
সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূইয়া বলেছেন, ‘প্রতিবেশী দেশের চাপ ও চাহিদা যত প্রবলই হোক, আমাদের নিজস্ব প্রয়োজনের ভিত্তিতে শক্ত ও সুচিন্তিত অবস্থান তৈরি করা ও নেয়া জরুরি। বাংলাদেশ যদি নিজের স্বার্থে দৃঢ়, সাহসী ও ঐক্যবদ্ধ না থাকে, তাহলে অন্যরাও আমাদের গুরুত্ব দিতে শিখবে না।’
সোমবার তার নিজ ফেসবুক পোস্টে সাবেক সেনাপ্রধান এ কথা বলেন।
‘বাংলাদেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে’ শিরোনামে সাবেক সেনাপ্রধান আরো লেখেন, ‘বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা ক্রমাগত শুনে যাচ্ছি— মিয়ানমার কী চায়, ভারত কী চায়, চীন কী চায়, কিংবা আমেরিকা কী চায়। এই প্রশ্নগুলোকেই যেন আমরা জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বসিয়ে ফেলেছি। অথচ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন— বাংলাদেশের জনগণ কী চায়? বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় আমাদের কী করণীয়— সেই প্রশ্নটি যেন নীরবে ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। দুঃখজনকভাবে, এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য আমরা কেউই প্রকৃত আগ্রহ দেখাচ্ছি না।
জাতীয় স্বার্থই হওয়া উচিত যে কোনো পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি। অন্য দেশের চাহিদা ও কৌশল বিশ্লেষণ অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু সেই বিশ্লেষণ তখনই অর্থবহ হয় যখন তা আমাদের স্বার্থরক্ষার প্রেক্ষাপটে করা হয়। শুধু বড় শক্তিগুলোর অভিপ্রায় বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিলে আমরা আমাদের নিজস্ব অবস্থান ও স্বার্থ হারিয়ে ফেলবো। এর ফলে দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং জনগণের ইচ্ছাকে অগ্রাধিকার দেয়ার মনোযোগ দুর্বল হয়ে পড়ে।
তাই বিতর্কের এই ঝড়ো সময়ে আমাদের নীতিনির্ধারক, রাজনীতিক, সমরবিদ, নাগরিক সমাজ, শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যম, ও সচেতন মানুষদের একসাথে চিন্তা করতে হবে:
- বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোন কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন?
- সীমান্ত নিরাপত্তা, উদ্বাস্তু সমস্যা, বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় আমরা কী করতে পারি?
- জনগণের মতামতকে কীভাবে জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা যায়?
জাতীয় স্বার্থ ও জনগণের আকাঙ্ক্ষাই হোক আমাদের অগ্রাধিকারের কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিবেশী দেশের চাপ ও চাহিদা যত প্রবলই হোক, আমাদের নিজস্ব প্রয়োজনের ভিত্তিতে শক্ত ও সুচিন্তিত অবস্থান তৈরি করা ও নেয়া জরুরি। বাংলাদেশ যদি নিজের স্বার্থে দৃঢ়, সাহসী ও ঐক্যবদ্ধ না থাকে, তাহলে অন্যরাও আমাদের গুরুত্ব দিতে শিখবে না।