Image description
বাজেট ২০২৫-২৬

আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে দেড় শতাধিক পণ্য আমদানিতে উৎসে কর হিসেবে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ( এআইটি ) আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার । এ তালিকায় রয়েছে আলু , পেঁয়াজ , মসুর ডাল , চিনি , ময়দা , ছোলার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য । আছে তুলা , কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম ও তথ্যপ্রযুক্তির পণ্যও । এত দিন এসব পণ্যের আমদানি পর্যায়ে এআইটি ছিল না ।

অগ্রিম আয়কর আরোপের কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা । তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন , এই কর সমন্বয়যোগ্য হওয়ায় পণ্যের দামে কোনো প্রভাব পড়বে না । এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাজেট প্রণয়নে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন , দেড় শতাধিক পণ্যে এআইটি ২ শতাংশ করা হচ্ছে , যা এত দিন শূন্য ছিল । এআইটি বসালেও পণ্যমূল্য বাড়বে না । অগ্রিম নেওয়া কর পরবর্তী সময়ে সমন্বয় করা হবে । এতে রাজস্বের ভিত্তি সম্প্রসারিত হবে । তবে সরকারের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন ব্যবসায়ীরা । ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ

চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ( এফবিসিসিআই ) সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন , ‘ সরকার যত কর বসাবে , ব্যবসায়ীরা সেটা যোগ করে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করবেন । ফলে সরকার যা - ই করুক , ভোক্তাদের ওপর চাপ পড়বে । ' জানা গেছে , যেসব পণ্য উৎসে করের আওতায় আসবে , তার মধ্যে রয়েছে আলু , পেঁয়াজ , মসুর ডাল , চিনি , ময়দা , ছোলা , ভুট্টার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ।

এ ছাড়া আছে পোশাকশিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল তুলা ও মানবসৃষ্ট তন্তু ; চিকিৎসা সরঞ্জামের মধ্যে হুইলচেয়ার , এনজিওগ্রাফি ও গাইড ক্যাথেটার , কৃত্রিম দাঁত , হিয়ারিং এইড এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেটওয়ার্কিং ডিভাইস, কম্পিউটারের মনিটর , প্রিন্টারের রিবন , রাউটার , মডেম , টোনার , অপারেটিং সিস্টেমস ইত্যাদিতে এআইটি বসবে । এ ছাড়াও শিল্প খাতে ব্যবহৃত রাসায়নিক , বিমান , বাস , মাছ ও মাংস উৎসে করের আওতায় আসবে । নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাজেট প্রণয়নে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা বলেন , ‘ করছাড় ধাপে ধাপে তুলে নেওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব পণ্যের ওপর এআইটি আরোপ করতে যাচ্ছি । দেশে অগ্রিম কর আদায়ের সংস্কৃতি বেশ পুরোনো ।

ব্রিটিশ শাসনামল থেকে রাজস্ব আহরণে এর চর্চা হয়ে আসছে । সহজে রাজস্ব আহরণের জন্য এটি বেশ কার্যকর পদ্ধতি । ' সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন , শূন্য কর সুবিধা থেকে সরে আসার অন্যতম কারণ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ( আইএমএফ ) চাপ । যদিও এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন , করদাতাদের সুবিধার জন্যই অগ্রিম কর চালু করা হয়েছে । কিস্তিতে তাঁরা কর পরিশোধ করতে পারেন , যা বছর শেষে সমন্বয় করা হয় । ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন , কর ফেরতের বিধান থাকলেও বাস্তবে তা প্রায় অসম্ভব । ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই করের বোঝা পণ্যের দামের ওপর ধার্য করা হয় ।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন , এআইটি বাড়ালে আমদানিকারক বা ব্যবসায়ীদের পুঁজি আটকে যায় । মূলধনে ঘাটতি হয় । এর ফলে আমদানির পরের দিনই ব্যবসায়ীরা সেটা পণ্যের ওপর বেঁধে দেবেন । বছর শেষে চূড়ান্ত করের সঙ্গে এআইটি সমন্বয় করার সুযোগ থাকছে উল্লেখ করলে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন , “ কোথায় সমন্বয় হয় ? আমরা ব্যবসায়ীরা এআইটি ফেরত পাই ? পা‍ই না । ফেরত পেতে হলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় । ’ এ বিষয়ে একমত প্রকাশ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ( এনবিআর ) সাবেক চেয়ারম্যান ড . আব্দুল মজিদ , বলেন , ‘ সবকিছুই জটিল । সাদা অর্থে দেখলে হচ্ছে না । বাংলাদেশে এআইটি সমন্বয় হয় না , এটা ক্লাসিক্যাল সমস্যা । এই আইনকানুনগুলো দেখতে হবে । ' ব্যবসায়ীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন , এ অভিযোগ আংশিক সত্য ; তবে বেশির ভাগই অর্ধসত্য । একদিকে ফেরত পাবেন না ধরে নিয়ে তাঁরা পণ্যের দাম

বাড়িয়ে তা উসুল করেন । ফলে পরে যা ফেরত পান , তা তাঁদের লাভ । বিপরীতে এনবিআর কর্মকর্তাদের সমালোচনা করে ব্যবসায়ী নেতা মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন , আমাদের কর বিভাগ সহজভাবে কর আদায়ে আগ্রহী বেশি । প্রত্যক্ষ কর আদায় ও নতুন করদাতা শনাক্ত করতে আগ্রহী নয় । সহজে কীভাবে রাজস্ব আদায় করা যায় , সেদিকে আগ্রহী তারা । বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ( সিপিডি ) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড . ফাহমিদা খাতুন বলেন , “ আমাদের দেশে যেহেতু কর ফাঁকি ও কর অনাদায়ি থাকে ; তাই সরকারের ওপর চাপ থাকে রাজস্ব আদায়ের । ঘাটতি মেটানোর চাপে বিভিন্ন পণ্যের ওপরে কর দেওয়া হয় । কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে , সময় গুরুত্বপূর্ণ । এখন মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি । পেঁয়াজ , আলু , ছোলা ইত্যাদি দৈনন্দিন চাহিদার মধ্যে থাকে । আমদানিকারকদের ওপর কর বাড়ালে সেটা ভোক্তার ওপরেই দেবেন ব্যবসায়ীরা । ফলে এসব নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে । দিন শেষে ধনী - গরিব সব শ্রেণির ভোক্তার ওপরে চাপ তৈরি হবে । ”