Image description
পলিথিন ও কাপড় দিয়ে তৈরি ঘরে ভবঘুরেদের আস্তানা প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড

রাজধানী ঢাকাবাসীর যোগাযোগে স্বস্তি দিয়েছে মেট্রোরেল। মতিঝিল থেকে উত্তরাগামী মানুষের জন্য ভোগান্তি কমিয়েছে বহুলাংশে। এক সময় এই পথ পাড়ি দিতে নগরবাসীকে তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হতো। এখন মেটোরেলে মাত্র ৩১মিনিট। কিন্তু মেট্রোর যাত্রীদের স্বস্তি দিলেও মেট্রোরেলের নিচের যাত্রী ও পথচারীরা যাতায়াত করেন আতঙ্কের মধ্যে। মতিঝিল থেকে উত্তরার পথে মেট্রোর নিচের সড়ক দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে আস্তানা গেড়েছে নেশাগ্রস্তরা। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট পথচারী ও স্থানীয়রা।

এই নেশাগ্রস্তদের আক্রমনে প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা অপরাধমূলক কর্মকা-। ঘটছে ধর্ষণের মতো ঘটনাও। মেট্রোরেল লাইনের নিচের ফাঁকা জায়গায় গাছ লাগানোর জন্য নির্ধারিত ছিল। প্রথম দিকে কিছু গাছপালাও লাগানো হয়েছিল। কিন্তু স্বল্প সময়ের ব্যবধানে সেগুলো ফেলে দেয়া হয়েছে। নষ্ট করে ফেলেছে নেশাগ্রস্তরা। মেট্রোরেলের নিচের স্থানগুলো এখন নেশাগ্রস্তদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পলিথিন ও কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ঘর। সেই ঘরে গাদাগাদি করে বসবাস করছে নেশাগ্রস্তরা। বিভিন্ন ধরনের কাপড় ও পলিথিন দিয়ে তৈরি ছোট ছোট ঘরে বসবাস করছে ভবঘুরেরা। দিনের বেলায় সেখানে তারা ঘুমায় আর রাতে চলে মাদক সেবনের আড্ডা। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই, চুরি, মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকা-ও চালায় তারা। তাদের কাঁথা-বালিশ, হাঁড়ি-পাতিল সবই রয়েছে। এক একটি ঘরে একাধিক ব্যক্তিকে দেখা যায়। কেউ ঘুমায় আবার কেউ মাদক সেবনের প্রক্রিয়া করছে। দিনের বেলায় এই স্থানগুলোতে বেশিরভাগ লোককে ঘুমিয়ে থাকতে দেখা যায়। আর রাতে তারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়ায়।

মেট্রোরেলের নিচের এলাকাগুলোতে ভাসমান মানুষের অবস্থান, সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের পাশের সড়কগুলোতে সাধারণ মানুষ চলাচল করার কথা থাকলেও ফুটপাথে বসেছে অসংখ্য দোকানপাট। এসব অস্থায়ী দোকানপাটের কারণে সাধারণ মানুষের চলাচলে আরো সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে এমনটাই জানালেন যাত্রীরা।
যাত্রীরা বলেন, দয়া করে স্টেশনের দিকে নজর দিন। স্টেশনের নিচের পুরো এলাকা ভাসমান মানুষের দখলে চলে যাচ্ছে। প্রতিটি পিলারে পোস্টার লাগানো হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মেট্রোর সৌন্দর্য নষ্ট হতে সময় লাগবে না। যারা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছেন, তারা কী করছেন, এর প্রতিকার কি নেই?

এর আগে শাহবাগ এলাকায় মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে ধর্ষণের শিকার হয় ১০ বছরের এক পথশিশু। আরেক পথশিশু জানায়, ওই শিশু শাহবাগ এলাকায় ফেরি করে ফুলের মালা বিক্রি করে। রাতে মেট্রো স্টেশনের নিচে একটি শিশুটির চিৎকার শুনে অনেক লোকজন জড়ো হয়। সেখানে গিয়ে দেখি ওই শিশু রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আর ওই ছেলেকে লোকজন ধরে রেখেছে। পরে থানা-পুলিশের মাধ্যমে শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

মেট্রোরেলের নিচের এই বাসিন্দারা কোনো কিছু পরোয়াও করে না। পথচারীদেরও এসব স্থান দিয়ে চলাচল করতে হয় ভয়ে ভয়ে। মেট্রোরেলের নিচের অংশের পরিবেশ সুন্দর রাখতে এর নিচের সড়ক বিভাজকে নানা জাতের বৃক্ষরোপণ করেছিল ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। মেট্রোরেলের মাঝখানের এই বিভাজক জুড়ে লাগানো এসব গাছ প্রথম দিকে বেশ নান্দনিক হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ছিন্নমূল মানুষের আগ্রাসনে বর্তমানে অনেক গাছই নষ্ট হয়েছে। ফুটপাথে অস্থায়ী দোকান, পথশিশু ও আবর্জনার স্তূপের ভিড়ে যাত্রীদের চলাচল করাই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। নিচের ফুটপাথের বিভিন্ন স্থানে বসে পড়েছে অস্থায়ী দোকান। মেট্রোর স্টেশনগুলোর নিচে চলছে অস্থায়ী ভাতের হোটেল, রিকশা গ্যারেজ। এমনটাই জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা ও মেট্রোর নিয়মিত যাত্রীরা।

মতিঝিল মেট্রো স্টেশনে বেসরকারি চাকরিজীবী নাসরিন আক্তার বলেন, আমি নিয়মিত মতিঝিল থেকে মিরপুর যাতায়াত করি। মেট্রো স্টেশনের উপরে কোনো ঝামেলা না থাকলেও নিচের সড়কে সমস্যা থেকেই থাকে। ভিক্ষুক, হকার, ছিন্নমূল মানুষের আনাগোনায় অস্থির থাকতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উচিত নিচের অংশেও নজর দেয়া।
ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬) এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. জাকারিয়া ইনকিলাবকে বলেন, মেট্রোরেলের নিচের বেশ কিছু স্থানে ভবঘুরে লোকজন ঘর বানিয়ে পরিবেশ নষ্ট করছে। মেট্রোরেলের নিচের অংশে ভবঘুরেদের বসবাসের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ইতোমধ্যে আমরা বেশ কয়েকবার সিটি করপোরেশন ও আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের অবহিত করেছি। সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও আইনশৃঙ্খলায় যারা নিয়োজিত তারা তৎপর হলে সমস্যার সমাধান হবে আশা করছি।