Image description

কোরবানির ঈদে পশুর চামড়া সংগ্রহে প্রস্তুত সাভারের চামড়া শিল্পনগরী। এর মধ্যে বিসিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। কারখানাগুলোতে মজুদ রাখা হয়েছে লবণসহ আনুষঙ্গিক রাসায়নিক দ্রব্য। ব্যস্ত সময়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে অতিরিক্ত কর্মী। পুরো বিসিক এলাকায় নেওয়া হচ্ছে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা।

ট্যানারি মালিকরা অবশ্য বলছেন, এবার কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে নগদ টাকার অভাব, লবণের চড়া দাম ও লোডশেডিংসহ নানা সমস্যা রয়েছে। ঈদের আগে এসব সমস্যার সমাধান না হলে নতুন চামড়া সংরক্ষণ নিয়ে সংকট তৈরির শঙ্কা করছেন মালিকরা। অন্যদিকে ঈদের বাড়তি চাপ সামলাতে বিসিক নজরদারি রাখলেও এবারও পুরোপুরি প্রস্তুত নয় কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি)।

ঈদে সাভারের বিসিক চামড়া শিল্পনগরীর ট্যানারিশিল্পের কারখানাগুলোতে এবার এক কোটি পাঁচ লাখ চামড়া সংগ্রহ করবেন ট্যানারি মালিকরা। কিন্তু লবণের চড়া দাম হওয়ায় শঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা। কিছুদিন আগেও যে লবণ ছিল সাত শ টাকা বস্তা, ঈদ সামনে রেখে সেই লবণের বস্তা এক লাফে এক হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বেড়েছে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্যের দামও। এ ছাড়া বড় দুশ্চিন্তা রয়েছে লোডশেডিং নিয়ে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চায়না বায়াররা না নেওয়ায় গেল বছরের অনেক চামড়া এখনো মজুদ রয়েছে। বকেয়াও রয়েছে তাঁদের কাছে, যে কারণে চামড়া কিনতে বেগ পেতে হবে মালিকদের। পচন থেকে কাঁচা চামড়া রক্ষায় ন্যায্য দামে লবণ আর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা।

মেসার্স আইয়ুব ব্রাদার্স ট্যানারির মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ শিল্পে প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের দরকার হয়।

কিছু সময়ের জন্যও যদি লোডশেডিং হয়, তাহলে তা আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। এ ছাড়া ঈদ এলেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লবণের দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে বিপাকে পড়েন ট্যানারি মালিকরা।

সরেজমিনে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে দেখা যায়, বিসিক এলাকার জমে থাকা বিভিন্ন আবর্জনা সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। পরিষ্কার করা হচ্ছে পানি নিষ্কাশনের ড্রেন। অতিরিক্ত বর্জ্য ধারণের জন্য রাখা হয়েছে নির্দিষ্ট স্থান। বৈদ্যুতিক ত্রুটি আছে কি না, খতিয়ে দেখছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এ ছাড়া ঈদে বাড়তি চাপের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তুত রাখা হয়েছে সিইটিপি।

কয়েকটি কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোরবানির ঈদে কর্মব্যস্ততা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। কাঁচা চামড়া সংগ্রহের পর তা সংরক্ষণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কর্মীরা। এ জন্য বাড়তি লবণ ও নানা রাসায়নিক দ্রব্য মজুদ রাখতে হয়। পাশাপাশি এবার অতিরিক্ত শ্রমিকও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান শাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, আমাদের চাহিদার ৫০-৬০ শতাংশ চামড়া কোরবানির ঈদে সংগ্রহ করতে হয়। ঈদ উপলক্ষে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি আছে। তবে অন্যান্যবার যেমন হয়, তার চেয়ে এবার একটু কম। আমাদের চামড়ার প্রধান মার্কেট চীন। কিন্তু যুদ্ধের কারণে আমাদের যে চামড়াগুলোর অর্ডার ছিল, সেগুলো ক্রেতারা নেয়নি এবং আমাদের টাকা পরিশোধ করেনি। এ ছাড়া ব্যাংক থেকেও আমরা প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছি না। আমরা সাধারণত কোরবানির আগে আমাদের ব্যাপারীদের পাওনা পরিশোধ করি এবং চামড়া সংরক্ষণের জন্য কেমিক্যালস মজুদ করি। এ সময় শ্রমিকদের মজুরিও আগাম দেওয়া হয়। কিছু ট্যানারি এসব কাজ সম্পন্ন করেছে। কিন্তু সম্মিলিতভাবে যেটি করা দরকার, সেটি সম্ভব হয়নি। এভাবে আর্থিক সংকট থাকলে, ঈদ পর্যন্ত চামড়া সংরক্ষণ কঠিন হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আমরা আশা করি সরকার এ বিষয়ে খুব আন্তরিক। সব কিছু মিলিয়ে কোরবানির চামড়া সংগ্রহের ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলো দ্রুত সমাধান করে ভালোভাবে যাতে চামড়া সংরক্ষণ করতে পারি, সে ব্যাপারে আরো সহযোগিতা কামনা করছি।

ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, এবার গরু, ছাগল ও মহিষ মিলিয়ে এক কোটি পাঁচ লাখ চামড়া সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যেহেতু চামড়া পচনশীল, তাই এখানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে।

চামড়া শিল্পনগরীর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান রিজোয়ান বলেন, এবার ১৬২টি ট্যানারির মধ্যে ১৪২টির প্রস্তুতি রয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহসহ সব সুবিধা দিতে এর মধ্যে কাজ শেষ করা হয়েছে। ড্রেন সংস্কার আর ট্রাকের বিশৃঙ্খলা এড়াতে এবার নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু পদক্ষেপ। প্রতিদিনই আমরা আপডেট তথ্য নিচ্ছি, কে কত চামড়া সংরক্ষণ করতে পারবে।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে লবণের পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় ঘাটতির আশঙ্কা  নেই। এবার আমাদের চাহিদা অনুযায়ী ১৭ হাজার টন লবণ মজুদ রয়েছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, কোরবানির ঈদের মধ্যে যে চামড়াটা ট্যানারিতে ঢুকবে, সেটা আমরা একা কন্ট্রোল করতে পারি না।  এখানে পুলিশ লাগে, আনসার লাগে।

মাহফুজুর রহমান জানান, ঈদের দিন কমপক্ষে ২০-২৫ হাজার লোক ট্যানারির ভেতরে ঢুকবে। এ সময় অতিরিক্ত শ্রমিকের সঙ্গে দুষ্কৃতকারী প্রবেশ করছে কি না, সে বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য বিসিকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তুত আছি। এখন প্রয়োজনীয়সংখ্যক পুলিশ ও আনসার দেওয়া হলে পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে সহজ হবে।

বিদ্যুতের বিষয়ে তিনি বলেন, পুরো ট্যানারিতে মাত্র ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। এ জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব। নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ এবং আনসার সরবরাহ করা হলে আমরা অন্য বিষয়গুলো সামলে নিতে পারব।