Image description
 

এবারের কোরবানির ঈদে বাগেরহাটে আলোচনায় বড় ষাঁড় ‘মন্টু’। ১ হাজার কেজি ওজনের এই গরুটির দাম ৬ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছেন খামারি। ব্যবসায়ীরা দামও বলা শুরু করেছেন। লম্বায় ৭ ফুট গরুটির উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি। লালচে ও কিছুটা সাদা রঙের।

গরুটির মালিক মোশারফ শেখের খামারে তিনটি গরু রয়েছে। এদের মধ্যে বড় ষাঁড় গরুটির নাম মন্টু, ঝন্টু ও পিন্টু। ষাঁড় গরুর সৌন্দর্য, ওজন ও রং লালচে-লাল এবং কালো-লাল। গরু তিনটির উপযুক্ত দাম পাবেন বলে প্রত্যাশা খামারির। বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুরের বাগদিয়া গ্রামে খামারটির অবস্থান। এ খামারে ৪ বছর আগে জন্ম হয় পাকিস্তানি শাহিওয়াল জাতের ষাঁড় মন্টু।

ষাঁড় গরু তিনটির মধ্যে বড় মন্টু, এরপর ঝন্টু ও পিন্টু এখন স্থানীয়দের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। গরু তিনটি যেন এখন আর এলাকার সবার হয়ে গেছে। কোনো খদ্দের এলেই স্থানীয়রা নিয়ে আসেন গরু দেখাতে। এত বড় গরু আশপাশে না থাকায় প্রতিদিন প্রচুর লোক আসছে গরু তিনটিকে দেখতে।

স্থানীয় মশিয়ার রহমান বলেন, মাসখানেক ধরেই প্রতিদিন কোনো না কোনো ক্রেতা আসছেন খামারে। কেউ কেউ ক্রেতা বেশে দেখতেও আসেন। এলাকায় এত বড় গরু থাকায় আমাদের ভালোই লাগে।

গরু দেখাশোনা করে নাতি বাইজিদ বলেন, আমি চার বছর ধরে আমার দাদার গরু দেখাশোনা করি। কেউ দেখতে আসলেই আমি দেখানোর জন্য বের করে দেই এবং গরুটাকে উঠিয়ে দিয়ে যায়। কারণ গরুটা আমার আর দাদার কথা ছাড়া কারও কথা শুনবে না। আসলে আমাদের যাত্রাপুর গ্রামের শ্রেষ্ঠ গরু বললেই চলে এটা।

 

খামার মালিকের স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম বলেন, গতবার বিক্রি করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু মায়ার টানে এদের বিক্রি করতে পারিনি। কিন্তু এবার ইচ্ছা আছে বিক্রি করব। এই গরু অনেক কষ্ট করে পালন করেছি। ওদের পিছনে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। আপেল, কলা ও আম যখন যে ফল হতো তখন তাই খাওয়াতাম।

তিনি বলেন, আমরা নিয়ত করছি কোরবানির জন্যই মানুষের কাছে বিক্রি করব। আসলে আমাদের একটাই ছেলে- এসব কিছু তার জন্য করব। আমাদের টাকা-পয়সা বেশি নেই। এই গরুই আমাদের সম্বল। এই গরু বিক্রি করেই আমার ছেলের খুলনা ভার্সিটির খরচ চালাব।

খামার মালিক মোশারফ শেখ বলেন, শখের বসে পাশের গ্রাম থেকে ৮৫ হাজার টাকা দিয়ে পাকিস্তানি শাহিওয়াল জাতের গরু দুধের জন্য কিনেছিলাম। গরু মোটাতাজাকরণ ও দুধের ব্যবসা শুরু করি। নিজ খামারেই জন্ম হয় মন্টু, ঝন্টু, এরপর জন্ম নেয় পিন্টু। আসলে সন্তানের মতোই এদের মানুষ করেছি। আমার ছেলে আর এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। জন্মের পর থেকে ওদের কাঁচা ঘাস, ভাতের মাড়, গমের ভুসি, খুদের ভাত ও ভুট্টাসহ দেশীয় সব খাবার খাইয়েছি। আমাদের এদের পিছনে দৈনিক ২ হাজার টাকার খাবার লাগে।

তিনি বলেন, মোটাতাজাকরণের জন্য কখনো মেডিসিন বা ইনজেকশন ব্যবহার করিনি। তারপরও আমার গরু অনেক বড় হয়েছে। গত বছরও অনেকে মন্টুর দাম সাড়ে তিন লাখ-চার লাখ টাকা বলেছে, কিন্তু বিক্রি করিনি। এবার মন্টু, ঝন্টু ও পিন্টু তিনটিকেই বিক্রি করব। আমি ১০ লাখ টাকা দাম চেয়েছি। ইতোমধ্যে দামাদামি চলছে কিন্তু আশানুরূপ দাম হচ্ছে না। আশাকরি কোরবানির আগ মুহূর্তে পছন্দমতো দামে গরু তিনটি বিক্রি করতে পারব।

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ছাহেব বলেন, বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর বাজারের বাগদিয়া গ্রামের মোশাররফ শেখ একজন ভালো খামার গরু ব্যবসায়ী। তার খামারে এ বছর তিনটি ষাঁড় গরু রয়েছে। ষাঁড় গরুর একটির আকার বেশ বড়। দেশীয় খাবারেই মোটাতাজা করা হয়েছে এদের। আশাকরি কোরবানির আগ মুহূর্তে ভালো দামেই বিক্রি করতে পারবেন।