Image description
অর্থবছরের শেষ দিনে ৩ লাখ ৬০৯২০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় :: রাজস্ব আদায় গতবারের চেয়ে বেশি হবে এটা নিশ্চিত :এনবিআর চেয়ারম্যান

অর্থবছরের শেষদিন গতকাল সোমবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। গতকাল সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। আবদুর রহমান খান বলেন, কাস্টমস হাউজগুলো গত রোববার বিকেল থেকেই কাজ শুরু করছে। তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন। এর ফলে সবার মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ও নীতি নির্ধারকদের মধ্যে। সকাল থেকেই আমাদের সব দফতরে কাজ শুরু হয়েছে। সম্পূর্ণ উপস্থিতি আছে। সব কাস্টমস হাউজ, আইসিডি, ভ্যাট ও কর অফিস সবাই কাজ করছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, গতবারের চেয়ে রাজস্ব আদায় বেশি হবে এটা নিশ্চিত। কিন্তু যে রকম আশা করছিলাম, একটু তো হোঁচট খেয়েছি এই কয়দিনের কাজকর্মে। তিনি বলেন, সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। সোমবার যেটা ট্রেজারিতে জমা হবে সেটার রিপোর্ট মঙ্গলবার (আজ) পাব। এর বাইরে সরকারি প্রকল্পের কর বা মূসকের বিল থাকে; যেটা আদায় হয়, সেটা সমন্বয় করতে কিছুটা সময় লাগবে। নরমালি জুন ক্লোজিং-এ একটু সময় লাগে। ২ থেকে ৩ সপ্তাহ লেগে যাবে ফাইনাল ফিগার আসতে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরো বলেন, এখন আমাদের রেভিনিউ রিপোর্টিংটা সিস্টেমেটিক। আমরা ম্যানুয়াল রিপোর্ট করি না। আইবাসে আমরা আদায়ের রিপোর্ট করি। তিনি বলেন, যেহেতু ৩০ জুন (অর্থবছরের শেষ দিন)। এদিন আমাদের একটা বড় ড্রাইভ থাকে। রেভেনিউগুলো যেগুলো পাইপলাইনে আছে সেগুলো ট্রেজারিতে নিয়ে আসার একটা ক্রমাগত চেষ্টা থাকে। সেই চেষ্টাটা চলছে।

তিনি বলেন, এখন আমাদের রেভেনিউ রিপোর্টিংটা সিস্টেমেটিক, আমরা ম্যানুয়াল রিপোর্ট করিনা। আইবাসে আমরা আদায়ের রিপোর্ট করি। এখানে কোথাও কোনো রিকনসেলিশনের প্রয়োজন নাই। এনবিআর একটা ফিগার, বাংলাদেশ ব্যাংক একটা ফিগার বলবে সেটা আর নাই। সবার সেইম ফিগার।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, যা কিছু হয়েছে সব কিছু ভুলে গিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে আমরা সবাই কাজ করবো। যে কাজ গুলো আছে সেগুলো এগিয়ে নিয় যাব। আশা করি আমাদের আর এ ধরণের বড় ধরণের সমস্যার মধ্যে যেতে হবেনা। তিনি বলেন, অতীতে রেভিনিউ অফিসাররা যেভাবে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন, একইভাবে তারা কাজ করবেন।

এর আগে গতকাল মার্চ টু এনবিআর, কমপ্লিট শাটডাউনসহ টানা দেড় মাস ধরে চলা আন্দোলন ও কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে ফিরেছেন আন্দোলনরত এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল সকাল ৯টার দিকে এনবিআরের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ দপ্তরে যান। নিজেদের কাজে মনোনিবেশ করেন। চলছে নিয়মমাফিক কাজ।

এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবু পুরোপুরি কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসেনি। চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ঢাকা কাস্টম হাউস, ভোমরা, বুড়িমারী, সোনা মসজিদ, আখাউড়াসহ দেশের সব স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনে আমদানি–রপ্তানিসংক্রান্ত শুল্কায়নের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানেও শুল্ক-কর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, টানা দুইদিনের অচলাবস্থার পর চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম পুরোদমে চালু হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারি যানবাহনের তীব্র জট তৈরি। গতি আসে কার্গো ও কনটেইনার ডেলিভারি পরিবহনে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রোববার সন্ধ্যার পর কাজে ফিরেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শুরু হয় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। গতকাল সকাল থেকে পুরোদমে কার্যক্রম সচল হয়। বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, বন্দর থেকে পণ্য ও কনটেইনার ডেলিভারি বেড়েছে। তবে লাগাতার কর্মবিরতির ফলে যে জট পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা স্বাভাবিক হতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে।

বেনাপোল অফিস জানায়, বেনাপোল বন্দরে আমদানি রফতানি বাণিজ্য ও পণ্য খালাস কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে ৪ হাজার বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক কাজে যোগদান করায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে গোটা বন্দর এলাকায়। কাস্টমস ও বন্দর কর্মকর্তাদের পণ্য শুল্কায়ন ও খালাসে কর্মব্যস্ত দেখা গেছে। আমদানি-রফতানি চালুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল বন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন। কাস্টমস হাউসের সহকারী কমিশনার রাজন হোসেন জানান, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়ায় সকাল বেনাপোল কাস্টমস হাউসে শুল্কায়ন ও পণ্য ডেলিভারী শুরু হয়েছে। রাজস্ব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রাজস্ব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অতিরিক্ত সময় কাজ করা জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বেনাপোল বন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন জানান, গতকাল সকাল থেকে পুনরায় এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যানজট ও পণ্যজট নিরসনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দ্রুত কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।