
দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন মেজর সিনহা হত্যা মামলার আসামি টেকনাফের বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের ভাই সুদীপ কুমার দাশ। সবশেষ তিনি ফেনী সদর থানার গোয়েন্দা বিভাগের ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথমে ফেনী পুলিশ লাইনে ক্লোজ ও পরে রেঞ্জ উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। চলতি মাসের শুরুতে ছুটি নিয়ে প্রথমে মালয়েশিয়া ও পরে আমেরিকায় পাড়ি জমান তিনি। ৫ আগস্টের পরপরই পরিবারের অন্য সদস্যদের আমেরিকায় পাঠিয়ে দেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ আমলের প্রায় পুরোটা সময় চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় ঘুরে ঘুরে ওসির দায়িত্ব পালন করেছেন প্রদীপ ও সুদীপ। পুলিশ মহলে প্রচার ছিল সরাসরি ভারতীয় দূতাবাসের সুপারিশে চাকরি পায় দুই ভাই আর এ কারণে পদবিতে ওসি হলেও সিএমপি কমিশনারকেও পাত্তা দিতেন না তারা। তাদের কাছে অসহায় ছিল খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও।
২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন এবং ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপির আন্দোলন দমাতে সবচেয়ে অতি উৎসাহী ভূমিকা পালন করে প্রদীপ ও সুদীপের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সদস্য। হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন চলাকালে মসজিদের ভেতরে ঢুকে নামাজরত মুসল্লিদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করার অভিযোগ রয়েছে প্রদীপ ও সুদীপের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের পর চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
সুদীপের থেকেও বেপরোয়া ছিলেন প্রদীপ। আর এই কারণেই পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের কথিত মাদকবিরোধী আভিযানের নামে ‘কিলিং মিশন’ বাস্তবায়ন করতে চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফে বদলি করা হয় প্রদীপকে। তবে সুদীপ তখনো দাপিয়ে বেড়ান চট্টগ্রামে। এক বছরেরও কম সময়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে মাদক কারবারি ট্যাগ দিয়ে টেকনাফ ও কক্সবাজারের অন্তত দেড়শ মানুষকে হত্যা করে প্রদীপ। সবশেষ ২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে গুলি করে হত্যা করা হয় প্রদীপের নেতৃত্বে।
মেজর সিনহা হত্যার বিচারের ব্যাপারে সেনাবাহিনী কঠোর থাকায় প্রদীপকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয় সরকার। প্রদীপ গ্রেপ্তার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতে পালিয়ে যান তার স্ত্রী। কিন্তু কয়েক মাস পর ভারতীয় দূতাবাসের আশ্বাসে ফিরে এসে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় আত্মসমর্পণ করেন তিনি। আওয়ামী লীগ আমলে মামলার বিচারকাজ ঢিমেতালে চললেও অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গতি পেয়েছে মেজর সিনহা হত্যা মামলার বিচারকাজ।
প্রদীপ গ্রেপ্তার হওয়ার পর অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায় সুদীপও। চাকরি করলেও মিডিয়ার সামনে খুব একটা আসেননি তিনি। এরই মধ্যে সরকার পতন হলে নিজেই তদবির করে চট্টগ্রাম থেকে বদলি হন ফেনীতে। সবশেষ ফেনী সদরের গোয়েন্দা বিভাগের ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামের একটি ম্যানপাওয়ার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চার লাখ ডলার, অর্থাৎ ৫ কোটি টাকার বেশি খরচ করে গোপনে আমেরিকার ইমিগ্র্যান্ট ভিসা বাগিয়ে নেন তিনি। সেপ্টেম্বরে ডিবি থেকে ক্লোজ রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত করার পর থেকেই তল্পিতল্পা গোটাতে থাকেন সুদীপ। ফেব্রুয়ারিতে পরিবারের অন্য সদস্যদের পাঠিয়ে দেওয়ার পর চলতি মাসের শুরুতে নিজেও মালয়েশিয়া হয়ে পাড়ি জমান আমেরিকায়।
ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) হাবিবুর রহমান জানান, বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। এরপর থেকে তার খবর জানা নেই।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবিব পলাশ জানান, সুদীপের দেশ ছেড়ে যাওয়ার কোনো খবর তার জানা নেই।