
বৃটেনের অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ পাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ১২ই জুন লন্ডনে বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতায় রাজা চার্লস থ্রি নোবেল বিজয়ী ওই অর্থনীতিবিদের হাতে অ্যাওয়ার্ডটি তুলে দিবেন। ২০২৪-এ প্রবর্তিত প্রথম কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ছিলেন জাতিসংঘের অষ্টম মহাসচিব বান কি মুন। দক্ষিণ কোরিয়ার ওই কূটনীতিক দেশটির প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। ’২৪-এর ১১ই জুন সেন্ট জেমস প্যালেসে উপস্থিত থেকে রাজা ফার্স্ট অ্যাওয়ার্ড রিসিপিয়েন্ট বান কি মুনের হাতে পুরস্কারটি তুলে দেন। দ্য কিংস ফাউন্ডেশন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকে। তবে হারমনি অ্যাওয়ার্ডটি অত্যন্ত স্পেশাল বলে দাবি করেন ফাউন্ডেশনের সিইও ক্রিস্টিনা মুরিন।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র শনিবার মানবজমিনকে জানিয়েছে, অ্যাওয়ার্ড নিতে প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন যাচ্ছেন, এটা প্রায় চূড়ান্ত। প্রস্তাবিত ৪ দিনের ওই সফরে এখন দ্বিপক্ষীয় উপাদান যুক্ত করার প্রয়াস চলছে। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ১০ই জুন সরকারপ্রধান লন্ডন পৌঁছাবেন, ফিরবেন ১৩ই জুন। সফরের তৃতীয় দিনে (অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের দিন) রাজা চার্লস থ্রি’র সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে তার। সফরের প্রথম, দ্বিতীয় এবং চতুর্থ অর্থাৎ সামপনী দিনের কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ওই সময়ে দ্বিপক্ষীয় কম্পনেন্ট অর্থাৎ বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী, দেশটির রাজনৈতিক নেতৃবর্গ, (বাইপার্টিজান লিডারশিপ), কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেলসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অ্যাপয়েনমেন্ট চাওয়া হয়েছে। বৃটেনে ব্যাংক হলিডে চলছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী সপ্তাহের শুরুতেই অ্যাপয়েনমেন্টগুলো চূড়ান্ত হতে পারে। রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত ৮ই আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। যার প্রধান হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদেশসফরে বৃটেন হবে ড. ইউনূসের ১১তম গন্তব্য। ১০ মাসে তিনি ১০টি দেশ সফর করেছেন। যার সূচনা ছিল গত সেপ্টেম্বরে, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের মধ্যদিয়ে। আর শেষ অর্থাৎ দশম সফর হয়েছে বিদায়ী মে মাসের সমাপনীতে জাপানে। নিউ ইয়র্ক সফরে তার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ছিল তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে। প্রধান উপদেষ্টার দ্বিতীয় বিদেশ সফর ছিল আজারবাইজানের বাকুতে। ১১ থেকে ২২শে নভেম্বর।
জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে অংশগ্রহণ ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। তবে সাইড লাইনে তার সিরিজ অব মিটিং হয়। তৃতীয় বিদেশ সফর ছিল মিশরের কায়রোতে। ১৮ থেকে ২০শে ডিসেম্বর। উপলক্ষ ডি-৮ সম্মেলনে অংশগ্রহণ। চতুর্থ সফর ছিল সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে। ২১ থেকে ২৫শে জানুয়ারি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে অংশগ্রহণ। পঞ্চম সফর ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যিক শহরে দুবাইতে। ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিট ছিল সেখানে। মার্চে ছিল তার বহুল আলোচিত চীন সফর। ৬ষ্ঠতম ওই সফরটি ছিল মূলত দেশটির হাইনানে। উপলক্ষ বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার মতো বহুপক্ষীয় আয়োজনে অংশগ্রহণ। সেইসঙ্গে তিনি বেইজিং সফর করেন। সেখানে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংসহ চীনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয় তার। বেইজিং সফর ছিলো ড. ইউনূসের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর।
চীন থেকে ফেরার পর থাইল্যান্ড যান ড. ইউনূস। এটি ছিলো তার সপ্তম সফর। উদ্দেশ্য বিম্সটেক সম্মেলনে যোগদান। ৩ থেকে ৪ঠা এপ্রিলের ব্যাংকক সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রথম বৈঠক হয় তার। ২১ থেকে ২৫শে এপ্রিল আর্থনা সম্মেলনে যোগ দিতে কাতারে যান তিনি। ২৬শে এপ্রিল সেখান থেকে প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে ভ্যাটিকান সিটি যান ড. ইউনূস। সর্বশেষ ৩০তম নিক্কেই ফোরাম ফিউচার অব এশিয়ায় অংশগ্রহণ করতে জাপানের টোকিও সফর করেন। ২৮ থেকে ৩১শে মে’র সফরটিতে দ্বিপক্ষীয় উপাদান যুক্ত ছিলো। বিশেষ করে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠকটি ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। জাপান থেকে শনিবার দেশে ফিরেন তিনি। দশ মাসে ১০ সফরের মধ্যে কোনো রাষ্ট্রীয় সফর ছিল না। তবে জুলাই’র মাঝামাঝিতে ড. ইউনূসের প্রস্তাবিত মালয়েশিয়া সফরটি স্টেট ভিজিট হতে পারে বলে আভাস মিলেছে।