নদীতে কী পরিমাণ প্লাস্টিক যাচ্ছে তার অন্যতম পরিমাপক হলো প্রতি কেজি পানিতে কী পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিকের (এমপি) কণা রয়েছে। চীনের ইয়ং চিঙ নদীর প্রতি ঘনমিটার পানিতে ৮০২টি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। আর ইউরোপের দেশ পর্তুগালের অন্তুয়া নদীতে এর মাত্রা ৫৮ থেকে ১৯৭টি। অথচ বাংলাদেশের টঙ্গী খালের প্রতি ঘনমিটার পানিতে ৬০ হাজারের বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে।রাজধানীর নদী ও জলাশয়গুলোয় কী পরিমাণ প্লাস্টিক কণা রয়েছে তার একটি ধারণা পাওয়া যায় বিশ্বখ্যাত গবেষণা জার্নাল এলসেভিয়ারের এক প্রবন্ধে। ‘বাংলাদেশের ঢাকা শহরের হ্রদ এবং আশপাশের নদীতে মাইক্রোপ্লাস্টিকদূষণের ঝুঁকি মূল্যায়ন’ শীর্ষক ওই গবেষণা প্রবন্ধে উঠে এসেছে ভয়ংকর সব তথ্য। ওই গবেষণায় ১৯টি স্থান থেকে পানি ও পলির তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে তুরাগ নদ, বুড়িগঙ্গা নদী, শীতলক্ষ্যা নদী, বালু নদ, ডেমরা খাল, টঙ্গী খাল ছাড়াও হাতিরঝিল, ধানমণ্ডি ও গুলশান লেক।
গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক কণা রয়েছে টঙ্গী খালের পানিতে। এরপর বালু নদ, বুড়িগঙ্গা নদী ও ধানমণ্ডি লেকের পানিতে। শহরের জলাশয়গুলোয় প্রতি ঘনমিটার পানিতে গড়ে ৩৬ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে, যা বিশ্বের অনেক নদীর চেয়ে বহুগুণ বেশি। বিশ্বে যেসব দেশের নদীতে প্লাস্টিকদূষণ সবচেয়ে বেশি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভারত, সার্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ।তবে বাংলাদেশের শহর এলাকার নদীগুলোর তুলনায় গ্রামীণ এলাকার নদীর পানিতে কিছুটা কম প্লাস্টিকের দূষণ রয়েছে। দিনাজপুরের গ্রামাঞ্চল ঘেঁষে যাওয়া আত্রাই ও করতোয়া নদীতে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার পরিমাণ যেখানে ১০০ থেকে ১৫০টি, সেখানে এই দুই নদী যখন কোনো শহর ঘেঁষে বয়ে গেছে তখন মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০। আর রাজধানীর নদী ও লেকে গড়ে পাওয়া গেছে ৩৬ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা। এই হিসাবে গ্রামীণ এলাকার নদীর তুলনায় শহর এলাকার নদীতে শতগুণ বেশি প্লাস্টিক ও পলিথিনের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স (ইপিআই) সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭তম।
বৈশ্বিক প্লাস্টিকদূষণের প্রায় আড়াই শতাংশ হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১০ মিলিয়ন টন পলিথিন প্লাস্টিকের ব্যবহার হচ্ছে। যদিও এসব প্লাস্টিকের মাত্র ৩৭ শতাংশ রিসাইক্লিং করা সম্ভব হচ্ছে। নদীর পানিতে যেসব মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে সেগুলোতে নানা ধরনের এবং নানা মানের পলিথিন ও প্লাস্টিক কণা রয়েছে। এর মধ্যে পলিপ্রপিলিন (পিপি), পলিস্টাইরিন (পিএস), নাইলন (এনওয়াই), নিম্ন ঘনত্বের পলিথিন (এলডিপিই), ইথিলিন-ভিনাইল অ্যাসিটেট (ইভিএ), অ্যাক্রিলোনিট্রাইল বিউটাডাইন স্টাইরিন (এবিএস) এবং পলিথিলিন টেরেফথালেটের কণার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), আইইউসিএন ও বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০০৫ সালে দেশের শহরাঞ্চলে বার্ষিক মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ছিল মাত্র তিন কেজি, যেটি ২০২০ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ৯ কেজিতে উন্নীত হয়েছে। বতর্মানে শুধু রাজধানীতেই একজন মানুষ বছরে ২৪ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করছে। রাজধানীতে গড়ে প্রতিদিন পলিথিনের ব্যবহার হচ্ছে দেড় কোটি পিস।