Image description

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা পাঁচকিত্তা বাহেরচর গ্রাম। যা চাঁদাবাজি, জমি দখল, তাস, জুয়া ও মাদকদ্রব্যের স্বর্গরাজ্য। গ্রামটি নিয়ন্ত্রণে রেখে ১৮ হাজার মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে দু’টি গোষ্ঠী। তার মধ্যে ফজর আলীর ভূঁইয়া গোষ্ঠী একটি। এ সুযোগে অপরাধের পাহাড় গড়েছেন তিনি। রয়েছে ধর্ষণ, বাড়ি দখল, বালুমহাল দখল, মসজিদ-ঈদগাহ দখল, নারী দখল, চাঁদাসহ অসংখ্য অভিযোগ। যদিও ভয় ও আতঙ্কে মুখ খুলছে না কেউ। ভেসে বেড়াচ্ছে দু’গ্রুপের গোপন অজানা কাহিনীর কথা। কথা বললে পরে বাড়িছাড়া হতে হবে। এই ভয় পিছু ছাড়ছে না কারও। ওই গ্রামের এক রিকশাচালক বলেন, বাহেরচর গ্রামের সবাই সবকিছুই জানেন। কার বাড়ির ঝগড়া কে নিবে? কেউ নিরাপত্তা দিবে না। কথা বললেই কিছুদিন পর বাড়িছাড়া হতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বৃদ্ধ বলেন, আমরা শহর থেকে ভাটি অঞ্চলের মানুষ। কিছু বলতে গেলে অনেক কিছুই হারাতে হবে। ভয় পাই। দয়া করে আমার কথা লিখবেন না। আমি বলেছি, কাউকে বলবেন না। এদিকে, পাঁচকিত্তা বাহেরচর গ্রামের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে আওয়ামী লীগের ফজর আলী ভূঁইয়া গোষ্ঠী ও আবুল কালাম ব্যাপারী গোষ্ঠী। দুই গোষ্ঠীর কাছে ১৮ হাজার হিন্দু ও মুসলিম সমপ্রদায় জিম্মি হয়ে পড়েছিল গত ১৭ বছর। তাদের অত্যাচারে প্রতিটি বাড়ির মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। ত্রাস সৃষ্টি করে তারা গ্রামের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তিতাস নদীতে বছরের পর বছর বালু উত্তোলন করতো। 

জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ওই গ্রামের মানুষ জমি, বাড়ি দখল, বালুমহাল দখল, মসজিদ, ঈদগাহ দখল, নারী দখল, বিয়ে দিতে ও করাতে দিতে হতো চাঁদা, চাঁদা না দিতে চাইলে তাদের ওপর নেমে আসতো খগড়। গ্রামের আমির হোসেনের ২৩ শতাংশ বাড়ি দখল করে নিজের নামে লিখে নেয় আবুলের বড় ভাই লিটন। দুই গ্রুপ মিলে মৃত মঙ্গল মিয়ার চেয়ারম্যান একটি মাছের প্রজেক্ট ও একটি পুকুর ২০ লাখ টাকা মাছ লুট করে নিয়ে যায়। ফজর আলী হোমনা উপজেলার এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা ওই গ্রামে আাসলে ধর্ষণ করে। এ ছাড়া হিন্দু মহিলাসহ একই  গ্রামের এক মেয়েকে ধর্ষণ করে। তিনটা ধর্ষণের বিচার গ্রামবাসী করতে পারেনি। কোনো মামলাও হয় না। এ ছাড়া, ফজর আলী তার মামার বাড়ির সামনে একটি বাড়িতে চুরি করতে যেয়ে ধরা পড়ে। তার মামা ওই চুরির বিচার করে দিবে বলে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। 

সম্প্রতি ফজর আলী ও আবুল কালাম গ্রুপের নেতৃত্ব তিতাস নদীতে ডেজিং করে কোটি টাকা বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে। এই টাকা নিয়ে দু’গ্রুপের দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। এই সুযোগে ফজরকে শায়েস্তা করতে ছোট ভাই শাহ পরান হাত মেলায় আবুল কালাম গ্রুপের সঙ্গে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারীকে দিয়ে ফোন করে বড়ভাইকে ডেকে নেন শাহ পরান। ওই গ্রামের সন্তান ও ঢাকা সুপ্রিম কোর্ট ডিভিশনের ব্যারিস্টার আব্দুল বাতেন বলেন, বাহেরচর গ্রামের কবরস্থানের পাশে ঈদগাহ রয়েছে। ওই ঈদগাহকে কেন্দ্র ওই দু’গ্রুপে দ্বন্দ্ব হয়। এ নিয়ে দু’গ্রুপে বিচার বসতে চাইলে আবুল কালাম ও তার ভাই লিটন আমাকে কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায়। পরে তারাই আমার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। পুলিশ পাঠায়। এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৪ জনকে রিমান্ডে জিজ্ঞেসাবাদ করা হলে সকল তথ্য বেরিয়ে আসবে। ওই মহিলা বাদী হয়ে দু’টি মামলা দায়ের করেছে। বর্তমানে বাহেরচর পাঁচকিত্তা গ্রামে পুলিশ টহল দিচ্ছে।