
পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের তিনটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করা নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। বিশেষ করে সুচিত্রা সেনের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে “জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস” নামকরণ করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন অনেকেই। পাবনার সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, পাবনার সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ মধু বলেন, “এটি কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। সুচিত্রা সেন এই উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত অভিনেত্রী এবং পাবনাবাসীর গর্ব। তিনি যেহেতু সকল ধরনের রাজনীতির উর্ধ্বে, সেহেতু তার নামে করা হলের নাম পরিবর্তন করার কোনো প্রয়োজন নেই। এটি পাবনাবাসীর জন্য লজ্জাজনক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিরুপ প্রভাব পড়বে। আমরা চাই ওই ছাত্রীনিবাসের নাম সুচিত্রা সেনের নামে পুনরায় বহাল করা হোক।”
জেলার অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন পাবনা ড্রামা সার্কেলের সাবেক সভাপতি ও আমেরিকা প্রবাসী সাংস্কৃতিক সংগঠক গোপাল সান্যাল তার ফেসবুক পোস্টে এক প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, “পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাসের নাম পাল্টে দেওয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাবনার সংস্কৃতিপ্রেমী জনতা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করবে বলে আমার বিশ্বাস।”
পাবনার একুশে বইমেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র সংসদ, পাবনার সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, “শিল্প-সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে ভিত্তি করেই এই ছাত্রীনিবাসের নাম রাখা হয়। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নাম বাদ দিয়ে সেখানে অন্য একজনের নামে নামকরণ করা এটা খুবই গর্হিত কাজ। এটা শিল্প সংস্কৃতিকে অপমান করা হয় বলে মনে করি।”
এদিকে, পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল আউয়াল মিয়া বলেন, “প্রথমে যখন নামকরণ করা হয়, তখন একাডেমিক কাউন্সিলের অধিকাংশ সদস্য এই নামকরণের (সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাস) পক্ষে ছিলেন না। তখনকার অধ্যক্ষ বলেছিলেন যে, এটা পার্শ্ববর্তী একটি দেশের চাপে করতে হচ্ছে। এটা তৎকালীন একটা পলিটিক্যাল গ্রুপ তারা তখনকার প্রেসার গ্রুপ ছিল, তারা তাদের পলিটিক্যাল টার্গেটে এই নামটা ঢুকিয়েছিল এডওয়ার্ড কলেজের মধ্যে।”
অধ্যক্ষ আরও বলেন, “বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজ পর্যন্ত ছাত্রাবাস, ছাত্রীবাস, হল কোনো নায়িকার নামে নাই। সুচিত্রা সেন আমাদের দেশের নাগরিকও নয়। কেন এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্রীদের হলে তার নাম আনা হলো, এই নিয়ে তখনকার কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলে তীব্র প্রতিবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের সেই প্রতিবাদ সেদিন টেকে নাই। অধ্যক্ষ তখন চাপে পড়ে এই নামকরণ (সুচিত্রা সেন ছাত্রী নিবাস) প্রস্তাব করেছিলেন বলে তিনি তখন জানিয়েছিলেন।”
আব্দুল আউয়াল মিয়া আরও বলেন, “এবার যখন সুযোগ পেয়েছে একাডেমিক কাউন্সিল, তখন তারা প্রস্তাব করে বলেছে ওই সময় আমাদের চাহিদাটা পূরণ করতে পারিনি। এখন নতুন প্রশাসনের কাছে, নতুন বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আমরা এ দাবি করছি, এই নামটা আমরা পরিবর্তন চাই। তখন সকল শিক্ষকের, একাডেমিক কাউন্সিলের সকল সদস্যের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তী সভায় নতুন নাম (জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস) প্রস্তাব করা হয় এবং সবাই একমত হন।”
তিনি বলেন, “এখানে যারা স্টেকহোল্ডার তাদের সম্মতি নিয়ে, ছাত্র সংগঠনের সম্মতি নিয়ে, ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে এবং হলের আবাসিক ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সম্মতির ভিত্তিতে এই নতুন নামকরণ করা হয়েছে। এখন যারা সাংস্কৃতিক সংগঠনের নামে ভিন্ন কথা বলছেন, তাদের একটি নির্দিষ্ট বলয়ের চিন্তা-ভাবনারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি।”
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের তিনটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করা হয়। কলেজের শেখ রাসেল ছাত্রাবাসের পরিবর্তিত নাম “বিজয় ২৪ হল”, বেগম ফজিলাতুন্নেছা ছাত্রীনিবাসের পরিবর্তিত নাম “আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) ছাত্রীনিবাস” এবং সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাস এর পরিবর্তিত নাম “জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস” নামকরণ করা হয়।