Image description

জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় শহর এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সহিষ্ণুতা বৃদ্ধিতে ৫৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরবান ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার (ইউসিআরআইপি) প্রকল্প হাতে নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এর মধ্যে ৩৮৬ কোটি টাকা অনুদান দিচ্ছে দাতা সংস্থা জার্মানির কেএফডব্লিউ ব্যাংক। আর প্রকল্পটিতে ১১৬ কোটি টাকা রাখা হয়েছে পরামর্শক খাতে। অন্যান্য প্রকল্পে ঋণ হোক কিংবা অনুদান হোক সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পরামর্শক খাতে রাখা হয়। অথচ এই প্রকল্পে রাখা হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে অনুদানের টাকা হওয়ায় সব প্রশ্ন পেছনে রেখে গত শনিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে জুলাই ২০২৫ থেকে জুন ২০২৯-এর মধ্যে।

প্রকল্পটির ব্যয় বিভাজনে দেখা গেছে, এতে তিন ধরনের পরামর্শকের জন্য ১১৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। অথচ রাস্তাঘাট, ড্রেন-খাল উন্নয়ন, ব্রিজ নির্মাণসহ যেসব কাজের জন্য পরামর্শক নেওয়া হচ্ছে তা এলজিইডির নিয়মিত কাজ। আবার এসব কাজ শিখতে ৭০ জনের বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে খরচ করা হবে পাঁচ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিজনের পেছনে খরচ হবে আট লাখ টাকার বেশি।

পরিকল্পনা কমিশনের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় যেসব কাজ করা হবে তা এলজিইডির নিয়মিত কাজ। এসব কাজে পরামর্শক বা বিদেশে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই। তবে এই প্রকল্পে পরামর্শকের পেছনে ১১৬ কোটি টাকা খরচ করা হবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে বিষয়টি নজরে এনেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, কোনো প্রকল্পের জন্য সহজ শর্তে ঋণ নিতে গেলে পরামর্শকের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। বৈদেশিক ঋণ যখন আসে, তখন যেসব পরামর্শক আসেন এঁরা বেশির ভাগই কোনো কাজের হন না। আমরা যদি বলি, আমাদের পরামর্শক লাগবে না, নিজেদের আছে। তাহলে বলা হয় বড় প্রজেক্ট না নিতে। এখন এই পরামর্শক ধীরে ধীরে কমানো হচ্ছে।

প্রকল্পটিতে ৫৬০টি সোলার স্ট্রিট লাইট কিনতে সাত কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে, যার একেকটি সোলার লাইট লাগাতে খরচ পড়বে এক লাখ ২৪ হাজার টাকা। স্থানীয় মার্কেটে এই সোলার স্ট্রিট লাইট পোলসহ পাওয়া যায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায়। বিডি স্টলের ওয়েবসাইটে লাইটের সর্বোচ্চ দাম দেখা গেছে ৬৪ হাজার টাকা, যা প্রস্তাবিত দামের অর্ধেক।

প্রকল্পটির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় শহর এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সহিষ্ণুতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে বন্যা মোকাবেলার জন্য শহর এলাকার সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি ও সবুজ অবকাঠামো বিনিয়োগের মাধ্যমে পরিকল্পিত নগরায়ণ নিশ্চিতকরণ এবং নির্ধারিত পৌরসভাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। জানা গেছে, জার্মান ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন (জিআইজেড) বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজিত নগর উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এই কার্যক্রম জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ পৌর জনগোষ্ঠীর সহনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নগর অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের ফলে শহর এলাকায় সৃষ্ট বন্যা মোকাবেলার জন্য সহিষ্ণুতা বৃদ্ধিকরণ, সবুজ অবকাঠামোয় বিনিয়োগের মাধ্যমে পরিকল্পিত উন্নয়ন, অংশগ্রহণকারী পৌরসভাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরবান ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। মানদণ্ডের মধ্যে বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এ চিহ্নিত বন্যা হটস্পটের মধ্যে অবস্থিত পৌরসভাগুলো এবং বিগত পাঁচ বড় তহবিলপ্রাপ্ত পৌরসভাগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। অগ্রাধিকারের মানদণ্ডে জলবায়ু ঝুঁকি, জনসংখ্যার ঘনত্ব, দারিদ্র্য শ্রেণিবিভাগের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে ৫৪টি পৌরসভা নির্বাচন করা হয় এবং প্রকল্প প্রস্তুতির মানদণ্ডের ভিত্তিতে ২২টি পৌরসভা থেকে প্রথম ধাপে গাইবান্ধা, ইসলামপুর ও সিরাজগঞ্জ পৌরসভাকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়েছে।

প্রকল্পের মাধ্যমে এই তিন পৌরসভায় সড়কে সোলার লাইট স্থাপন, নগর সড়ক উন্নয়ন ও পুনর্বাসন, ব্রিজ নির্মাণ/পুনর্বাসন, ড্রেন নির্মাণ, খাল উন্নয়ন/পুনঃখনন, পাবলিক টয়লেট উন্নয়ন, পুকুর উন্নয়ন, বাস টার্মিনাল পুনর্বাসন ইত্যাদি কাজ করা হবে।

প্রকল্প এলাকা নির্বাচনের বিষয়ে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্প এলাকা অর্থাৎ পৌরসভাগুলোকে তিনটি মানদণ্ডযথাক্রমে যোগ্যতা, অগ্রাধিকার ও প্রকল্প প্রস্তুতির ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয়েছে। জলবায়ু ঝুঁকি ও দুর্বলতা, জনসংখ্যার ঘনত্ব, দারিদ্র্যের হার এবং প্রশাসনিক সক্ষমতা মূল্যায়নের ভিত্তিতে ৫৪টি পৌরসভা থেকে ১৯টি নির্বাচন করা হয়, যার মধ্যে সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা ও ইসলামপুর পৌরসভা সর্বোচ্চ স্কোরপ্রাপ্ত হওয়ায় প্রথম পর্যায়ে চূড়ান্তভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কেএফ ডব্লিউর সহায়তায় আন্তর্জাতিক পরামর্শকদের পরিচালিত গবেষণার ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জার্মান দূতাবাস এই নির্বাচন সম্পাদন করে। প্রকল্পটি একটি উন্মুক্ত কর্মসূচি হিসেবে পরিচালিত হবে, যেখানে পৌরসভাগুলোর দায়িত্বে উপপ্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।