
গত ৭ জানুয়ারির বিতর্কিত একতরফা নির্বাচনের প্রধান কারিগর হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হাবিবুল আউয়াল আদালতে উপস্থিত হয়ে দেওয়া বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিতর্কিত নির্বাচনের প্রধান কারিগরের আদালতে দেওয়া বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল।
আদালতে দেওয়া বক্তব্যে বিতর্কিত সিইসি হাবিবুল বলেন, ‘এত ভয়ংকর নির্বাচন হবে জানলে দায়িত্বই নিতাম না।’
তবে এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে সাংবাদিক কামাল বলেন, একজন অভিজ্ঞ সচিব ও নির্বাচন কমিশনার হয়ে তিনি জানতেন না নির্বাচনের অবস্থা কী হবে—এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা মনে হয়েছে।
মাসুদ কামাল আরো বলেন, তিনি যদি সত্যিই নির্বাচন পরিস্থিতি বুঝতে না পারতেন, তাহলে দেশের একজন সচেতন নাগরিকও তা বুঝতে পারতেন না। যেই নির্বাচনে বিরোধী দল নেই, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বলছেন ‘সবাই আমার দলের লোক’—সেখানে কিসের গণতন্ত্র?
আদালতে সিইসি হাবিবুল আউয়াল আরো জানান, এক বন্ধু তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কেন পদত্যাগ করেননি। উত্তরে তিনি বলেন, ‘সেই অবস্থায় পদত্যাগ সম্ভব ছিল না।’
তবে বিশ্লেষক কামালের মতে, তিনি পদত্যাগ করে লিখে দিতে পারতেন, ‘এই নির্বাচন জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না।
এ ছাড়া সাবেক সিইসি বলেন, ১৯৭৩ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু ছিল না এবং শেখ মুজিব ক্ষমতার লোভ সামাল দিতে পারেননি। এই বক্তব্যে প্রসিকিউটর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘এভাবে নিজেকে জাস্টিফাই করার সুযোগ নেই।
মাসুদ কামাল মনে করেন, এ ধরনের বক্তব্যে একদিকে যেমন সিইসি হিসেবে তার ব্যর্থতা প্রমাণিত হয়, অন্যদিকে তিনি নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্বের বিষয়টিও তুলে ধরেন। হাবিবুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের হাতে প্রশাসন নেই, প্রশাসন যেভাবে চাইবে রেজাল্ট দেবে।’
এ প্রসঙ্গে মাসুদ কামাল বলেন, এটা এক মিলিয়ন ডলারের বক্তব্য। ভবিষ্যতের নির্বাচনও এমনই হবে—যে দল ক্ষমতায় থাকবে, প্রশাসন চাপে পড়ে সেই দলের হয়ে কাজ করবে।
এ ছাড়া সাবেক সিইসি আদালতকে বলেন, ‘মৌলিক সংস্কার ছাড়া আগামী ১০০০ বছরেও বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে সাংবাদিক কামাল প্রশ্ন তোলেন, ‘এই সংস্কারের কাজ কে করবে? হাবিবুল সাহেব বলেননি, আমরাও জানি না।’
বর্তমান সরকারের সংস্কারের বিষয়ে কামাল বলেন, ড. ইউনূস যেভাবে সংস্কার করছেন এর মাধ্যমে মৌলিক পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। আসলে পরিবর্তনটা আসতে হবে জনগণের মাঝখান থেকে। সেই পরিবর্তনটা আনার জন্য যে পরিবেশ বা মানসিকতা তৈরি করা দরকার, সেই জিনিসটা গত ১০ মাসে ড. ইউনূস এক ইঞ্চিও করতে পারেননি।’
আগামী জাতীয় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তি নিয়ে মাসুদ কামাল বলেন, ‘যে ব্যক্তি বলে আগামী নির্বাচন হবে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্বাচন, সে ব্যক্তি ইতিহাস, নির্বাচন এবং শ্রেষ্ঠ—এই তিনটির কোনোটাই বোঝেন না।’