Image description
 

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বাড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার। তরুণ রাজনৈতিক কর্মীদের হাত ধরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রযুক্তির ব্যবহার বহুগুণে বেড়েছে। বিশেষ করে বহুপ্রতীক্ষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোয় এআই দিয়ে তৈরি নানা ধরনের ভিডিও ও ছবির জোয়ার দেখা যাচ্ছে। এসব ভিডিও বা ছবির মাধ্যমে যেমন রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে, তেমনি একপক্ষ আরেকপক্ষের বিরুদ্ধে ‘প্রোপাগান্ডা’ ছড়ানোর কৌশল হিসেবেও এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও বা ছবি ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রবণতা একদিকে যেমন ডিজিটাল অপতথ্যের প্রবাহ বাড়াচ্ছে, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবমূর্তিকে করছে বিতর্কিত। তবে এই ডিজিটাল অপতথ্যের প্রবাহ মোকাবিলায় নিজস্ব কর্মীদের নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

গত বছর ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর থেকে দেশের অন্যতম প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে জড়িয়ে অনলাইনে চলছে নানা প্রচার-প্রচারণা। গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম শক্তি তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠনের পর দলটির নেতাকর্মীদের নিয়েও অনলাইনে নানা কার্যক্রম দেখা যায়, যার একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে নেতিবাচক প্রচারণা। আর এসব প্রচার-প্রচারণায় বা অপতথ্যের প্রচারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও ও ছবি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অন্যতম প্রধান প্ল্যাটফর্ম ফেসবুককেন্দ্রিক এসব অপপ্রচারের জন্য বিএনপিকর্মীরা জামায়াত-শিবির ও এনসিপি নেতাকর্মীদের দায়ী করছেন। অন্যদিকে, জামায়াত-শিবির ও এনসিপি নেতাকর্মীরা এসব অপপ্রচারের জন্য বিএনপি ও পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দায়ী করছেন। এসব নিয়ে ফেসবুকের কমেন্ট বক্সে তুমুল বিবাদেও জড়াচ্ছেন বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা।

অপতথ্য নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান ডিসমিস ল্যাবের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শুধু প্রতিপক্ষের বিরোধিতা বা অপপ্রচার নয়, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করেন দলের প্রতি জনসমর্থন বাড়াতেও এআই ভিডিওর আশ্রয় নিচ্ছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা।

 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি কালবেলাকে বলেন, ‘বিএনপি একটি গণমানুষের দল। সাধারণ মানুষকে নিয়ে আমরা সার্বক্ষণিকভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে আমাদের দলের কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছি। এ মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এআই দিয়ে অনেক ফলস ও ফেক নিউজ চলে আসছে। এ কারণে দেশ, দল ও রাজনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এআইয়ের মাধ্যমে যেসব ফলস নিউজ আসছে, সেগুলোর কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের অ্যাকটিভিস্টদের দ্বারা যেখানে প্রতিবাদ করা দরকার, সেখানে প্রতিবাদ করছি। তবে এআইয়ের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে সাধারণ মানুষের রাজনীতি করা যায় না।’

 
 

বিএনপির এই নেতা জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিএনপির যারা কাজ করছেন তারা এ সব ন্যারেটিভ মোকাবিলায় সক্রিয় আছেন। কেউ যদি এআই ব্যবহার করে বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো ন্যারেটিভ তৈরি করতে চায়, সেখানে বাস্তবতার আলোকে কাউন্টার ন্যারেটিভ তুলে ধরতে বিএনপিকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।

 

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের কালবেলাকে বলেন, সাইবার স্পেসে রাজনৈতিক প্রচারণা ও প্রোপাগান্ডা নিয়ে কীভাবে কাজ করা যায়, তা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা চলছে। রাজনৈতিক বা নির্বাচনী প্রচারে এআই ব্যবহার করা কোনো সমস্যা নয়, তবে কেউ যদি এর মাধ্যমে হিংসাত্মক ও ভুল তথ্য উপস্থাপন করে, তা দল ও রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য হুমকি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব কালবেলাকে বলেন, এআই দিয়ে তৈরি প্রোপাগান্ডা ও ভুয়া কনটেন্ট রাজনৈতিক সহনশীলতাকে ব্যাহত করবে। এনসিপিতে যেহেতু অধিকাংশ নেতৃত্বই তরুণ, তাই তারা এ ধরনের প্রোপাগান্ডা ডিবাঙ্ক (মিথ্যা প্রমাণ) করতে কাজ করে যাচ্ছে।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ফাহিম মাশরুর কালবেলাকে বলেন, প্রযুক্তির এ সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে এআই দিয়ে তৈরি প্রচারণা আটকে রাখা সম্ভব নয়। তবে এক্ষেত্রে ভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতি ইঙ্গিত করে নেতিবাচক ও হিংসাত্মক কনটেন্ট প্রচার থেকে বিরত থাকা উচিত। এগুলো আসলে নেতাকর্মীরা করে থাকেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নেতাকর্মীদের এ ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন করা। কারণ তরুণরা এসব বিষয়ে সচেতন হলেও যাদের প্রযুক্তি জ্ঞান কম, তাদের অনেকেই এআই দ্বারা প্রচারিত তথ্যের কারণে বিভ্রান্ত হতে পারেন।