Image description

রাজশাহী-৪ আসনের (বাগমারা) সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ জেলে থেকেও পুকুর কাটানোর কাজ করাচ্ছেন। স্থানীয় লোকজন বলছে, পরের জমি দখল করে পুকুর কাটানো তাঁর নেশায় পরিণত হয়েছিল। তাই নিজ এলাকাসহ আশপাশে তিনি ভেকু কালাম নামেই পরিচিতি পেয়েছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি এখন দিনাজপুর কারাগারে আছেন।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি হিসেবে কালামের মেয়াদ ছিল মাত্র সাত মাস। এর আগে তিনি তাহেরপুর পৌরসভার মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন পর পর তিনবার। তিনি ছিলেন পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। একাধিকবার অস্ত্রসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারও হন। তাঁর নিজের মালিকানায় আছে ২০০ বিঘা আয়তনের ৩০টি পুকুর। ইজারা নিয়ে প্রায় ৫০০ বিঘা পুকুরে মাছ চাষ করেন কালাম। চড়তেন টয়োটা কম্পানির ল্যান্ড ক্রুজার ব্র্যান্ডের গাড়িতে। কালামের নিয়ন্ত্রণে ছিল দক্ষিণ বাগমারা বলে পরিচিত তাহেরপুর ও গোয়ালকান্দি।

জানা গেছে, কালামের লোকজনের পুকুর খননসহ যেকোনো অন্যয়ের প্রতিবাদ করতে গেলে নিপীড়ন নেমে আসত প্রতিবাদকারী বা তার পরিবারের লোকজনের ওপর। জমি দখলে নিতে খুন করতেও দ্বিধা ছিল না কালামের। অভিযোগ রয়েছে, নিয়মবহির্ভূতভাবে বাগমারার বিভিন্ন স্থানে হাজার বিঘার সমান বিভিন্ন পুকুর খনন করিয়েছেন তিনি। অপকর্মে সহযোগিতার জন্য তিনি তাঁর ভাতিজা যুবলীগ ক্যাডার হাবিবুর রহমান হাবুকে সঙ্গে রাখতেন। বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌর এলাকায় গড়ে তুলেছিলেন ত্রাসের রাজত্ব ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাগমারার খয়রা বিলে ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর খুনের শিকার হন শ্রীপুর ইউনিয়নের খামারপাড়া গ্রামের জাবেদ আলীর ছেলে আশরাফুল (২৮)। এ মামলার বাদী ও নিহতের ছোট ভাই জাকিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, আমার ভাইকে খয়রা বিলে কালাম নিজে দাঁড়িয়ে থেকে হুকুম দিয়ে মোকবুল চেয়ারম্যানকে দিয়ে গুলি করান। আমি পরদিন এই দুজনের নামে বাগমারা থানায় মামলা করি। মোকবুলকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলা করার পর কালাম ক্ষমতার জোরে পুলিশ দিয়ে আমাকে নির্যাতন করেছিলেন তাঁদের নাম এজাহার থেকে বাদ দেওয়ার জন্য। আমাদের তিন বিঘা জমি দখল করে মাছ চাষ করতেন কালাম ও মোকবুল। এ নিয়ে কথা বলায় তাঁরা আমার ভাইকে খুন করেন।

তাহেরপুর পৌর এলাকার দুলাল নামের ভুক্তভোগী বলেন, কিছুদিন আগে তাহেরপুরে কালাম আমার ভাইয়ের দেওয়া জমি লিখে নিতে চাইলে আমি তা দিতে রাজি হইনি। এ কারণে তাঁর লোকজন আমাদের দুটি বাড়ির আটটি ঘর ভেঙে ফেলে এবং বাড়ির মালপত্র লুটপাট করে। এলাকা ছেড়ে এক মাস পালিয়ে পালিয়ে বেড়াই। পরে জোর করে আমার জায়গা দখল করে মার্কেট তোলেন কালাম।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দিন সকালে কালামের নেতৃত্বে স্থানীয় ভবানীগঞ্জ বাজারে সশস্ত্র তাণ্ডব চালায় কালামের অনুসারীরা। সেদিন গুলিবিদ্ধ হন মনসুর। মনসুর কালের কণ্ঠকে বলেন, কালামের লোকেরা আমাকে ধরে হকিস্টিক দিয়ে পেটানোর পর ডান পায়ে গুলি করে। হামলার শিকার অরেকজন মো. শিমুল বলেন, মনসুর ভাইয়ের মতো আমাকেও তারা মারধর করে। পালিয়ে যাওয়ার সময় কালামের উপস্থিতিতেই তাঁর লোকজন ধরে আমার পায়ে চায়নিজ কুড়াল দিয়ে কোপ মারে।