
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা এক ভয়াবহ মোড়ে পৌঁছেছে। মধ্যপ্রাচ্য যেন ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ছে একটি সম্ভাব্য পরমাণু সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে। ইরানি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রেজা সাঈদ সোমবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক বিবৃতিতে বলেন, "ইসরায়েলের এমন কোনো শহর নেই যেখানে নিরাপদে থাকা সম্ভব।"
সোমবারের ভোরে ইরানের দিক থেকে ছোড়া একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের তেলআবিব, হাইফা ও দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে। বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠে ওইসব এলাকা। ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিছু হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হলেও অন্তত ১৪ জন নিহত ও ৫৯২ জন আহত হয়েছেন।
হামলার ভয়াবহতা কুনে হামলাকেও ছাড়িয়ে গেছে
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ও টাইমস ইউকে জানিয়েছে, এটি ছিল ইসরায়েলের ওপর পরিচালিত সবচেয়ে সুসংগঠিত ও ধ্বংসাত্মক হামলা। ইরান একে 'শুধুমাত্র শুরু' বলে ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছে, আরও বড় ধরণের আক্রমণ সামনে আসছে।
পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা ও আশঙ্কা
ইরানের ইউরেনিয়াম মজুদের পরিমাণ বর্তমানে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা থেকে মাত্র তিন সপ্তাহে ১৭ কেজি পরিমাণ অস্ত্র-গ্রেড ইউরেনিয়াম তৈরি করা সম্ভব। যা কমপক্ষে সাতটি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট—এমনটাই দাবি করেছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইরান এখন অন্তত নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করার ক্ষমতা রাখে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ গোয়েন্দা মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ইরান এখনও সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করেনি। তবুও তাদের ইউরেনিয়াম মজুদ যে মাত্রায় পৌঁছেছে, তা 'অভূতপূর্ব' বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আয়াতুল্লাহ খামেনির হুঁশিয়ারি
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, যদি দেশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে, তবে তাদের পরমাণু নীতিতে পরিবর্তন আনা হবে। বর্তমানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে অনেক বিশ্লেষকই বলছেন—এই হুমকি এখন বাস্তব।
বিশ্বজুড়ে চরম উদ্বেগ
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতি বিশ্ব রাজনীতিতে এক ধরনের নিঃশ্বাস আটকে থাকার অবস্থা তৈরি করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে জাতিসংঘ মহাসচিব পর্যন্ত সবাই এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ব্লুমবার্গ নিউজ-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইরান যদি রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তারা অল্প সময়েই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হবে।
সংক্ষিপ্তভাবে বললে, গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার মতোই ইসরায়েলকে একই ভাগ্যে ঠেলে দেওয়ার পরিকল্পনায় এগোচ্ছে ইরান—এমনটাই দাবি করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। ফলে যুদ্ধের পাশাপাশি পরমাণু বিভীষিকার শঙ্কাও এখন বাস্তব হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।