Image description
জুলাই যোদ্ধাদের জন্য ৫৯৩ কোটি টাকা মহার্ঘ ভাতায় বরাদ্দ ৭ হাজার কোটি টাকা মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে সড়কের নিরাপত্তায় আলাদা বরাদ্দ

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট হবে সাশ্রয়ী। এই বাজেটে কৃচ্ছ্রসাধন অব্যাহত থাকলেও তিন খাতে নতুন বরাদ্দ রাখছে অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাই অভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে, যাতে অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতরা সম্মানি পায়। এ ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ ভাতা দিতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে সড়কে নিরাপত্তা বাড়াতে আলাদা নতুন বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বলেও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। 

যদিও অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আসন্ন বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রথম অগ্রাধিকারে থাকছে। বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। নতুন করে ভাতার আওতায় যুক্ত হবেন জুলাই যোদ্ধারা। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জ্বালানি সাশ্রয় ও কর্মসংস্থান বাড়াতে আলাদা নজর দেবে সরকার।

আসন্ন বাজেটে (২০২৫-২৬) জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের মাসিক সম্মানি ভাতা এবং এককালীন সহায়তার অনুদান বাবদ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ৫৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরে এ খাতে কোনো বরাদ্দ নেই।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আসন্ন বাজেটে শহীদ পরিবার ও আহতদের মাসিক সম্মানি ভাতা বাবদ ব্যয় হবে ২০৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আর ৩৮৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা শহীদ পরিবার ও আহতদের এককালীন অনুদান হিসেবে ব্যয় করা হবে।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় শহীদ পরিবার ও গুরুতর আহতরা ক্যাটাগরিতে মাসে ২০ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা পাবে। বি ক্যাটাগরির আহতরা মাসে ১৫ হাজার টাকা এবং সি ক্যাটাগরির আহতরা জনপ্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা পাবেন। চলতি অর্থবছরে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতরা কোনো মাসিক সম্মানি পাননি। চলতি অর্থবছরে এ খাতে কোনো বরাদ্দও ছিল না। বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা মাসে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা সম্মানি পান।

জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের আগামী অর্থবছর থেকে মাসিক সম্মানি ভাতা দেওয়ার কথা গত ফেব্রুয়ারিতে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের জন্য এককালীন ৩০ লাখ টাকা করে মোট ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আহতদের দেশে-বিদেশে পর্যাপ্ত চিকিৎসা অনুদান ও পুনর্বাসনের জন্য মোট ৩৯০ কোটি টাকাসহ চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে মোট ৬৩৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

গত ডিসেম্বরে চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে বাকি অর্থ আগামী অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে নির্দেশনা দেওয়া হয়, এই অর্থ শহীদ পরিবার ও আহতদের এককালীন অনুদান হিসেবে ব্যয় করতে হবে। পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় শহীদ ও আহতদের এককালীন অনুদানের পাশাপাশি নগদ সামাজিক সহায়তা সুবিধার আওতায় মাসিক সম্মানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। 

কর্মকর্তারা জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গেজেটভুক্ত শহীদ পরিবারের সংখ্যা ৮৩৪। গেজেটভুক্ত প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে বাড়তি ২০ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। গণ-অভ্যুত্থানে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আহতদের মধ্যে ক্যাটাগরিতে রয়েছেন ৪৯৩ জন, বি ক্যাটাগরিতে ৯০৮ জন এবং সি ক্যাটাগরিতে ১০ হাজার ৬৪২ জন। এ ছাড়া ডি ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত ছাত্র-জনতার সংখ্যা সাত হাজার জন। এর বাইরে দুই হাজার ৪১৬ জন আহত ছাত্র-জনতার ক্যাটাগরিভিত্তিক তালিকা পায়নি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

চলতি অর্থবছরে , বি, সিডি ক্যাটাগরিভুক্তদের চিকিৎসা সহায়তা বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া আহতদের দেশে-বিদেশে চিকিৎসা বাবদ চলতি অর্থবছরে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আহতদের অনুদান বাবদ ১৩৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়।

মহার্ঘ ভাতা পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা

আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন হারে মহার্ঘ ভাতা পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাজেট ঘোষণা উপলক্ষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রথম থেকে নবম গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাবেন ১৫ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা, আর দশম থেকে বিংশ গ্রেডের কর্মীরা পাবেন ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এই হার চূড়ান্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদও বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আসন্ন বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতার প্রস্তাব সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় আছে। 

২০১৫ সাল থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পেয়ে আসছেন। তবে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনাও চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার। মহার্ঘ ভাতা কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ প্রণোদনা সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে। অর্থাৎ আগামী জুলাই থেকে ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে মহার্ঘ ভাতা পাবেন চাকরিজীবীরা। এতে সরকারের প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। 

সড়কের নিরাপত্তায় নজর দেবে সরকার

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সড়ক অবকাঠামোর পাশাপাশি সড়কের নিরাপত্তা খাতেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিন। গত শনিবার এক জাতীয় সংলাপে তিনি এ কথা জানান।

শেখ মঈনুদ্দিন বলেন, আগামী অর্থবছরে সড়ক নিরাপত্তা জোরদারে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) অধীনে একটি বিশেষ সড়ক নিরাপত্তা ইউনিট গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ইউনিট দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলো (ব্ল্যাক স্পট) চিহ্নিত করবে এবং সড়কে গতিসীমা বোর্ডের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করবে। এ জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ রাখা হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সড়কের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরকার বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগ যথাযথ বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে। এখন বাস্তবায়নে কতটা ব্যয় হবে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করবে। তবে তিনি বরাদ্দের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করে বলেননি।

এ ছাড়া ঋণনির্ভরতা কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা আসন্ন বাজেট থেকে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, এবারের বাজেট হবে ঋণের দুষ্টচক্র ভাঙার। এ ক্ষেত্রে দেশীয় ঋণ কম নেওয়ার চেষ্টা থাকবে। তবে এক বাজেট দিয়ে তো আর পুরোপুরি সফল হওয়া সম্ভব নয়। আগামী অর্থবছরের বাজেট দিয়ে এই কাজটা শুরু হবে।

তিনি আরো বলেন, বাজেট হবে দারিদ্র্য কমিয়ে আনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মূল্যস্ফীতি সহ্য করার সক্ষমতা তৈরি এবং বাস্তবভিত্তিক। কোনো বিলাসী ব্যয় রাখা হবে না বাজেটে। এই বাজেট সমতাভিত্তিক ও কল্যাণমুখী হবে।