
প্রত্যক্ষ করের ৬০ শতাংশেরই বেশি আদায় হয়ে থাকে উৎসে কর বা অগ্রিম আয়কর থেকে। আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) বাজেটেও উৎসে কর থেকেই সবচেয়ে বেশি প্রত্যক্ষ কর আদায় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ জন্য দেড় শতাধিক পণ্যের ওপর নতুন করে উৎসে কর বসানো হচ্ছে। অপরদিকে যেসব আমদানি পণ্যে উৎসে করের হার বেশি, সেসব ক্ষেত্রে হার কমানো হবে। একইসঙ্গে বাড়ছে টার্নওভার টেক্সের হারও। ফলে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য স্বস্তির পাশাপাশি অস্বস্তিও থাকবে।
বাজেটে রপ্তানিপণ্য বৈচিত্র্যকরণে থাকছে নীতি সহায়তা। যেসব খাতে কর অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে, সেসব খাতে নতুন করে আর মেয়াদ বাড়ছে না। তবে যেসব খাতে কর অব্যাহতির নির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসছে না। এনবিআর-সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, আগামী বাজেটে ব্যবসাবান্ধব ও করবান্ধব বেশ কিছু উদ্যোগ থাকছে। অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার এটির ব্যাপকতা বেশি থাকবে। তবে এ জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে কারো জন্য কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হলেও দেশের রাজস্ব আহরণে গতি বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও স্বস্তি পাবেন।
উৎসে করের বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব পণ্য আমদানিতে উৎসে কর নেই, সেসব পণ্য আমদানিকারকরা মুনাফা করলেও তাদের অনেকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন না। তারা যেন রিটার্ন দাখিল করেন, সেজন্য আগামী বাজেটে ১ থেকে ২ শতাংশ উৎসে কর আরোপ করা হচ্ছে। এর ফলে সারা বছরই সরকারের রাজস্ব আয় হবে। অপরদিকে যেসব পণ্য আমদানিতে ৩ থেকে ৫ শতাংশ উৎসে কর রয়েছে, সেসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে তা কমিয়ে আনা হবে। ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য আগাম খরচের পরিমাণ কমে যাবে। বছরে তিন কোটি টাকার বেশি টার্নওভার হয়Ñএমন কোম্পানির টার্নওভার টেক্সের হার ০.৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকবে আগামী বাজেটে।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, সাধারণত ব্যবসায় মুনাফা হলেই করপোরেট আয়কর দেওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের দেশে ব্যবসায়ীরা আয়-ব্যয়ের সঠিক তথ্য অনেক সময় দেন না। ব্যবসায় মুনাফা করলেও বছর শেষে তারা লোকসান দেখিয়ে থাকেন। ফলে সরকার আয়কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ কারণে উৎসে কর এবং টার্নওভার টেক্স থেকে রাজস্ব আদায় করতে হচ্ছে। এটি স্ট্যান্ডার্ড রাজস্বনীতি না হলেও বর্তমান বাস্তবতায় এ ছাড়া উপায়ও নেই। নগদ অর্থ লেনদেনের পরিবর্তে ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ে তোলা সম্ভব হলে উৎসে কর থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হবে বলে জানান রাজস্ব কর্মকর্তারা।
রপ্তানিপণ্যের বৈচিত্র্যকরণে থাকছে নীতি সহায়তা
রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশই আসছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। রপ্তানি খাতে একক পণ্যনির্ভরতা কমিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে তাগিদ দেওয়া হলেও পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটছে না। কিছু কিছু পণ্য রপ্তানি তালিকায় যুক্ত হলেও তার পরিমাণ খুব বেশি নয়। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে রপ্তানিপণ্যের বৈচিত্র্যকরণে নীতি সহায়তা দেওয়া হবে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, ফার্নিচার, ফুটওয়্যার খাতের মতো বেশ কিছু খাতে রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এসব খাতে যেসব কাঁচামাল প্রয়োজন হবে, সেগুলো আমদানিতে বন্ড সুবিধার পরিবর্তে ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে যাতে আনা যায়, সে ধরনের ব্যবস্থা থাকবে। ব্যাংক গ্যারান্টি রিভলভিং করার সুবিধাও পাবেন উদ্যোক্তারা। এতে করে নতুন পণ্যের রপ্তানি বাজার তৈরি হবে বলে মনে করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।
এক্ষেত্রে ফার্নিচারের উদাহরণ তুলে ধরে এনবিআর কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বব্যাপী ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তা ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু আমরা বছরে মাত্র ১৫০ মিলিয়ন ডলারের ফার্নিচার রপ্তানি করি। আগামী বছর এ খাত থেকে যাতে কমপক্ষে এক বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়, সেটি আমাদের লক্ষ্য।
মেয়াদোত্তীর্ণ খাতে বাড়ছে না কর অব্যাহতি
চলতি বছরের ৩০ জুনে যেসব খাতে কর অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে, সেসব ক্ষেত্রে নতুন করে মেয়াদ বাড়বে না। অতীতে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অনেক ক্ষেত্রে মেয়াদ বাড়ানো হলেও এবার তেমনটি হবে না। তবে যেসব খাতে কর অব্যাহতির মেয়াদ নির্দিষ্ট রয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসবে না। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সেগুলোর মেয়াদ কমানো হবে না। নীতির পরিবর্তন নিয়ে যাতে সমালোচনা না হয়, সেজন্য কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত খাতগুলো মেয়াদ পর্যন্ত করছাড় সুবিধা পাবে। এছাড়া যেসব খাতে কর অব্যাহতি সুবিধার নির্দিষ্ট কোনো মেয়াদ নেই, সেগুলোর বিষয়ে আগামীতে সংসদ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে জানান এনবিআর কর্মকর্তারা। তারা বলেন, কর অব্যাহতির সুবিধার বিষয়ে এনবিআর একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। আগামী জুলাই থেকে সেটি কার্যকর হবে। নীতিমালা অনুযায়ী কর অব্যাহতি সুবিধার বিষয়ে সংসদ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। বর্তমানে এসআরও জারির মাধ্যমে এনবিআর যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে কর অব্যাহতি সুবিধা দিতে পারে।