোর্ট নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়নি অধিদপ্তর। নতুন পাসপোর্ট দেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেনি। মন্ত্রণালয় ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ঠেলাঠেলিতে আটকে আছে বিলালের ভাগ্য। পরে চলতি মাসে মালয়েশিয়া হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হলেও তারা অসহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ করেছেন বিলাল। এতে বাংলাদেশের বৈধ নাগরিক হয়েও প্রবাসে নাম-পরিচয়হীনভাবে ঘুরছেন তিনি। 

এ ব্যাপারে মালয়েশিয়া প্রবাসী বিলাল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, স্বৈরাচার বিতাড়িত হওয়ার ১ বছর অতিবাহিত হতে চলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার পাসপোর্ট ফেরত পাচ্ছি না। আমি দূতাবাসে গেলে তারা আমাকে ফেরত পাঠান। জানতে পেরেছি, হাইকমিশনার নাকি আমাকে পাসপোর্ট প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আমি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।