ওজোন স্তর নিয়ে একসময় পত্রপত্রিকায় বিস্তর লেখালেখি হতো। টিভিতে খবর আসত : ওজোন স্তর ফুটো হয়ে যাচ্ছে এবং পৃথিবীতে প্রাণ হুমকির সম্মুখীন! সেই দুশ্চিন্তা যেন হঠাৎই বন্ধ হয়ে গেল। কারণ কী এর পেছনে? এ নিয়ে লিখেছেন অনিন্দ্য নাহার হাবীব
পৃথিবীর ঢাল
পৃথিবীর ওজোন স্তর হলো একটি ঢাল, যা সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি বিকিরণ থেকে সব প্রাণীকে রক্ষা করে। ১৯৭০-এর দশকে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছিলেন যে, ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের মতো মানবসৃষ্ট রাসায়নিক পদার্থগুলো অ্যান্টার্কটিকার ওজোন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ক্লোরোফ্লুরোকার্বন রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার এবং এরোসল ক্যানসহ বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহৃত হয়। ক্লোরোফ্লুরোকার্বন যখন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে পৌঁছায়, তখন তারা ওজোন অণুকে ভেঙে ফেলে, যা পৃথিবীতে প্রাণের জন্য হুমকিস্বরূপ। পৃথিবীর ওজোন স্তর রক্ষার উপায় খুঁজে বের করার জন্য আন্তর্জাতিক মহল কীভাবে একত্রিত হয়েছিল এবং তাদের প্রচেষ্টা এখনো পর্যন্ত সফল।
ওজোন স্তর বায়ুম-লের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ এটি সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মিকে ফিল্টার করে। যদি ওজোন স্তরটি অদৃশ্য হয়ে যায়, তবে তিনটি রূপের অতিবেগুনি বিকিরণ-টঠ-অ, টঠ-ই এবং টঠ-ঈ-পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করবে। এটি জীবন্ত প্রাণীর ওপর একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে, কারণ অতিরিক্ত অতিবেগুনি বিকিরণ প্রাণী এবং মানুষের মধ্যে ডিএনএ এবং কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। ফলে ত্বকের ক্যানসার, চোখের ছানি এবং দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতার মতো স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো ঘটতে পারে।
এমনকি বর্তমান ওজোন স্তরের উপস্থিতিতেই, আমরা অন্ধত্বের ঝুঁকি না নিয়ে ৬০ সেকেন্ডের বেশি সূর্যের দিকে সরাসরি তাকাতে পারি না। অন্যদিকে ওজোনের ১০০ শতাংশ হ্রাস হলে অন্ধত্ব শুরু হতে পারে সঙ্গে সঙ্গেই। উপরন্তু সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির সঙ্গে এক দিনেরও কম এক্সপোজারের পরে মানুষের ত্বক পুড়ে যেতে পারে। ওজোন স্তর অপসারণ করা হলে, পরিণতি বিপর্যয়কর হবে। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে, জীবিত বেশিরভাগ প্রাণী এবং গাছপালা মারা যেতে শুরু করবে। পৃথিবীর গাছপালা এবং উদ্ভিদ বিনষ্ট হয়ে গেলে বায়ুমন্ডলের অক্সিজেনের ঘনত্বকে আমূলভাবে হ্রাস পাবে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি হবে। আমাদের বায়ুমন্ডলের আমূলই উল্টে যাবে। রাসায়নিকভাবে বললে, অক্সিজেন ঘন বায়ুমন্ডল থেকে তা হয়ে যাবে কার্বন ডাই-অক্সাইডে পরিপূর্ণ। পৃথিবীর সব প্রাণের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।
তবে এটাও মনে রাখা জরুরি যে, ওজোন স্তর ছাড়া প্রাণের বিকাশ ঘটতে সক্ষম হতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, জীবগুলো প্রাকৃতিক নির্বাচন তথা ন্যাচারাল সিলেকশন এবং মিউটেশনের মাধ্যমে অক্সিজেন-ঘনত্বের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে, অতিবেগুনি বিকিরণের বিরুদ্ধে সেলুলার প্রতিরোধের মতো বৈশিষ্ট্যগুলো বিকাশ করতে পারে। প্রাণ টিকে থাকতে যদিওবা পারে, পৃথিবীর পরিবেশ এবং বাস্তুসংস্থান স্থায়ীভাবে পরিবর্তিত হবে। পৃথিবীকে সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করতে লাখ লাখ বছর সময় লাগবে এবং পৃথিবীতে প্রাণ আর কখনই একই রকম হবে না।
১৯৮০-এর দশকে, বিশ্ব একটি বিশাল সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল : সেটি হলো ওজোন স্তরে একটি দ্রুত প্রসারিত ফুটো। সূর্যের অতিবেগুনি বিকিরণ পৃথিবীতে প্রাণরক্ষার জন্য অপরিহার্য, তবে এটির অত্যধিক এক্সপোজার উদ্ভিদ এবং প্রাণীর ডিএনএর ক্ষতি করতে পারে। এই বিকিরণের প্রায় ৯৮ শতাংশ, স্ট্রাটোস্ফিয়ারে বিচ্ছুরিত ওজোন অণু দ্বারা শোষিত হয় এবং এই প্রক্রিয়ায় ওজোন অণুগুলো ক্রমাগত ভেঙে যায় এবং এরপর পুনর্গঠিত হয়, ফলে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় থাকে। তবে ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে, রসায়নবিদ মারিও মোলিনা এবং শেরউড রোল্যান্ড আবিষ্কার করেছিলেন যে, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন এই ভারসাম্যকে ব্যাহত করে।
ক্লোরোফ্লুরোকার্বন
ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ১৯২০-এর দশকে তিনটি মার্কিনভিত্তিক করপোরেশন রেফ্রিজারেটরের কুল্যান্ট হিসেবে উদ্ভাবন করেছিল। অ্যামোনিয়া বা মিথাইল ক্লোরাইডের মতো বিদ্যমান বিকল্পগুলোর বিপরীতে, ক্লোরোফ্লুরোকার্বনগু অ-দাহ্য এবং অ-বিষাক্ত ছিল : ফলে আগুন লাগার বা বিপজ্জনক গ্যাস লিক হওয়ার ঝুঁকি কম ছিল। এ ছাড়াও তারা ছিল চমৎকার প্রোপেল্যান্ট, ফোমিং এজেন্ট এবং অগ্নি প্রতিরোধক। ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, ফলস্বরূপ বিভিন্ন দৈনন্দিন জিনিসের ব্যবহৃত হওয়া শুরু করে এবং এটি একটি বহু বিলিয়ন ডলার শিল্পে পরিণত হয়। উল্লেখ্য, নিম্ন বায়ুম-লে, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ভেঙে যায় না বা অন্য অণুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে না।
মোলিনা এবং রোল্যান্ড অবশ্য দেখতে পেয়েছেন যে, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে, ক্লোরোফ্লুরোকার্বনগু অতিবেগুনি রশ্মির দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে ক্লোরিন পরমাণুগুলোকে ছেড়ে দেয়। এই ক্লোরিন পরমাণুগুলো ওজোনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। বিক্রিয়ার ফলাফল হলো ওজোন লেয়ারকে এটি দ্রুততার সঙ্গে বিনষ্ট করতে থাকে। ওজোন লেয়ার তার ক্ষতিপূরণ করে নেওয়ার আগেই আরও ধ্বংস হয়ে যায়। একটি একক ক্লোরিন পরমাণু অন্য কিছুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে একটি স্থিতিশীল অণু গঠন করার আগে হাজার হাজার ওজোন অণুকে ধ্বংস করতে পারে। নিজেদের পণ্য হুমকির সম্মুখে বুঝতে পেরে তখন ক্লোরোফ্লুরোকার্বন উৎপাদনকারীরা বিজ্ঞানীদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করে থামানোর চেষ্টা করে। এমনকি বিজ্ঞানীরা নাকি রাশিয়ার কেজিবির হয়ে কাজ করছে, এহেন অভিযোগও তারা তোলেন।
ওজোন স্তরের ফুটো
প্রাথমিক গবেষণায় অনুমান করা যায়, ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের কারণে, আগামী ৬০ বছরে ওজোনের ঘনত্ব ৭ শতাংশ কমাতে পারে। ১৯৮৫ সাল নাগাদ, এটি সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে ওজোন হ্রাস, বিশেষ করে অ্যান্টার্কটিকার ওপর, অনেক দ্রুত ঘটছে। অ্যান্টার্কটিকায়, অত্যন্ত ঠান্ডা তাপমাত্রা এবং অ্যান্টার্কটিক মেঘের বিশেষ গঠনের ফলে ওজোন ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করেছে। অ্যান্টার্কটিকায় অবস্থানরত বিজ্ঞানীরা প্রতি বসন্তে ওভারহেড ওজোনের একটি উল্লেখযোগ্য হ্রাস লক্ষ্য করেছেন। স্যাটেলাইটের তথ্য প্রকাশ করেছে সেই ক্ষতির বিশাল রূপ এবং রাসায়নিক পরীক্ষা নিশ্চিত করেছে যে, এই ক্ষতির কারণ নিঃসন্দেহে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন। নাসা শিগগিরই ওজোন স্তরের ফুটোর ভিজ্যুয়ালাইজেশন প্রকাশ করে, যা সারা বিশ্বে সম্প্রচারিত হয়েছিল এবং জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ওজোন হ্রাস অব্যাহত থাকলে, ত্বকের ক্যানসারের হার আকাশচুম্বী হবে এবং সালোকসংশ্লেষণ ব্যাহত হবে, যার ফলে চাল, গম এবং ভুট্টা ইত্যাদি শস্যের ফলন কমে যাবে এবং শস্যগুলো সহজেই বিনষ্ট হতে পারে। বিশ্বব্যাপী কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাবে এবং সমগ্র বাস্তুসংস্থান ভেঙে পড়বে। ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ব্যবহারে এত সমস্যার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও অনেক রাজনীতিবিদ দীর্ঘমেয়াদি বিপদের কথা অগ্রাহ্য করে, এটির উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়ার ফলে তৎকালীন অর্থনীতির ওপর কী বিরূপ প্রভাব পড়বে তা নিয়ে বেশি চিন্তিত হয়ে ওঠেন।
সমাধান
ক্লোরোফ্লুরোকার্বন নিষিদ্ধ করার লড়াইয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের মাঝে একটি অভূতপূর্ব যুগলবন্দি হয়। রাজনীতির বিরোধ দূরে সরিয়ে তারা একত্রিত হন একটি বিষয়ে। ত্বকের ক্যানসারের চিকিৎসা করানো রোনাল্ড রিগান যিনি নিজে স্কিন ক্যানসারের ট্রিটমেন্ট নিচ্ছিলেন এবং মার্গারেট থ্যাচার, যিনি ছিলেন একজন প্রশিক্ষিত রসায়নবিদ, অবিলম্বে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন অপসারণের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছিলেন। কানাডা, নরওয়ে, সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছিল। ১৯৮৭ সালে প্রতিনিধিরা মন্ট্রিএল প্রোটোকলে স্বাক্ষর করেন। যেখানে দ্রুততম সময়ে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা এবং সাশ্রয়ী মূল্যের, ওজোন ক্ষয় করবে না, এরূপ বিকল্পগুলো পেতে গ্লোবাল সাউথ দেশগুলোকে সহায়তা করার জন্য একটি তহবিল তৈরি করার কথা উল্লেখ ছিল। সব দেশ এতে রাজি হয়েছিল। এটি ইতিহাসের একমাত্র চুক্তি, যেখানে সবাই মিলে একটি একক সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছে। ১৯৯৫ সালে, মলিনা, রোল্যান্ড এবং তাদের ডাচ সহকর্মী পল ক্রুটজেন যৌথভাবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের ব্যবহার হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওজোন গর্ত সঙ্কুচিত হতে শুরু করে এবং ২০৭০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়।
১৯৮৭ সালে, বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক পরিবেশ চুক্তি, মন্ট্রিএল প্রোটোকল, ২৪টি দেশ দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়েছিল। প্রোটোকলের লক্ষ্য ওজোন-ক্ষয়কারী পদার্থ যেমন ক্লোরোফ্লুরোকার্বন এবং হ্যালনের উৎপাদন বন্ধ করা। প্রোটোকলটি পরবর্তী সময় ১৯৯০ সালের লন্ডন সংশোধনীসহ বেশ কয়েকটি সংশোধনী দ্বারা আরও পোক্ত করা হয়েছিল, যা ওজোন-ক্ষয়কারী পদার্থ দূরীকরণকে ত্বরান্বিত করেছিল। ওজোন-ক্ষয়কারী পদার্থের ব্যবহার কমানোর সঙ্গে সঙ্গে সবাই এর বিকল্প খুঁজতে শুরু করে। এর ফলে তৈরি হয় হাইড্রোফ্লুরোকার্বন এবং অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদি, যা ওজোন স্তরের ক্ষতি করে না। নতুন প্রযুক্তিগুলো ধীরে ধীরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন এয়ারকন্ডিশনার এবং রেফ্রিজারেশনে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। আন্তর্জাতিকভাবে সরকার, বিজ্ঞানী এবং ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একতা থাকায় মন্ট্রিএল প্রোটোকল সফল হয়েছিল। ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম এবং ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন ওজোন-ক্ষয়কারী পদার্থের দূরীকরণকে সমর্থন করার জন্য প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক প্রমাণ প্রদানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রটোকল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা অপরিহার্য ছিল।
যদিও ওজোন-ক্ষয়কারী পদার্থের দূরীকরণ এখনো পর্যন্ত সফল হয়েছে, তবুও ওজোন স্তর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ইউএনইপি এবং ডব্লিউএমও গ্লোবাল ওজোন অবজার্ভিং সিস্টেম এবং ওয়ার্ল্ড ওজোন এবং আল্ট্রাভায়োলেট রেডিয়েশন ডেটা সেন্টারের মাধ্যমে ওজোন স্তরের নিরীক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে বিজ্ঞানীরা। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে, ওজোন স্তর ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হচ্ছে এবং এটি এই শতাব্দীর মধ্যেই ১৯৮০ সালের পূর্বে যেমন ছিল সেরূপে ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জনসচেতনতা ও শিক্ষা ওজোন স্তরের অবক্ষয় মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মিডিয়া, বেসরকারি সংস্থা এবং সরকার সবাই এই সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে ভূমিকা পালন করেছে।