
দুপক্ষের এমন দ্বিমুখী অনড় অবস্থানে দেশ নিশ্চিতভাবে রাজনৈতিক উত্তেজনার দিকে এগোচ্ছিল।এমন বাস্তবতায় ইউনূস-তারেক বৈঠকের আউটকামের দিকে তাকিয়ে ছিল দেশবাসী। বৈঠকটি ভেস্তে যাওয়ার জন্য ভেতরে ভেতরে কূটচালও কম হয়নি। আপাতত ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি।১৩ জুন ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। বৈঠকের প্রধান এজেন্ডা তথা ত্রয়োদশ নির্বাচনের টাইমফ্রেম নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে যৌক্তিক সমঝোতা হয়েছে। এর ফলে রাজনীতিতে স্বস্তির সুবাতাস বইছে। অনেকটা ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার মতো অবস্থা।
এই কমপ্রোমাইজই তো রাজনীতি ও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। যেটি লন্ডনের ডরচেষ্টার হোটেলে প্রদর্শিত হলো। রাজনীতির ময়দানে দীর্ঘ পরীক্ষা দিয়ে তারেক রহমান যে ম্যাচিউডরড ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হয়ে উঠেছেন সেটি জাতি আবারও একবার প্রত্যক্ষ করল।
এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অধ্যাপক ড. ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ফাংশনাল প্রধানের বৈঠকটির ফলাফল রাজনীতিতে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবি, তথা ২০২৬ সালে রমজানের আগে ভোট অনুষ্ঠানে অসম্মতি দেননি সরকার প্রধান। তিনি বলেছেন, সংস্কার ও সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে নির্বাচন রমজানের এক সপ্তাহ আগে করায় সমস্যা নেই। তিনি এপ্রিলে ভোট হবে বলে—আগের ঘোষণার জায়গায় গো ধরেননি। একজন প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ, উদার ব্যক্তিত্বের পরিচয় ফুটে উঠে তার লন্ডন বৈঠকের সিদ্ধান্তে। তারেক রহমানও ‘ডিসেম্বরেই নির্বাচন’ হতে হবে, আগের এমন ঘোষণার জায়গায় অটল থাকেননি। এই কমপ্রোমাইজই তো রাজনীতি ও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। যেটি লন্ডনের ডরচেষ্টার হোটেলে প্রদর্শিত হলো। রাজনীতির ময়দানে দীর্ঘ পরীক্ষা দিয়ে তারেক রহমান যে ম্যাচিউডরড ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হয়ে উঠেছেন সেটি জাতি আবারও একবার প্রত্যক্ষ করল।
ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের সংলাপ উইন উইন সিচুয়েশন তৈরি করেছে। এই আলোচনায় কেউ হারেননি। ইউনূস আগামী দিনগুলোতে রাষ্ট্র পরিচালনায় বিএনপির সমর্থন পাবে; যে কারণে মৌলিক সংস্কার ও জুলাই সনদ ঘোষণা সহজ হতে পারে। আর তারেক রহমান বিএনপি তাদের দাবি অনুযায়ী নির্বাচনের টাইমফ্রেম পেয়ে গেল। এতে অবশ্য তারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নৈতিক বৈধতা হারাল। এই বৈঠকের আগে বিএনপির নির্বাচনের রোডম্যাপ ছাড়াও দুটি প্রধান দাবি ছিল। একটি হচ্ছে-কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণে ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে বসাতে সরকার সহায়ক ভূমিকা রাখবে। অন্যটি হচ্ছে-তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ। বিশেষ করে মে মাসে নগর ভবনকে কেন্দ্র করে বিএনপির আন্দোলনে এই তিনটি দাবি উঠে এসেছিল। পরের দুটি দাবি লন্ডন বৈঠকে উঠেছিল কিনা সেটি স্পষ্ট হয়নি। দুই নেতার বৈঠক এতোটাই হৃদ্যতাপূর্ণ হয়েছিল যে, তারেক রহমান হয়তো এসব অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বহীন বিষয় নিয়ে সরকার প্রধানকে বিব্রত করতে চাননি। এখন বৃহৎ স্বার্থে বিএনপি হয়তো এ দুটি দাবিকে গুরুত্ব কম দেবে। তারা হয়তো জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিকেই গুরুত্ব দেবে।
ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের এই রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌছানোর পেছনে নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা একটি বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে হয়। দেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ীকে আগের সরকার হেন কোনো অপমান নেই যে করেননি। ফ্যাসিবাদী সরকারের তৎকালীন প্রধান শেখ হাসিনা তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত করেছেন। অহেতুক অযৌক্তিকভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধের জন্য তাকে দায়ী করেছেন। ড. ইউনূসকে পদ্মার পানিতে চুবানোর কথাও বলেছেন। শুধু তাই নয়; ৮৫ বছর বয়সি একজন আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলা দিয়ে দিনের পর দিন আদালতে ঘুরিয়েছেন।
ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের এই রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌছানোর পেছনে নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা একটি বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে হয়। দেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ীকে আগের সরকার হেন কোনো অপমান নেই যে করেননি। ফ্যাসিবাদী সরকারের তৎকালীন প্রধান শেখ হাসিনা তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত করেছেন। অহেতুক অযৌক্তিকভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধের জন্য তাকে দায়ী করেছেন। ড. ইউনূসকে পদ্মার পানিতে চুবানোর কথাও বলেছেন। শুধু তাই নয়; ৮৫ বছর বয়সি একজন আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলা দিয়ে দিনের পর দিন আদালতে ঘুরিয়েছেন। ইচ্ছা করেই লিফট বন্ধ করে আদালতের ৮ম তলায় সিঁড়ি বেড়ে যেতে বাধ্য করেছেন।এমনকি আদালতের ঘাড়ে বন্দুক তুলে তাকে শেষ বয়সে জেলে পাঠানোর চক্রান্ত করেছিলেন। অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও কম নিপীড়নের শিকার হননি। আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ান ইলেভেনের সরকার তাকে কারাগারে রেখে এমন শারীরিক নির্যাতন করেছে যে, তার প্রাণহানি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাকে দেশান্তরী হতে বাধ্য করেছে। পরবর্তীতের আওয়ামী লীগের তিন দফা শাসনামলে তারেক রহমানকে শয়ে শয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। ২০ টি বছর তার জীবন থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দেশে আসলে মেরে ফেলা হতে পারে এমন শঙ্কায় প্রিয় মাতৃভূমিতে আসতে পারেননি তারেক রহমান। নির্বাসিত থেকে কঠিন লড়াই চালিয়ে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। শত উসকানি সত্ত্বেও দীর্ঘ সময়ে দলকে সহিংস রাজনীতির দিকে ধাবিত করেননি। তারেক রহমানের শেষ ১০ বছরের রাজনীতি দেখলে সহজেই বোঝা যায় যে, তিনি পোড় খেয়ে খেয়ে রাজনীতিতে কতটা বিচক্ষণতা ও প্রাজ্ঞতা অর্জন করেছেন। জনগণের ওপর আস্থা রেখে রাজনীতির দীর্ঘ টেস্ট ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ধীরে ধীরে প্রাপ্তির দিকে নিয়ে গেছেন। দেশের সম্পদের ক্ষতি হয়, মানুষের ক্ষতি হয় এমন কোনো সহিংস আন্দোলন দেননি। নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে দলকে উজ্জীবিত রেখেছেন আবার অন্যায়ের কড়া জবাব দিয়েছেন। বাবা শহীদ জিয়াউর রহমানের ঘোষণায় স্বাধীন হওয়া দেশকে এতোটাই ভালোবেসেছেন তিনি। তাই লন্ডন বৈঠকে দুপক্ষের সমঝোতার পেছনে দুই নেতার দেশপ্রেমও বড় ভূমিকা রেখেছে।
অহিসংস ও বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের পথিকৃত দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘আমি আদর্শিক গণতন্ত্র এবং মুক্ত সমাজের প্রশংসা করি, যেখানে সকল ব্যক্তি শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করবে এবং সমান সুযোগ লাভ করবে। এটি হচ্ছে একটি আদর্শিক অবস্থান, যার মধ্যে দিয়ে বাঁচা দরকার এবং আমি তা অর্জনের আশা করি, কিন্তু এটি এমন এক আদর্শ, যদি প্রয়োজন পড়ে, তার জন্য আমি জীবন দিতেও প্রস্তুত।’ নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী অধ্যাপক ইউনূস ও বাংলাদেশের স্মরণকালের রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার তারেক রহমান সম্ভবত বৈঠকে বসার আগে নেলসন ম্যান্ডেলার এই উক্তি মাথায় রেখেছিলেন।
বাংলাদেশের স্থিতির জন্য বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের এই সমঝোতা অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। সরকার বিএনপির অতীত অবদানকে অস্বীকার করতে পারবে না। জিয়াউর রহমান ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণে জীবন দিয়েছেন। আর খালেদা জিয়া কখনোই জাতীয় স্বার্থে আপস করেননি। এই আপসহীন অবস্থানই তাকে গত আঠারো বছর ধরে রাজনীতি থেকে দূরে রেখেছে; সরকার সেটি উপলব্ধি করেছে।
বাংলাদেশের স্থিতির জন্য বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের এই সমঝোতা অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। সরকার বিএনপির অতীত অবদানকে অস্বীকার করতে পারবে না। জিয়াউর রহমান ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণে জীবন দিয়েছেন। আর খালেদা জিয়া কখনোই জাতীয় স্বার্থে আপস করেননি। এই আপসহীন অবস্থানই তাকে গত আঠারো বছর ধরে রাজনীতি থেকে দূরে রেখেছে; সরকার সেটি উপলব্ধি করেছে। অন্যদিকে জুলাইর গণঅভ্যুত্থানের পর জনআকাঙক্ষা ও ঐকমত্যের এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনও যে শতভাগ ভালো ফল বয়ে আনতে নাও পারে—সেটিও উপলব্ধি করে বিএনপি।দলটির প্রাজ্ঞ ও শীর্ষ নেতৃত্ব খালেদা জিয়া বিষয়টি উপলব্ধি করেন। উনিই মূলত ড. ইউনূস ও তারেক রহমানকে এক টেবিলে আনার মাস্টারমাইন্ড কিংবা সেতুবন্ধ। তার এক সিদ্ধান্তেই বদলে যায় দৃশ্যপট।
৭৯ বছর বয়সি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আজ সঠিকভাবেই ‘রাজনৈতিক সেতু’ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যিনি বিএনপির নেতৃত্ব এবং বর্তমান সরকারের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে পেরেছেন। যেটি একদিকে যেমন তার দলের জন্য তেমনি দেশের জন্য বৃহত্তর কল্যাণ বয়ে এনেছে। শুধু তাই নয়; জাতির সঙ্কটময় মুহূর্তে তার এই ভূমিকা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁক হতে যাচ্ছে। অতীতের মতো তিনি আবারও প্রমাণ করতে চলেছেন, তিনি একজন প্রকৃত ‘রাজনৈতিক সেতু’। বৃদ্ধ বয়সে বছরের পর বছর মিথ্যা মামলায় আদালতের বারান্দায় দৌঁড়ঝাপ করে, মাসের পর মাস জেল খেটেও তিনি দেশপ্রেম থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি। দেশের জন্য বৃহৎ ঐকমত্যের পক্ষে তিনি দৃঢ় অবস্থান নিয়ে আছেন। এসব গুণ তাকে উপমহাদেশের রাজনীতিতে অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত করেছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সমঝোতা কিংবা জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শেখ মুজিব তার দলের বামপন্থি অংশের প্রভাবে দেশকে ‘মুক্তিযুদ্ধপন্থি’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধবিরোধী’, এ দুই ভাগে বিভক্ত করেছিলেন এবং এর ফলে দেশ এক দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যায়, যা শেষ হয় শেখ মুজিবের পতন এবং জিয়াউর রহমানের উত্থানের মধ্য দিয়ে।
জিয়াউর রহমান জাতীয় সংহতি ও ঐকমত্যের গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাকশাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন। ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তিনি একটি দূরদর্শী পদক্ষেপ নেন, যা জাতীয় ঐক্য ও রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়।
খালেদা জিয়ার আপসহীন মনোভাব, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কূটনৈতিক কৌশল তাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেত্রীতে পরিণত করে। বৃদ্ধ বয়সেও তিনি যে দীর্ঘ রাজনৈতিক নিগ্রহের শিকার হয়েছেন পৃথিবীর ইতিহাসে সেটি দ্বিতীয়টি ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই। এতো ঘাত-প্রতিঘাতের পরও তিনি কখনোই জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে আপস করেননি
খালেদা জিয়ার আপসহীন মনোভাব, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কূটনৈতিক কৌশল তাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেত্রীতে পরিণত করে। বৃদ্ধ বয়সেও তিনি যে দীর্ঘ রাজনৈতিক নিগ্রহের শিকার হয়েছেন পৃথিবীর ইতিহাসে সেটি দ্বিতীয়টি ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই। এতো ঘাত-প্রতিঘাতের পরও তিনি কখনোই জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে আপস করেননি। ২০০৬ সালের পর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান একটি নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার দ্বার খুলে দিয়েছে, যা গত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে শেখ হাসিনার সময়ে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত ছিল। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটি নতুন সমঝোতার জন্য যথেষ্ট অনুকূল।
অনেকেই বিশ্বাস করেন, খালেদা জিয়া সঠিকভাবে পরিস্থিতি উপলব্ধি করেছেন এবং বিএনপি ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন। ৭ জুন ঈদুল ফিতরের দিন যখন দলের শীর্ষ নেতারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তখন তিনি তাদের রাজনৈতিক পরিপক্বতা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে পরামর্শ দেন।টেবিলে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর পরামর্শ দেন।
পরবর্তীতে ড. ইউনূস-তারেক বৈঠকের মধ্য দিয়ে এই বাস্তবতা দেশবাসীসহ গোটা বিশ্ববাসী বুঝে গেল যে, বাংলাদেশের বর্তমান ও নিকট ভবিষ্যতের রাজনীতির ইতিহাস তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে লেখা সম্ভব হবে না। যিনি গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও জুলাইর গণঅভ্যুত্থানের ভিত্তিভূমি রচনা করেছেন ১৭ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। যেই সংগ্রামের পরিণতি পায় চব্বিশের জুলাই-আগস্টে। তারেক রহমানের ধমনীতে দেশপ্রেমিক পিতা-মাতার রক্ত। তাকে আগামী দিনের রাজনীতিতে আরও বেশি পরিপক্কতা, দৃঢ়তা ও বিচক্ষণতা দেখাতে হবে। ত্রয়োদশ নির্বাচনের পর বিএনপি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকারে আসতে পারলে খালেদা জিয়া ও অধ্যাপক ইউনূসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সুযোগ তারেক রহমান মিস করবেন বলে মনে হয় না। লন্ডন বৈঠকে এই ইঙ্গিতই মিলেছে। ড. ইউনূসের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতেও দেশের কল্যাণে কাজে লাগানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিএনপি ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বিক্ষক বিশিষ্ট পার্লামেন্ট বাস্তবায়ন করে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের নিয়ে একটি ইনক্লুসিভ সরকার গঠন করে পূর্বসূরীদের মতো জাতীয় ঐকমত্য গঠন করতে পারেন তারেক রহমান।
লেখক: সাংবাদিক ও লেখক।