
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত ৪ আগস্ট মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন মোহাম্মদ ইমরান। এরপর দীর্ঘদিন হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে বাড়ি ফেরেন। তবে সম্পূর্ণ স্মৃতি ফিরে পাননি তিনি।
এখনো শুকায়নি তার মাথায় গুলির ক্ষতচিহ্ন। তার চিকিৎসার খরচ জোগাতে পরিবারের আয়ের একমাত্র সম্বল অটোরিকশা বিক্রি করে দেন বাবা বিল্লাল। তার বাবার আয়ে চলত ছোট ভাই-বোনের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের যাবতীয় ব্যয়। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে ইমরানের পরিবারের। এখন ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে পরিবারটিকে।
জানা যায়, ইমরানের বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়নের তারতাপাড়া গ্রামে। তিনি এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তার পরিবারে মা-বাবা, দুই ভাই-বোন ও বৃদ্ধা দাদি রয়েছেন। তিনি ভাই-বোনদের মধ্যে বড়। তার বাবা বিল্লাল পেশায় রিকশাচালক। তাদের বসতঘরের জায়গা ছাড়া চাষযোগ্য কোনো জমি নেই। অভাব-অনটনে পড়ে পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন ইতালিতে। এজন্য স্থানীয় এক দালালের কাছে টাকা ও পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলেন। ইতালি যেতে আরো বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে তাই তিনি আশুলিয়ার বাইপাইলে একটি কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরি নেন। এ সময় আন্দোলন শুরু হলে তিনি এতে যোগ দেন।
আরো জানা যায়, ৪ আগস্ট আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্র-জনতার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সে সময় পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা আন্দোলনকারীদের লক্ষ করে গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছোড়া একটি গুলি ইমরানের মাথার অগ্রভাগের খুলিতে লাগে। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আন্দোলনকারীরা ইমরানকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলেও তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। পরে ইমরানকে আশুলিয়া মা ও শিশু হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ইমরানের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা সাড়ে ৪ ঘণ্টা চেষ্টার পর ইমরানের মাথা থেকে গুলি বের করতে সক্ষম হয়। ইমরানের শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ২৫ দিন পর সিএমএইচ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিন মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর কিছুটা সুস্থ হলে বাড়িতে ফেরেন। অন্যদের সহায়তায় চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরলেও বাবার আয়ের শেষ সম্বল রিকশাটি বিক্রি করে দিতে হয় ইমরানের চিকিৎসার জন্য। এখন অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারটি।
ইমরানের বাবা বিল্লাল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পরিবারের আয়ের উৎস ছিল আমার রিকশা আর ছেলের সামান্য আয়। ছেলের চিকিৎসার জন্য রিকশাটি বিক্রি করে দিয়েছি। এখন পরিবার নিয়ে চলতে পারছি না। স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। ইমরানকে চিকিৎসা করাতে প্রায় ৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে চার লাখসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে আরো ৩৩ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। আমি সরকারের কাছে ছেলের সুচিকিৎসার দাবি জানাই। আমার ছেলে সুস্থ হলে সবই হবে। আমাদের দুঃখ-কষ্ট কিছুই থাকবে না। সরকারের কাছে আবেদন, যারা আমার ছেলেকে গুলি করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।