
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসকে চিন্তায় রেখে নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করেছে পুলিশ। এরই মধ্যে তারা সারা দেশে ৪৭ হাজার ভোট কেন্দ্রকে ধারণায় রেখে প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা নিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন দেখতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ পুলিশও নিজেদের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে। অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠানে ইসিকে সহায়তা করতে পুলিশে শিগগিরই শুরু হবে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। এজন্য নতুন প্রশিক্ষণ কারিকুলাম ও ডকুমেন্টারির কাজ শুরু করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনি প্রস্তুতি রয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা কাজ আমরা হাতে নিয়েছি। আরও কিছু কাজ আছে, যেগুলো সময়ে সময়ে নেওয়া হয়ে থাকে। আবার কিছু কাজ আছে, যেমন ফোর্স মোতায়েনসহ প্যাট্রলিং-যেগুলো তফসিল ঘোষণার পর নেওয়া হয়। পুলিশ সদস্যরা এমনিতেই প্রশিক্ষিত, তবু সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে ধরনের প্রশিক্ষণ এবং পরিকল্পনা নেওয়া দরকার, তা আমরা নিচ্ছি।’
জানা গেছে, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে মাঠপর্যায়ের পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ থাকার বিষয়টিকে গুরুত্বে নিয়েছে সদর দপ্তর। এ ক্ষেত্রে পুলিশের জন্য কী ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশকে কী ধরনের ভূমিকা নিতে হবে, এসব বিষয়ও পরিকল্পনায় নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পুলিশকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, অতিরিক্ত আইজিপি আবু নাসের মোহাম্মদ খালেদের নেতৃত্বে সম্প্রতি একটি সভা হয়েছে। সেখানে নির্বাচন বিষয়ে পুলিশের অভিজ্ঞ কয়েকজন কর্মকর্তাও ছিলেন। বিতর্কমুক্ত নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে সহায়তা করতে দীর্ঘ আলোচনা করেন তারা। ভোটার ও ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে, এ বিষয়ে মাঠ পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করতে নানা কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনি বিষয়ে প্রথমে পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) প্রশিক্ষণ দেবে পুলিশ সদর দপ্তর। তারা আবার নিজ নিজ জেলা ও মহানগর পুলিশের মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনবেন। বিতর্কমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করতে প্রশিক্ষণ পরিকল্পনায় মক টেস্টের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এই মক টেস্টে ভোট কেন্দ্র, ভোটারদের নিরাপত্তা, ব্যালট বাক্স আনা-নেওয়াসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে ধাপে ধাপে পুলিশের কী ধরনের ভূমিকা নিতে হবে, তার প্রশিক্ষণ দেবে পুলিশ সদর দপ্তর। এসবের জন্য আরও কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করার ঘটনায় পুলিশকে সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়। এমন প্রশ্নবিদ্ধ কোনো কাজে পুলিশ যেন না জড়ায়, সে বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। সামনে যে নির্বাচনই হোক, পুলিশ সেই নির্বাচনে বিতর্কিত কোনো ভূমিকায় জড়াবে না। প্রশিক্ষণে এ বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে মাঠ পুলিশকে। বিগত তিনটি নির্বাচনে অধিকাংশ ভোটার ভোট দিতে আগ্রহী ছিলেন না। তারা ভোট কেন্দ্রে যাননি। যে কারণে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের নাম বদলে সিটিজেন পুলিশিং দিয়ে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে আগ্রহী করার কর্মসূচি নেওয়ার বিষয়টিও পরিকল্পনায় রেখেছে পুলিশ সদর দপ্তর।