
জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে দেশি-বিদেশি তৎপরতা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন বৈঠকের পর থেকে এ তৎপরতা বেড়েছে। এই বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করেছে বৃহস্পতিবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের সাক্ষাৎ। এছাড়া বিগত নির্বাচনের অভিযোগ তদন্ত ও আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে প্রধান করে ৫ সদস্যের সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি করেছে সরকার।
রমজানের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা নিয়ে ঘোষণা আসে ১৩ জুন লন্ডনের বৈঠক থেকে। এরপর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ তাদের ঢাকার মিশনের মাধ্যমে পরিস্থিতির খোঁজখবর নিচ্ছে। বিদেশি কূটনীতিকেরা আগামী নির্বাচনের সময়, ভোট এবং ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের ধরন ও নীতি জানতে- বুঝতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন।
সাম্প্রতিক প্রকাশিত বিভিন্ন খবরাখবরে বুঝা যাচ্ছে নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ এবং চাপ দুটোই কাজ করছে। গতকাল বুধবার (২৫ জুন) অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে কি না, বিদেশ থেকে জানতে চাওয়া হয়। বিদেশিরা যেমন তৎপর তেমনি রাজনীতিবিদরাও।
চলতি মাসে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। ১৭ জুন জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো ডায়াস ফেরেস’র বৈঠক হয়েছে। ২২ জুন সকাল ১০টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে টানা তিন দিন বৈঠক করেছেন জাপান, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিরা। রোববার (২২ জুন) সকালে বৈঠক করেন ঢাকা নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি। পরদিন সোমবার বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিং। এর পরদিন মঙ্গলবার সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার।
এসব সাক্ষাতে সার্বিকভাবে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচনের পাশাপাশি এসব দেশ ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কোন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে পারে সেসব বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানাচ্ছেন, দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে তাতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। এদিকে জামায়াত আমিরের সঙ্গে বৈঠকের পর বিভিন্ন পলিসি এবং বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে কানাডার। অন্যান্য কূটনীতিকদের আলোচনায়ও নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন বিষয় স্থান পেয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে শুধু বিদেশিদের নয়, নির্বাচন কমিশনকেও তৎপর হতে দেখা যাচ্ছে। সবশেষ বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে ‘ওয়ান টু ওয়ান (একান্ত)’ বৈঠক হয়েছে। এর ফলে সেখানে কী আলোচনা হয়েছে, সে সম্পর্কে কিছু তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে ধারণা করা যায়।
লন্ডনে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সব প্রস্তুতি শেষ করা গেলে ২০২৬ সালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও (ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে) নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে বলে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে। এদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার বিশেষ করে সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে কয়েকটি দল। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন সিইসি।
এর মধ্যে চীন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে বেইজিং ও কুনমিংয়ে কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতাদের বৈঠকের আয়োজন করেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যসহ একটি প্রতিনিধিদল চীন সফরে রয়েছে। সাংবিধানিক বিভিন্ন সংস্কার বিষয়েও ঐকমত্যের কাছাকাছি এসেছে রাজনৈতিক দলগুলো। সবমিলিয়ে ফেব্রুয়ারির দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কার্যক্রম যে এগিয়ে যাচ্ছে তা বলাই যায়। সুষ্ঠু নির্বাচনি পরিবেশে ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে দেশবাসীও।
(শীর্ষনিউজ