Image description

জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ধার্য ছিল বিয়ের দিনক্ষণ। বর চট্টগ্রামের পটিয়ার সন্তান। ভবিতব্য স্বামীর আমন্ত্রণে বিয়ের কেনাকাটা করতেই যাওয়া হচ্ছিল চট্টগ্রামে। কিন্তু যাত্রার অল্পক্ষণের মাথায় সব শেষ। সড়ক দুর্ঘটনায় পরপারের বাসিন্দা হলেন কক্সবাজারের রামু পূর্ব রাজারকুলের রিমঝিম বড়ুয়া (২৩)।

সোমবার (১৬ জুন) সকালে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামুর রশিদনগর ধলিরছড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত রিমঝিম বড়ুয়া রামু পূর্ব রাজারকুলের হিমাংশু বড়ুয়ার মেয়ে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গত ১৬ মে দু’পরিবারের লোকজনের উপস্থিতিতে রিমঝিম ও পটিয়ার ভান্ডারগাঁও এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী সানি বড়ুয়ার বাগদান হয়।

ইউপি সদস্য স্বপন বড়ুয়া তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আগামী ৫ জুলাই রিমঝিমের বিয়ের দিন ধার্য ছিল। বিয়ের বাজার করতে তিনি চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

 

এদিকে একই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বাবা-ছেলে। এগারো বছরের ছেলে হাফেজ রিয়াদকে প্রসিদ্ধ আলেম বানানোর স্বপ্নে হাটহাজারি মাদরাসায় পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী বাবা হাবিবুল্লাহ। বুকে কোরআন শরীফ ঝুলানো অবস্থায় বাবাসহ প্রাণ যায় শিশু রিয়াদের। এদিন বেলা ১১টার দিকে তাদের মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আনা হলে স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ।

jagonews24

পিএমখালী ইউপির দক্ষিণ পাতলি এলাকার সদস্য ও নিহত হাবিবউল্লাহর ফুফাতো ভাই গিয়াস উদ্দিন জানান, হাবিবুল্লাহ পিএমখালীর দক্ষিণ পাতলী এলাকার বাসিন্দা হলেও দীর্ঘদিন ধরে রামুর চৌমুহনিতে হাবিব বস্ত্র বিতান নামে কাপড়ের দোকান করতেন। ঈদের ছুটি শেষে রিয়াদকে হাটহাজারি মাদরাসায় নিয়ে যাচ্ছিলেন হাবিবুল্লাহ। কিন্তু পথিমধ্যেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলে নিহত হল। হাফেজ হওয়া ছেলেটাকে বড় আলেম হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন বাবা হাবিব।

পুলিশ, স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সোমবার সকালে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পূরবী পরিবহনের একটি বাসে রামুর কাউন্টার থেকে ওঠেন রিমঝিম বড়ুয়া, হাবিবুল্লাহ ও ছেলে রিয়াদসহ আরও বেশ কয়েকজন যাত্রী। তাদের বহন করা গাড়িটি উপজেলার রশিদনগর জেটিরাস্তার মাথা মোড়ে পৌঁছালে বিপরীত দিক হতে আসা কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। খেই হারিয়ে সড়ক থেকে ছিটকে বাসটি রাস্তার পাশের খাদে উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হন তিনজন। আহত অবস্থায় যাত্রী, চালক, হেলপারসহ আনুমানিক ২০-২৫ জনকে উদ্ধার করে স্থানীয় ক্লিনিক ও বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পরে নিহতরা রিমঝিম, হাবিবুল্লাহ ও রিয়াদ বলে শনাক্ত হয়।

রামু থানার ওসি তৈয়বুর রহমান জানান, খবর পেয়ে থানা ও হাইওয়ে পুলিশ এবং দমকল বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যায়। তারা মরদেহগুলো উদ্ধার করে। আহতদের পুলিশ ও স্থানীয়রা বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যান। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গাড়ি দুটি জব্দ করেছে হাইওয়ে পুলিশ।

গত ২৩ মে মহাসড়কের রামুর রশিদনগরের জেটিরাস্তা, জোয়ারিয়ানালা মুরাপাড়া, গুচ্ছগ্রাম এলাকায় পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে নারী-পুরুষ, শিশুসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।

 

পর্যটন খাতের প্রসারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি প্রয়োজনের তুলনায় সরু। বিগত পতিত সরকারের আমলে এটি প্রশস্ত করণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কাজ শুরু হয়নি। তাই সরু সড়কটির চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এলাকায় প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনায় নিভে যাচ্ছে প্রাণ প্রদীপ। মরণফাঁদে পরিণত হয়ে উঠেছে সড়কটি।