Image description

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত লন্ডন বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো কার্যকরের জন্য এখন সরকারের পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছে বিএনপি। দলটির মতে, গত ১৩ জুন লন্ডনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার বাস্তবায়নের জন্য সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এ মুহূর্তে সন্দেহ বা অনিশ্চয়তা তৈরি করতে চায় না; বরং সরকারের ওপর আস্থা রেখেই অপেক্ষা করবে। তাদের আশা, খুব শিগগিরই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে বৈঠকে আলোচিত বিষয়গুলোর ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত গত সোমবার রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির নিয়মিত বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ভার্চুয়ালি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে উপস্থিত ছিলেন- মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে লন্ডনের এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ‘ঐতিহাসিক ও ফলপ্রসূ’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। নেতাদের মতে, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই বৈঠক এক নতুন মেরুকরণের আভাস দিয়েছে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এটি একটি কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে।

স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার প্রশংসা করেন। তারা মনে করেন, এই বৈঠকে তিনি (তারেক রহমান) তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন, যা জাতীয় নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা ও জনগণের আকাক্সক্ষাকে সফলভাবে উপস্থাপন করেছে। দলের ভাষ্য মতে, বহুল প্রতীক্ষিত এই বৈঠক বিএনপির কূটনৈতিক উদ্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এতে স্পষ্ট হয়েছে, দলের নেতৃত্ব জনগণের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে অবিচল রয়েছে।

বিএনপির ভাষ্য অনুযায়ী, দলটি এখন একটি অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে অবিচল রয়েছে এবং জনগণের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।

এ বিষয়ে গতকাল গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে লন্ডন বৈঠকে অংশ নেয়া দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, নিশ্চয় কোনো একটা সময়ে আগামী দিনে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একটা দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। এটার জন্য তো আমাদের ধৈর্য থাকতে হবে। একদম অস্থিরতার মধ্যে সার্বক্ষণিক থাকলে তো চলবে না। জাতিকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে, একটু সহনশীল হতে হবে। আমার মনে হয়, আমাদের মধ্যে একটা আস্থার ব্যাপার আছে। আমরা যদি একেবারে আস্থাহীন হয়ে পড়ি, তাহলে আমরা যে কালচারের কথা বলছি, সহনশীলতার কথা বলছি, একদম অস্থিরতার মধ্যে থাকলে তো জাতির জন্য সমস্যা, তাই না? কোনো জাতির জন্য এই অস্থিরতা কাম্য নয়।

এ দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মেয়র পদে শপথ নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাকের সাম্প্রতিক তৎপরতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে ইশরাকের পক্ষে-বিপক্ষে মত এসেছে।

দেশে ফিরে যে বাড়িতে উঠবেন তারেক রহমান : দেশে ফিরে গুলশান-২ এর এভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে উঠবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেড় বিঘা জমির ওপর এই ডুপ্লেক্স বাড়িটি বেগম খালেদা জিয়ারই। কয়েকদিন আগে অন্তর্বর্তী সরকার এই বাড়িটির নামজারির কাগজ তার হাতে তুলে দেন। বাড়িটি আগে ভাড়ায় ব্যবহার করতো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ। জানা গেছে, ছয় মাস আগে বাড়িটি এই কোম্পানি ছেড়ে দিয়েছে। এরপর এটি তারেক রহমানের থাকার উপযোগী করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়েছে। বাড়িটি এখন পুরোপুরি প্রস্তুত বলেই তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

১৯৮১ সালের ৩১ মে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজধানীর গুলশান এলাকায় দেড় বিঘা জমির ওপর অবস্থিত এই বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়। বাড়িটি খালেদা জিয়া গুলশানে ‘ফিরোজা’ নামের যে বাড়িতে থাকেন, সেটির কাছেই। এর বাইরে ঢাকা সেনানিবাসের ভেতরও আরেকটি বাড়ি খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। তবে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সেনানিবাসের বাড়িটির বরাদ্দ বাতিল করে সেখান থেকে বেগম জিয়াকে একরকম টেনেহিঁচড়ে বের করে দেয়।

সরেজমিন ১৬৯ নম্বর বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, সাদা রঙের দোতলা ছায়াঘেরা বাড়িটির বহিরাঙ্গন বেশ পরিপাটি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বাড়ির ভিতরটাও অত্যন্ত নান্দিকভাবে সাজানো হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে এই সাজানোর কাজটি চলে, যা এখন পুরোপুরি শেষ। তারেক রহমানের স্ত্রী ডা: জুবাইদা রহমানও লন্ডনে যাওয়ার আগে বাড়িটি পরিদর্শন করে গেছেন।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, নির্বাচনের তারিখ সুনির্দিষ্ট হলে দেশে ফিরবেন ১৭ বছর ধরে নির্বাসনে থাকা বিএনপির আগামী দিনের এই কাণ্ডারি।

ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। পরের বছর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডন যান তিনি। তখন থেকেই লন্ডনে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। লন্ডনে থাকাকালে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন ‘সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান’ তারেক রহমান। এরপর সেখান থেকেই দল পরিচালনা করছেন তিনি।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে পাঁচ মামলায় তাকে সাজা দেয়া হয়। দায়ের করা হয় প্রায় শতাধিক মামলা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতের মাধ্যমে একে একে সাজাপ্রাপ্ত সব মামলায় খালাস পান তিনি। একই প্রক্রিয়ায় অন্য সব মামলা থেকেও মুক্ত হন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই।

এমন অবস্থায় বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রতীক্ষায় রয়েছেন। তার ফেরা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে যথেষ্ট কৌতূহলও আছে। সবার প্রত্যাশা, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরছেন। গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে যে, তিনি আগামী ৫ আগস্টের আগেই দেশে ফিরতে পারেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো অসুবিধা নেই বলে গত কয়েকদিন আগে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘শিগগিরই’ দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তবে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের আগেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। নির্বাচনের তারিখ সুনির্দিষ্ট হলে তার এই দেশে ফেরার বিষয়টি ত্বরান্বিত হবে।