Image description

নদীভাঙনে বসতভিটা হারিয়েছেন। কষ্টেসৃষ্টে হয়তো জীবন গুছিয়ে নিয়েছেন অন্যত্র। দীর্ঘ বছর পর হয়তো যেদিকে ভাঙন হয়েছিল, সেদিকে চর জাগে।

জমির অবস্থান এবং কাগজপত্র থাকলেও সেই জমির ওপর তাদের আর মালিকানা থাকছে না। ভাঙনে নিঃস্ব মানুষের জমি একসময় ফিরলেও আইনের মারপ্যাঁচে হয়ে যাচ্ছে সরকারের খাসজমি। এমন ঘটনা শুধু একজনের নয়। দেশের বিভিন্ন নদনদীর পাড়ে ভাঙনের শিকার লাখ লাখ মানুষ একই বাস্তবতার মুখোমুখি। জমি ভেঙে গেলে তা ফেরত পাওয়ার আইন থাকলেও চরের জমি ‘সরকারি’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে পূর্বতন মালিকদের বাদ দিয়েই। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্যদিকে আইনি জটিলতা এবং প্রশাসনিক উদাসীনতা—সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবনে বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে জমির মালিকানা। স্বাধীন বাংলাদেশে দুইবার এ আইন আংশিক পরিবর্তন হলেও ৩০ বছরের সময়সীমা তুলে দেওয়া হয়নি। এসব আইনে জমির মূল মালিক বরাদ্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেলেও জমি যদি ৩০ বছরের বেশি নদীর মধ্যে থাকে তবে সেক্ষেত্রে জমির মালিকের আর কোনো অধিকারই থাকবে না।

চর জাগলেও জমির মালিকানা হারানো: শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কালুবেপারীরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. মান্নান ভূঁইয়া। একসময় অঢেল জমির মালিক ছিলেন। কিন্তু ১৯৯২ সালে পদ্মার করালগ্রাসে বসতবাড়িসহ প্রায় ৪০ বিঘা জমি বিলীন হয়ে যায়। এরপর পরিবারসহ একপ্রকার উদ্বাস্তু জীবনযাপন করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই জমি জাগলেও তা ফিরে পেতে পোহাতে হচ্ছে নানা যন্ত্রণা। সরকারের উদাসীনতার পাশাপাশি স্থানীয় মোড়লরাও নানাভাবে জমি দখল করার পাঁয়তারা করছেন।

মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরবর্তী গ্রাম কালাই সরদারের চর। ১৯৮৮ সালের দিকে ওই গ্রামের বিরাট একটি অংশ বিলীন হয়ে যায় নদীতে। ফলে গৃহস্থ পরিবারগুলো দূরদূরান্তে গিয়ে জীবনযাপন করে। এরপর ২০১১-২০১২ সালের দিকে সেই জমি জাগতে শুরু করে। কিন্তু এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও গৃহস্থরা সেই জমি বুঝে পাননি। স্থানীয় অন্তত বিশজন কৃষক কালবেলাকে বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষদের জমি। কিন্তু নিজেরা এখনো বুঝে পাচ্ছি না। যার কারণে এসব জমি বিক্রি কিংবা ঘর তুলতে পারছি না।

ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীতীরবর্তী বাসিন্দা আ. রহিম বলেন, পরিবার নিয়ে এ নদীর পাড়ে দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছি। নদীভাঙনে বসতবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। চাষাবাদ করার মতোও জমি নেই আমার। জমিতে চর জাগলেও সেই জমি বুঝে পাচ্ছি না। কবে বুঝে পাব, তা-ও জানি না।

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার তিমিরকাঠি গ্রামের অর্ধশত পরিবার সুগন্ধার ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে গেছে। কিন্তু নদীর বিপরীত পাড়ে বরিশালের অংশে বিশাল চর জেগে ওঠায় ভাঙনকবলিত পরিবারগুলো নতুন করে স্বপ্ন বুনতে থাকে। তবে তাদের সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করছে স্থানীয় একটি ভূমিদস্যু চক্র।

‘নদী ভাঙলে জমি খাস’ সরকারের এ আইন প্রত্যাহার এবং জমির মালিকানা ও তাদের স্বত্বাধিকার ফেরতের দাবি জানিয়ে তিমিরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা লিটন মাঝি জানায়, ‘নদী ভাঙবে আমার জমি, আমার থাকবে, জমি কেন খাস হবে।’ তিনি বলেন, আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। এখানে স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, বাজার, ফসলি জমি ও বসতভিটা ছিল। সেগুলো সব আমার চোখের সামনে বিলীন হতে দেখেছি।

লিটন মাঝি বলেন, ভূমি আইন ২০২০-এ শিকস্তি জমিতে প্রজাস্বত্ব বলবৎ থাকার সময়সীমা ৩০ বছর তুলে দিয়ে চর যখনই জেগে উঠবে, তখনই চলতি কর পরিশোধ সাপেক্ষে প্রজাস্বত্ব বহাল হবে মর্মে আইন করতে হবে।

‘নদী ভাঙলে জমি খাস’ আইন বাতিল সংগ্রাম কমিটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও কৃষকনেতা জাহিদ হোসেন খান বলেন, আইনি মারপ্যাঁচে নদীতীরের মানুষ ভাঙনে হারানো তাদের পৈতৃক জমির প্রজাস্বত্ব হারাচ্ছে। তা ছাড়া জেগে ওঠা চরে আগের মালিক বা উত্তরাধিকারকে ভূমি অফিস জমির খারিজ দেয় না। এমনকি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জরিপে নিজ নামে জমিজমা রেকর্ড করা সত্ত্বেও ভূমি অফিস ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষের খাজনা নিচ্ছে না। যার কারণে তারা জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারছেন না। এর ফলে এসব অঞ্চলের মানুষ জমি থাকলেও উচ্চশিক্ষা ও জরুরি চিকিৎসাসেবা নিতে পারছেন না।

তিনি বলেন, ভূমি আইন ২০২০-এ শিকস্তি জমিতে প্রজাস্বত্ব বলবৎ থাকার সময়সীমা ৩০ বছর তুলে দিতে হবে। অর্থাৎ যখনই চর জেগে উঠবে, তখনই চলতি কর পরিশোধ সাপেক্ষে প্রজাস্বত্ব বহালের আইন করতে হবে। তা ছাড়া নদীভাঙন রোধে ও জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি।

ভাঙনে নিঃস্ব হওয়া থামছে না :

শরীয়তপুর জেলার জাজিরা এলাকার কৃষিজীবী এ কে এম নজরুল ইসলাম। পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোই কাটছিল। হঠাৎ পদ্মার ভাঙনে ৪০ বিঘা ফসলি জমিসহ বসতভিটাসহ সর্বস্ব কেড়ে নেয়। মাত্র দুই বছরেই তিনি হয়ে যান নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে অসহায় নিঃস্ব। নজরুল ইসলাম বলেন, একসময় আমার সবকিছু ছিল; কিন্তু মাত্র দুই বছরেই পদ্মা আমার ৪০ বিঘা ফসলি জমিসহ বসতবাড়ি সবকিছু কেড়ে নিয়ে গেছে। আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। এখন আমি নিঃস্ব।

যমুনার ভাঙনেও একই চিত্র। গত ৭ জুন ঈদের দিন মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার ভারাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবন নদীতে বিলীন হয়ে যায়। দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিয়ান নুরেন বলেন, যমুনার ভাঙনের কবলে পড়ে স্কুলভবন ধসে পড়ার সম্ভাবনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় প্রকৌশলীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জানতে পারি তিনতলা ভবনটি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে।

ঝালকাঠি জেলার নলছিটির দিয়াকূল গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আকলিমা বেগম। প্রায় আড়াই বিঘা ফসলি জমি ও বাড়িটিই ছিল আকলিমার একমাত্র সম্বল। তবু পরিবারের লোকজন নিয়ে ছিলেন বেশ সুখে-শান্তিতে। কিন্তু গত দুই বছরে সুগন্ধা নদীর করালগ্রাসে কেড়ে নিয়েছে সব। গৃহস্থ এ পরিবারটি মুহূর্তেই হয়ে যায় নিঃস্ব।

জমি দখলে ভূমিদস্যুর দৌরাত্ম্য :

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সিন্নির চর এলাকায় এমন একটি বিরোধে উত্তেজনা বাড়ছে। কালাবদর নদীর পাড়ে জেগে ওঠা জমির মালিকানা দাবি করছেন বৈধ রেকর্ডধারীরা। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় সোলায়মান দর্জি ও আব্দুর রহমান চৌকিদার এসব জমি জোরপূর্বক দখল করে ঘর তুলছেন ও তা বিক্রি করছেন। যদিও এসব জমির মালিক নদীভাঙা ভূমিহীনরা।

নতুন করে জেগে ওঠা এসব জমির বৈধ রেকর্ডধারীদের একজন মো. মাহেবুল ইসলাম বলেন, ‘রেকর্ড অনুযায়ী জমি আমার। কিন্তু প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

অন্যদিকে, অভিযুক্ত সোলায়মান দর্জি বলেন, ‘আমার জমির পাশে খাসজমি থাকলে সেটা আমি ভোগ করতেই পারি। নিয়ম তো এটিই।’

সুগন্ধা নদীর ভাঙনে নিঃস্ব হওয়া তিমিরকাঠি গ্রামের অর্ধশত পরিবারের ভাঙনকবলিত জমির নদীর বিপরীত পাড়ে বরিশালের অংশে বিশাল চর জেগে ওঠে। তবে নদীভাঙনের শিকার পরিবারের জেগে ওঠা এ জমি একটি ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় তহশিলদার, ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, সাবরেজিস্ট্রার ও স্থানীয় দালালের মাধ্যমে ভুয়া দলিল করে প্রায় ১০ একর জমি কোম্পানিটি দখলে নিয়েছে বলে অভিযোগে করেন ভুক্তভোগীরা। যাদের জমি, তারা ভোগদখল করতে পারছেন না। ভুক্তভোগী তিমিরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা নাসির হাওলাদার বলেন, জমি আমার পৈতৃক সম্পত্তি। আমি কেন বন্দোবস্ত নেব। আমি কি ভূমিহীন, যে আমি বন্দোবস্ত নেব। তা আবার নিজেরই জমি। আমার জমি নদীভাঙনে নেমে গিয়েছিল আবার জেগে উঠেছে। এখন যার যার জমি তাদের দলিল দেখে জমির খাজনা নেওয়া ও রেকর্ডের ব্যবস্থা চালু করা হোক।

ভূমি অফিসে হয়রানি, খাজনা নেয় না :

জানা যায়, ১৮২৫ সালের ‘বেঙ্গল অ্যালুভিয়ন অ্যান্ড ডিলুভিয়ন রেগুলেশন’ এবং পরবর্তী সময়ে ১৯৫০ সালের ‘স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেনান্সি অ্যাক্ট’ অনুযায়ী নদীভাঙনে হারানো জমি যদি ৩০ বছরের মধ্যে পুনর্গঠিত হয়, তবে মূল মালিক বা তার উত্তরাধিকারী তা ফেরত পেতে পারেন। অন্যদিকে, নতুন সৃষ্ট চর জমি সরকারের মালিকানায় যায় এবং মূল মালিকের অধিকার লুপ্ত হয়। অর্থাৎ শিকস্তি জমির জন্য খাজনা হ্রাসের বিধান এবং অনুরূপ জমিতে প্রজার অধিকারমূলক বিধানাবলি ১৯৫০ সালের আইনের ৮৬ ধারায় সন্নিবেশ করা হয়। এ বিধানগুলো ৮৬(ক) ধারায় সন্নিবেশিত বিধানের অনুরূপ। ১৯৭২ সালের ৪ আগস্ট রাষ্ট্রপতির ১৩৫ নম্বর আদেশ জারি করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল জমি শিকস্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জোত বা জমির খাজনা হ্রাস এবং খাজনা হ্রাসের ব্যবস্থা করা। এর পাশাপাশি শিকস্তি জমিতে প্রজার মালিকানার অধিকার লুপ্ত হবে এবং ওই জমি ফের গঠিত হলে তা সরকারে বর্তাবে।

ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, জমি জেগে ওঠার পর রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও ভূমি অফিস খাজনা নেয় না, খারিজ করে না। ফলে জমি বিক্রি, হস্তান্তর বা বৈধ স্বত্বপ্রাপ্ত হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ১৯৯৪ সালের ১৩ জুলাই ‘রাষ্ট্রপতির আদেশ’ রহিত করে ‘রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব (সংশোধন) আইন, ১৯৯৪’ পাস হয়। এ আইন অনুযায়ী, নদীতে বিলীন হওয়া জমি ৩০ বছরের মধ্যে জেগে উঠলে তার মালিকানা আগের মালিককে ফেরত দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। তবে যেসব মালিকের ৬০ বিঘা বা তার বেশি জমি রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ জমির পরিমাণ ৬০ বিঘার বেশি থাকলে তা খাস হিসেবে থাকবে।

বাংলাদেশ খেতমজুর সমিতির সভাপতি ডা. ফজলুর রহমান বলেন, আইনি মারপ্যাঁচে চরের মানুষ তার পৈতৃক জমির প্রজাস্বত্ব হারাচ্ছে। ভূমি অফিস জেগে ওঠা চরে আগের মালিক বা তার উত্তরাধিকারকে জমির খারিজ দেয় না। বিগত সময়ে বিভিন্ন জরিপে নিজ নামে জমি রেকর্ড করা সত্ত্বেও ভূমি অফিস খাজনা না নেওয়ায় এসব অঞ্চলের মানুষ জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারছেন না। ফলে এসব নদীভাঙনকবলিত মানুষ নানা ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদরা অবৈধভাবে এসব জমি দখল করে নেওয়ার আশঙ্কা তো রয়েছেই।

প্রশাসনের বক্তব্য :

নলছিটির সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুসরাত জাহান বলেন, ‘জমি যদি ৩০ বছরের মধ্যে জেগে ওঠে, তা খাস হিসেবে বিবেচিত হয়। ভুক্তভোগীদের বন্দোবস্ত দেওয়ার বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে প্রাধান্য পায়।’

ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অধিগ্রহণ ও খাসজমি অনুবিভাগ) ড. মো. মাহমুদ হাসান এ ব্যাপারে বলেন, আইন জনগণের জন্য। আর তাই জনস্বার্থে যা প্রযোজ্য আমরা সেটা করতে প্রস্তুত। সাধারণ মানুষ শান্তিতে থাকার জন্য যদি আইন সংশোধনের প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটা করার উদ্যোগ নেব।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাঙনকবলিত মানুষের জন্য জমি বিষয়ে চলমান আইন বহাল রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কোনো আপত্তি না থাকায় এ ব্যাপারে এখনো আমরা তেমন কিছু ভাবছি না।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী বলেন, নদীর শিকস্তি ও পয়স্তি আইনটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর একবার পরিবর্তন করা হয়েছে। এরপর এ আইনটি আরও জনকল্যাণমূলক করতে কর্তৃপক্ষের নানা চিন্তাভাবনা রয়েছে বলে আমি জানি। তা ছাড়া এ বিষয়ের উপরে আদালতে অনেক মামলা মোকদ্দমাও রয়েছে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আরেকজন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন বলেন, ভূমি আইনের শিকস্তি ও পয়স্তি আইনটিই জনকল্যাণকর হয়নি। নদীভাঙা নিঃস্ব অসহায় মানুষদের রক্ষা করতে হলে এ আইনটি নতুন করে করতে হবে। বর্তমান আইনে ভাঙনকবলিত মানুষদের জেগে ওঠা জমির বন্দোবস্ত নিতে অগ্রাধিকার দিলেও ভাঙনের কবলে সব হারানো ওইসব মানুষ তো নিঃস্ব। তাদের ঠিকভাবে থাকা-খাওয়ারই তো জায়গা নেই। যার ফলে সে বন্দোবস্তের টাকা জোগাড় করতে না পারার সুযোগে প্রভাবশালীরা নিয়ে নেয়। তিনি বলেন, নদীর ভাঙনে সৃষ্ট ভূমিহীনদের রক্ষা করতে হলে অবশ্যই আইনের পরিবর্তন করে সময়োপযোগী করতে হবে। শুধু নতুন আইন করেই এসব নিঃস্ব ভূমিহীনের জন্য কিছু করা সম্ভব। এদের রক্ষা করতে সরকারকে ভাঙনকবলিত মানুষদের জমির একটি পরিসংখ্যান সংগ্রহ করতে হবে আর জেগে ওঠা জমিতে সেই রেসিও অনুযায়ী সরকার তাদের বণ্টন করে দেবে। বেশি থাকলে সরকার সেটিকে খাস করবে আর কম থাকলে জমির মালিকদের পরিসংখ্যান মেতাবেক রেসিও অনুযায়ী যে যতটুকু পায়, সেটুকু বণ্টন করে দিতে হবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেগে ওঠা এসব জমি সরকার খাস না করলে এর দখল নিয়ে খুনাখুনির সম্ভাবনা দেখা দেবে।