Image description
 

ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে আবারও বাড়ছে পুশ-ইনের ঘটনা। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। সীমান্তজুড়ে শতাধিক মানুষকে বাংলাদেশে প্রবেশ করিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। ফলে সীমান্ত অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ, শঙ্কা আর নিরাপত্তাহীনতা।

গত পরশু রাতে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম সীমান্তে ভারতের পক্ষ থেকে আবারো একটি পুশ-ইন ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর বিজিবি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। বর্তমানে তারা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে এবং তাদের বিষয়ে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া চলছে বলে জানানো হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, আটককৃতদের দাবি করা ঠিকানা ও আদি নিবাস অনুসারে তারা সত্যিই বাংলাদেশি কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে। তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সনদপত্রের মাধ্যমে নাগরিকত্ব নিশ্চিতের প্রক্রিয়া চলছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে উপরমহলের নির্দেশ অনুযায়ী।

 

আটক ব্যক্তিদের অনেকে জানিয়েছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের গুজরাটসহ বিভিন্ন রাজ্যে বসবাস করছিলেন। কেউ রমজানের ঈদের পর ভারতে গিয়েছিলেন, কেউ দুই বছর, কেউ চার বছর, কেউ বা পাঁচ থেকে দশ বছর পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেছেন। তাদের ভাষ্যমতে, গত মাস থেকেই বাংলাদেশ-ভারত রাজনৈতিক উত্তেজনার পরপরই ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান শুরু করে।

 

তারা আরো দাবি করেছেন, ইতোমধ্যে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশিকে বিভিন্ন রাজ্য থেকে আটক করা হয়েছে। এসব ব্যক্তিদের এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হেফাজতে রেখে পরবর্তীতে বিমানে করে সীমান্তবর্তী এলাকায় এনে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হচ্ছে।আটক ব্যক্তিদের সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, পুলিশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে।

এদিকে, পঞ্চগড় জেলার তিনটি উপজেলা ভারত বেষ্টিত হওয়ায় সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যা সেখানে প্রায়ই মাথাচাড়া দেয়। জেলার প্রায় ২০০ কিলোমিটারজুড়ে ভারতীয় সীমান্তঘেরা রয়েছে, যার মধ্যে অনেক এলাকায় এখনো কাঁটাতারের বেড়া নির্মিত হয়নি। এসব এলাকা দিয়ে চোরাচালান থেকে শুরু করে অনাকাঙ্ক্ষিত নানা ঘটনার সৃষ্টি হয়, যা সীমান্ত নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। গত বছর চোরাচালানকেন্দ্রিক সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

সীমান্তে পুশ-ইনের ঘটনা চলমান রয়েছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন সীমান্তপথে পুশ-ইনের কারণে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে গত ১৭ মে ১১ জন এবং পরশু রাতে খুলনার নড়াইল জেলার অন্তত ২১ জন নারী, শিশু ও পুরুষকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, ভারতীয় পক্ষ নিয়ম বহির্ভূতভাবে এই কাজ করছে। সঠিক চ্যানেলে ও আইনি প্রক্রিয়ায় যদি এসব মানুষকে হস্তান্তর করা হতো, তাহলে এমন অস্থিরতা তৈরি হতো না। বিশেষ করে সীমান্তে ভারতীয় বাহিনী রাতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সার্চলাইট ব্যবহার করে পাহারা দিলেও পুশ-ইনের সময় তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।ফলে সীমান্তবর্তী জনপদের মানুষ এখন উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। রাতের অন্ধকারে এমন অনুপ্রবেশের আশঙ্কা থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে নিরাপত্তাহীনতা। বিজিবি জানিয়েছে, স্থানীয় গ্রামপুলিশ ও জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে সীমান্ত পাহারার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সীমান্তের মানুষ বলছে, সীমান্ত নিরাপত্তা আরও জোরদার না করলে এই উৎকণ্ঠা দূর হবে না। তারা চান স্থায়ী ও সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে আনা হোক, যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত এসব ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।