
‘সরকার জনগণের কাছে আসবে। জনগণ সরকারের দ্বারে দ্বারে ঘুরবে না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররা প্রাণ দিয়েছে। কতজনের অঙ্গহানি হয়েছে। কারো চোখ নাই। এখনই আন্দোলন থেমে যাওয়া উচিত না। আমাদের আরও কষ্ট করতে হবে। দেশ থেকে আন্যায় দূর করতে হবে।’ মঙ্গলবার দুপুরে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে আয়োজিত স্থানীয় জেলে ও বাঁওড় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এসব কথা বলেন।
সভায় বক্তব্য রাখেন- ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা যশোর সরকার মুহাম্মদ রফিকুল আলমসহ স্থানীয় নেতারা। বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন জেলে ও মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের নেতারা। বিল বাঁওড় জলাশয় ইজারা মুক্ত করে নির্ভর্শীল জনগোষ্ঠীর কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলে ধরেন তারা।
এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন. বিল বাঁওড়গুলো শুধু মাত্র রেভিনিউ বৃদ্ধির নামে ভূমি মন্ত্রণালয় ইজারা দিতে পারে না। জীবন জীবিকা পরিবেশ মানুষের ক্ষতি হয় এমন কাজ করতে পারে না। ইজারা নিয়ে একটি অসাধু গোষ্ঠী লাভবান হচ্ছে। বিল বাঁওড়ের ওপর নির্ভরশীল জেলে জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকা ঝুকিঁপূর্ণ হয়ে উঠছে; যা সরকারের কাম্য নয়। দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষায় কাজ করতে হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় বিল বাওড় হাঁওড় জলাশয়ের মালিক তারা ইজরা দিয়ে দেবে। আর আমরা তখন কাতর হয়ে বলি আমাদের একটু দেন আমাদের একটু সিদ্ধান্ত নিতে দেন। এটা একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমরা সীমিত সময়ের জন্য কাজ করতে আসছি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন আমরা সবাই চাচ্ছি অবশ্যই নির্বাচন হবে। যে কোন রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করবে। স্থানীয়ভাবে জেলেদের প্রতি যে সংহতি প্রকাশ করেছেন সেটি জাতীয় পর্যায়ে হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে বলতে হবে যে জেলেদের স্বার্থে ইজারা প্রথা বাতিল করতে হবে। বহুল প্রচলিত ‘জাল যার জলা তার’ নীতিমালায় ফিরে আসতে হবে। এর আগে সকাল ১১ টার দিকে কোটচাদপুরের বলুহর বাওড় ও দেশের সর্ববৃহৎ কেন্দ্রীয় মৎস্য হেচারী পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহের জেলার ৪টি বাওড় যশোর জেলার ২টি বাঁওড় ২০২৩ সালে উন্মুক্ত ইজারা দেওয়া হয়। এর আগে ১৯৭৯ সাল থেকে বাঁওড়গুলো বিশ্বব্যংকের অর্থায়নে মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প নামে বাঁওড়গুলো ব্যবস্থাপনা করে আসছিল; কিন্তু ২০২৩ সালে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় প্রভাবশালী মহল কথিত মৎস্যজীবী সমিতির নামে ইজারা নিয়ে বাঁওড়ের দখল বাগিয়ে নেয়। অথচ বংশানুক্রমে এসব বাঁওড় থেকে মাছ ধরে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল বাঁওড়পাড়ের অন্তত ৪০ হাজার মৎস্যজীবী পরিবার। গেল দুই বছর কর্মহীন হয়ে পড়েছে তারা। বাঁওড়ের অধিকার ফিরে পওয়ার দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করে আসছে জেলা ও মৎস্যজীবী সম্প্রদায়। বিষয়টি সরেজমিন দেখতে কোটচাঁদপুর আসছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।