Image description

অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিলেও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে বিএনপি। 

জানা গেছে, খালেদা জিয়া ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে সংঘাতে না যাওয়ার জন্য দলটির সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন। 

গত শনিবার (৭ জুন) ঈদের দিন রাতে স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে তিনি এই পরামর্শ দেন। 

বিএনপি চেয়ারপারসন নেতাদের বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে সংঘাতে গেলে বিএনপির কোনো লাভ নেই।’

নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, বিএনপি চেয়ারপারসনের এই পরামর্শের পর সোমবার (৯ জুন) রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। এই বৈঠকে খালেদা জিয়ার মতামতের ওপর বিশদ আলোচনা করা হয়। এ বিষয়ে আলোচনার পর কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসার পাশাপাশি ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের বিষয়টিও নিয়ে আলোচনা হয়। 

মঙ্গলবার (১০ জুন) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বৈঠকের এ বিষয়টি জানানো হবে।

সূত্র জানায়, লন্ডনে আগামী শুক্রবার (১৩ জুন) ড. ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। লন্ডনের ডরচেষ্টার হোটেলে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এ বৈঠকটি নির্ধারণ করা হয়েছে। 

ঈদের আগের দিন ৬ জুন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধের যে কোনো দিন অনুষ্ঠিত হবে।’ 

এর পরপরই ওই রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে আলোচনার পর করা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিএনপি। 

দলটি বলছে, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হলে আবহাওয়ার সংকট থাকবে। এ ছাড়া রমজানের মধ্যে নির্বাচনি চারণা ও কার্যক্রম এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে, যা নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তাছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান কেন সম্ভব নয়, এর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে উল্লেখ করা হয়নি। 

এর পর রাজনৈতিক অঙ্গনে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনা তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যে সরকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার মাধ্যমে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এবং তারেক রহমানও এই বৈঠকের বিষয়ে সম্মতি জানায়। এরপরই সোমবার রাতে বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্ধারণ করা হয়। 

ধারণা করা হচ্ছে, আগের কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে বিএনপি। 

 

সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের এই বৈঠককে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। নির্বাচনের রোডম্যাপ, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে প্রধান উপদেষ্টা এবং বিরোধী দলের একজন শীর্ষ নেতার মধ্যে এই ধরনের উচ্চপর্যায়ের আলোচনা দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে। 

এই আলোচনার ফলাফল দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা কমাতে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করতে সহায়ক হবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

 

চার দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে সোমবার (৯জুন) সন্ধ্যায় ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। 

সফরকালে সময় বাকিংহাম প্যালেসে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করবেন প্রধান উপদেষ্টা। 

এ সময় তিনি রাজা চার্লসের হাত থেকে গ্রহণ করবেন ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। 

পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউস আয়োজিত এক সংলাপে অংশ নেবেন। 

আগামী ১৪ জুন দেশে ফেরার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।