Image description

সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই বাংলাদেশে মানুষ ঠেলে পাঠাচ্ছে ( পুশ ইন ) ভারত । শুধু চলতি মে মাসের ২২ দিনেই ১ হাজার ১০৬ জনকে পুশ ইন করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ । এ কাজে সীমান্তবর্তী ১৭ জেলার ২৬ টি স্থানকে বেছে নিয়েছে তারা । সবচেয়ে বেশি পুশ ইনের ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজার জেলার তিন সীমান্ত দিয়ে । সীমান্তে বিএসএফের পুশ ইন প্রতিরোধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ( বিজিবি ) বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন করা ব্যক্তিদের আটক করছে বিজিবি ।

যথেষ্ট ফল দিচ্ছে না । কর্মকর্তারা বলছেন , বাংলাদেশ সীমান্তের কিছু এলাকায় ঘন জঙ্গল ও দুর্গম পাহাড় থাকায় বিজিবির টহল কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিচ্ছে বিএসএফ । এই ২৬ টি সীমান্ত এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিজিবি । ওই সব এলাকায় টহল জোরদার , সীমান্ত পাহারায় স্থানীয়দের যুক্ত করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । তবে পাহারা দিয়ে পুশ ইন ঠেকানো যাচ্ছে না । বিজিবি সূত্রে জানা গেছে ,

বিজিবি সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী , ৭ থেকে ২৯ মে পর্যন্ত এই ২২ দিনে ২৬ টি দুর্গম সীমান্ত দিয়ে ১ হাজার ১০৬ জনকে পুশ ইন করেছে বিএসএফ । এর মধ্যে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়নের আচালং সীমান্ত দিয়ে ১১৮ , কুড়িগ্রামের রৌমারী , ভুরুঙ্গামারীর ভাওয়ালকুড়ি ও ফুলবাড়ী উপজেলার বালাতাড়ী সীমান্ত দিয়ে ৯৩ জনকে পুশ ইন করা হয়েছে ।

এ ছাড়া সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার নয়াগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ১১৫ , মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুর ও পাল্লাথল সীমান্ত দিয়ে ৩৪০ , হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার কেলেঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ১৯ , সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ছনবাড়ী সীমান্ত দিয়ে ১৬ , কুমিল্লা সদর উপজেলার গোলাবাড়ীর কমুয়া সীমান্ত দিয়ে ১৩ , ফেনীর ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী সীমান্ত দিয়ে ৩৯ , লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার রহমতপুর গাটিয়ার ভিটা ও শ্রীরামপুর সীমান্ত দিয়ে ৭৮ , ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার বৈরুচুনা সীমান্ত দিয়ে ১৯ , পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাঁড়িভাসা ইউনিয়নের বড়বাড়ী সীমান্ত দিয়ে ৩২ , দিনাজপুরের বিরল উপজেলার এনায়েতপুর ও রামচন্দ্রপুর সীমান্ত দিয়ে ১৫ জনকে ঠেলে পাঠানো হয়েছে ।

একই সময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বিভীষণ সীমান্ত দিয়ে ১৭ , চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের হরিহরনগর ও দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা নিমতলী সীমান্ত দিয়ে ১৯ , মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর - মাজপাড়া সীমান্ত দিয়ে ৩০ , ঝিনাইদহের মহেশপুরের পুশ ইনের ২৬ হটস্পট অধীন কুসুমপুর ও বেনীপুর সীমান্ত দিয়ে ৪২ এবং সাতক্ষীরার কুশখালী সীমান্ত দিয়ে ২৩ জনকে পুশ ইন করা হয় । এ ছাড়া সুন্দরবনের গহিন অরণ্যের মান্দারবাড়িয়া এলাকায় ৭৮ জনকে পুশ ইন করা হয়েছে । সবচেয়ে বেশি পুশ ইন মৌলভীবাজারের ২ সীমান্ত দিয়ে ২৯ মে বিকেল পর্যন্ত বিজিবির দেওয়া তথ্য বলছে , সবচেয়ে বেশি পুশ ইন করা হয়েছে মৌলভীবাজার জেলার দুটি সীমান্ত দিয়ে । সেগুলো হলো জেলার বড়লেখার শাহবাজপুর ও পাল্লাথল সীমান্ত । এই দুই সীমান্ত দিয়ে মোট ৩৪০ জনকে পুশ ইন করেছে বিএসএফ , যা মোট পুশ ইনের তিন ভাগের এক ভাগ ।

এই এলাকা থেকে এত বেশিসংখ্যক মানুষকে পুশ ইনের কারণ জানতে চাইলে সিলেট বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন , মৌলভীবাজার সীমান্ত এলাকায় পাহাড় ও ঘনজঙ্গল । সেখানে বিজিবির সদস্যদের পাহাড় ডিঙিয়ে টহলে যেতে হয় । বিওপি থেকে কোনো কোনো এলাকায় যেতে ৩ থেকে 8 ঘণ্টা সময় লাগে । জনমানবহীন ওই সব এলাকার ঘনজঙ্গলেও সবসময় বিজিবির টহল ও পাহারা থাকে । কিন্তু বিএসএফ সুযোগ বুঝে রাতের অন্ধকারে সীমান্তের কোনো এক জায়গা দিয়ে পুশ ইন করে চলে যায় । তাঁরা মূলত তাঁদের এলাকা দিয়ে ভুক্তভোগীদের জিরো পয়েন্টের দিকে ঠেলে দেয় ।

দূরের রাজ্য থেকে আটক , রাতের অন্ধকারে পুশ ইন ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আটক করে বাংলাদেশ সীমান্তে পুশ ইন করা হয়েছে এমন কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে , গত এপ্রিল থেকে দিল্লি , আসাম ও হরিয়ানার মতো দূরের রাজ্যগুলো থেকে তাঁদের আটক করে স্থানীয় পুলিশ । প্রথমে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও মেডিকেল পরীক্ষার পর কয়েকদিন আটকে রাখা হয় । যখন সংখ্যা শতাধিক ছাড়ায় , তখন ট্রেন ও গাড়িতে করে পুলিশ পাহারায় সীমান্ত এলাকায় এনে বিএসএফের হাতে তুলে দেয় । পরে গভীর রাতে বিএসএফ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশ ইন করে । হরিয়ানা থেকে আটক করে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়েছে এমন একজন হলেন আমির হোসেন । স্ত্রী ও চার সন্তানসহ তাঁর পুরো পরিবারকে কঠোর পাহারায় এনে সীমান্তে রাতে ছেড়ে দেয় বিএসএফ । তাঁদের বলা হয় , ‘ সামনে হাঁটো , না হলে গুলি করব । ' পরে বিজিবি তাঁদের উদ্ধার করে ।

এদিকে ২৭ মে বিকেলে বেনাপোল স্থালবন্দর দিয়ে ৩৫ নাগরিককে ভারত বাংলাদেশের কাছে ফেরত পাঠায় । তাঁদের ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় ভারতে পাচার করা হয়েছিল । তাঁরা ভারতের পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন সেফহোমে ছিলেন । পাচারের শিকার ৩৫ জনের বয়স ১৬-১৮ বছরের মধ্যে ।

আরও যত পুশ ইন এদিকে সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন অব্যাহত রেখেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ( বিএসএফ ) । গত বৃহস্পতিবার রাতে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের রেমা সীমান্ত দিয়ে ২২ জনকে পুশ ইন করেছে ভারত । বিজিবি সূত্র জানিয়েছে , সবাই বাংলাদেশি নাগরিক এবং তাঁরা কুড়িগ্রামের বাসিন্দা । এ ছাড়া ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মথুয়া সীমান্ত দিয়ে ১৩ জন পুশ ইন করেছে বিএসএফ । আর মৌলভীবাজারের জুড়ী সীমান্ত দিয়ে ১০ ও কমলগঞ্জ উপজেলার দুটি সীমান্ত দিয়ে ১৯ জনকে পুশ ইন করা হয়েছে । এর বাইরে খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে আবারও ১৪ জনকে পুশ ইন করেছে বিএসএফ ।