
মালয়েশিয়ার প্লানটেশন সেক্টরে শর্তসাপেক্ষে কর্মী পাঠাতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগানুমতি দেয়া হলেও গত সাত মাসে একজন শ্রমিকও সেখানে যেতে পারেননি। শুধু তাই নয়, দেশটিতে যাওয়ার আগে চূড়ান্তভাবে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র (স্মার্টকার্ড) নেয়ার কথা থাকলেও অদ্যাবধি নিয়োগ অনুমতি পাওয়া রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মালিকদের পক্ষ থেকে একটি আবেদনও জমা পড়েনি।
অভিযোগ রয়েছে, রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা এসব নিয়োগানুমতি নেয়ার পর কর্মী বাছাইয়ের নামে প্রত্যেকের কাছ থেকে পাসপোর্ট এবং যাওয়া নিশ্চিত করার নামে অগ্রিম টাকা আদায় করেছে। তবে প্লানটেশন সেক্টরে কর্মী পাঠানোর নামে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো মোট কতজন কর্মীর কাছ থেকে কী পরিমাণ পাসপোর্ট ও অগ্রিম টাকা নিয়েছে তা সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করার পরও জানা সম্ভব হয়নি।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর (কর্মসংস্থান শাখা-৪) প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব গাজী মো: শাহেদ আনোয়ার স্বাক্ষরিত নিয়োগানুমতি দেয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে, রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স সানওয়ে ওভারসিস লিমিটেডের (আরএল-২৩২৩) আবেদনের প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ার দু’টি কোম্পানিতে প্লানটেশন কর্মী পদে ৮০ জনের শর্তসাপেক্ষে নিয়োগানুমতি দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরগামী প্রত্যেক কর্মীর মাসিক বেতন হবে ১৫০০ রিংগিট। অভিবাসনব্যয় হবে ৫৬ হাজার ২৪০ টাকা। সুযোগ সুবিধার কথায় বলা হয়েছে, বাসস্থান, চিকিৎসা ফ্রি, বয়স হতে হবে ১৮-৪৫ বছর। চুক্তির মেয়াদ হবে দু’ বছর। বিমানভাড়া উভয়পথ ফ্রি। চাকরির অন্যান্য শর্তাবলি মালয়েশিয়ার শ্রম আইনানুযায়ী প্রযোজ্য হবে। একইভাবে ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব গাজী মো: শাহেদ আনোয়ার স্বাক্ষরিত রিক্রুটিং এজেন্সি মের্সার্স রোজল্যান্ড ইন্টারন্যাশনালের (আরএল-২৬৭৬) আবেদনের প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ার কোপারেশি সারবাউসা মাকমুর বারহাদ কোম্পানিতে প্লানটেশন ওয়ার্কার্স পদে ৫০ জনের নিয়োগামুতি শর্তসাপেক্ষে দেয়া হয়।
শুধু এই দু’টি রিক্রুটিং এজেন্সি নয়, ২০২৪ সালের নভেম্বর মাস থেকে একই বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ১৯টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে পৃথক পৃথকভাবে শত শত কর্মীর নামে প্লানটেশন ওয়ার্কার পদের জন্য নিয়োগানুমতি দেয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সে নিয়োগানুমতি দেয়ার পর কেটে গেছে প্রায় ৭ মাস। কিন্তু এই সময়ে অন্যান্য প্রসেসিং সম্পন্ন করে একজন শ্রমিকও দেশটিতে পাড়ি জমাতে পারেনি।
এ বিষয়ে জানতে গতকাল রোববার রাতে রিক্রুটিং এজেন্সি রোজল্যান্ড ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং পার্টনার আতাউর রহমানের সাথে তার দুটি মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলেও তিনি টেলিফোন রিসিভ করেননি।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগানুমতি দেয়ার শর্তের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, রিক্রুটিং এজেন্সিকে বিএমইটির চলমান ডাটাবেজ থেকে কর্মী বাছাই করতে হবে, এক্ষেত্রে বিএমইটি কর্তৃক জারিকৃত প্রসেস ফলো চাট অনুসরণ করতে হবে। কর্মীর ফ্লাইট নিশ্চিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি কর্তৃক ফ্লাইট শিডিউল ও কর্মীর তালিকা বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়া এবং বিএমইটিতে দাখিল করতে হবে। এ ছাড়া আরো বেশকিছু শর্তজুড়ে দেয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার রাতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (কর্মসংস্থান) মোহাম্মদ আব্দুল হাইয়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে এ প্রসঙ্গে শুধু বলেন, মালয়েশিয়ার প্লানটেশন সেক্টরে কর্মী যাওয়ার আগে বিএমইটি থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র নেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে বিএমইটিতে এখনো কোনো আবেদনই আসেনি।
উল্লেখ্য সিন্ডিকেট-সিন্ডিকেট খেলায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ হয়ে আছে। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে তিন সদস্যর একটি প্রতিনিধিদল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে আলোচনা করতে সে দেশে যান। তাদের সফরে ইতিবাচক কিছু হতে যাচ্ছে এমন আশা করছিলেন জনশক্তি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মালয়েশিয়া সরকার শ্রমবাজার খোলার আগে অপ্রত্যাশিত কিছু শর্ত জুড়ে দেয়। সূত্র মোতাবেক, তারা যেসব শর্ত দিয়েছে সেগুলো মেনে শ্রমবাজার খোলা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন আভাস বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে জানানো হয়। এরপরই মাঝপথে থমকে যায় শ্রমবাজার খোলার কার্যক্রম। এরপরও থেমে নেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার নেপথ্যে নিয়ন্ত্রক হিসাবে পরিচিত ২৫ সদস্যর শক্তিশালী ওই সিন্ডিকেট গ্রুপ। যদিও এবার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন শত শত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক। তারা কোনোভাবেই হাসিনার আমলের করা শ্রমবাজারের ২৫-৫০ জনের সিন্ডিকেট আর হতে দেবেন না। এর জন্য তাদের যা যা করা দরকার তারা তাই করবেন বলে ইতোমধ্যে সভা-সমাবেশে বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন এখনো।