Image description

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নিয়েছিল পুরো দেশ। সকাল থেকেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কাটছিল বেলা। ওইদিন দুপুরের দিকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরই উল্লাসে ফেটে পড়ে জনতা। যুদ্ধযাত্রা বদলে যায় বিজয় মিছিলে। সেই মিছিলের একজন ছিলেন শরীয়তপুরের নড়িয়ার বিঝারি ইউনিয়নের দক্ষিণ মগর গ্রামের মোহাম্মদ আল আমীন মীর মালত (২৯)। সবাই বিজয় মিছিলে আনন্দ করলেও তার ওপর নেমে আসে বিষাদের ছায়া। পুলিশের গুলিতে নিভে যায় যৌবনদীপ্ত তাজা প্রাণ।

পারিবারিক সূত্র জানায়, আল আমীনের বাবা ইসমাইল মীর মালত স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে সৌদি আরবে থাকতেন। জুলাই বিপ্লবের বছরখানেক আগে দেশে ফেরেন। কিন্তু আল আমীন তখন প্রবাসে ছিলেন। ছাত্র আন্দোলনের চার মাস আগে ফিরে আসেন তিনিও। থাকতেন বাবার সঙ্গে সাভারের বাইপাইল এলাকায়। সেখানে তিনি একটি মুদি দোকান চালাতেন।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে অংশ নেন আল আমীন। মিছিলটি বাইপাইল গেলে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। একের পর এক লাশ পড়তে থাকে। লোকজন ভ্যানে লাশ নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছোটাছুটি করতে থাকে। ভিড়ের মাঝে হারিয়ে যান আল আমীন। সন্ধ্যায় বাসায় না ফেরায় আশপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়। এরপর চলে যায় ১৩ দিন।

আল আমীনের ছোট বোন আফলান সিনথিয়া বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে প্রচার চালানো হয়। কিন্তু কোথাও ভাইয়ের সন্ধান না পেয়ে আমরা আশা ছেড়ে দিই। সাভারে যেসব লাশ পোড়ানো হয়েছে, তার মধ্যে আল আমীনও ছিলেন ধারণা করছিলাম। হঠাৎ ১৬ আগস্ট টিভিতে দেখতে পাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অজ্ঞা পরিচয়ের চারটি লাশ রয়েছে। প্রথমে আমরা যেতে চাইনি। কারণ, আমরা ইতোমধ্যে সেখানে গিয়ে অনেক খুঁজেছি। তবে মন মানেনি; তারপরও চলে যাই হাসপাতাল মর্গে। সেখানে চারটি লাশের মধ্যে একটির সঙ্গে আমাদের সব তথ্য মিলে যায়। চিৎকার করে কান্না শুরু করি, শোকে ভারী হয়ে ওঠে আশপাশ। এরপর আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশটি নিয়ে যাই। পরদিন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মা জিয়াসমিন বেগম বলেন, ‘আল আমীনের সঙ্গে ৪ আগস্ট রাতে সর্বশেষ কথা হয়। আমার খোঁজ-খবর নিল। আমাকে বলল, আম্মু তোমার শরীরটা কেমন? আমার পায়ের ব্যথা ছিল। আমার ছেলে আমার পা মালিশ করে দিত। আমাকে চিকিৎসা করাবে, ডাক্তার দেখাবে, আমার পা ভালো হয়ে যাবেÑএসব বলে সান্ত্বনা দিত। কিন্তু তার এসবই ফিকে হয়ে গেছে পুলিশের গুলিতে। আল আমীন খুব ভালো ছেলে ছিল, স্বভাব ও আচরণের জন্য সবাই তাকে ভালোবাসত।

তিনি আরো বলেন, আল আমীনসহ জুলাই যোদ্ধাদের যারা হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে। তাদের শাস্তি দেখতে না পারলে মরেও শান্তি পাব না। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেসব মায়ের বুক খালি হয়েছে, তাদের পাশে সরকারকে দাঁড়াতে হবে।