
দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চলতি মাসে ভারত রোহিঙ্গাসহ অন্তত সাড়ে ৩০০ ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ (ঠেলে পাঠানো) করেছে। এ ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশ অন্তত চারবার চিঠি দিয়েছে ভারতকে। চিঠিতে পুশ ইনের পুনরাবৃত্তি বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের এসব অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করে ভারত বলেছে, তারা বাংলাদেশিসহ অবৈধ বিদেশিদের বিষয়টি স্থানীয় আইন ও রীতি অনুযায়ী মোকাবিলা করছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে গতকাল বুধবার দেওয়া এক চিঠিতে ভারত এ দাবি করে। পাশাপাশি দ্রুত পরিচয় যাচাই করে ২ হাজার ৪৬১ ব্যক্তিকে ফেরত নিতে ভারতের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো গতকাল সন্ধ্যায় একটি জাতীয় দৈনিককে এ তথ্য জানায়।
চার দফার চিঠিতে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে বলেছে, পুশ ইনের পদক্ষেপগুলো গভীর উদ্বেগের, যা চূড়ান্তভাবে সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে এবং জনমনে নেতিবাচক মনোভাবও তৈরি করছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ মাসে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত অন্তত ৩৭০ জনকে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে। গতকাল বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের কাছে সাংবাদিকেরা জানতে চেয়েছিলেন, ভারত থেকে পুশ ইন করা ব্যক্তিদের বাংলাদেশ পুশ ব্যাক (ফেরত পাঠানো) করবে কি না। উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত আমার কাছে এখন পর্যন্ত নেই। আমরা সাধারণত পুশ ব্যাক করি না। তবে বিষয়টি হলো, যারা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণিত, তাদের অবশ্যই ফেরত নিতে হবে।’
পুশ ইনের বিষয়ে দিল্লিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং এটি বন্ধে বাংলাদেশ যোগাযোগ করছে কি না, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘দিল্লির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে এবং আমরা চেষ্টা করছি নিয়মের বাইরে যেন কিছু না ঘটে।’
বাংলাদেশের পাঠানো প্রথম চিঠির জবাবে ভারত ১৫ মে একটি চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, কোনো প্রমাণ ছাড়া বাংলাদেশ যে অভিযোগ করছে, তা ভারত প্রত্যাখ্যান করে।
ঢাকার চার চিঠিতে সাড়া নেই: ভারত ৪ ও ৭ মে দেশের কয়েকটি জেলার সীমান্ত দিয়ে প্রায় ২০০ ব্যক্তিকে পুশ ইন করে। এর পর থেকে বিষয়টি সুরাহার জন্য বাংলাদেশ অন্তত চারবার ভারতকে কূটনৈতিক পত্র দেয়। যদিও পুশ ইন থামেনি।
৮, ১৩, ১৫ ও ২০ মে পাঠানো চার দফার চিঠিতে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে বলেছে, পুশ ইনের পদক্ষেপগুলো গভীর উদ্বেগের, যা চূড়ান্তভাবে সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে এবং জনমনে নেতিবাচক মনোভাবও তৈরি করছে। পুশ ইনের ওই পদক্ষেপগুলো ১৯৭৫ সালের সীমান্ত কর্তৃপক্ষের জন্য যৌথ ভারত-বাংলাদেশ নির্দেশিকা, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) ২০১১ এবং বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের আলোচনায় দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্মত সিদ্ধান্তের পরিপন্থী।
ভারতের কাছে পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়, কোনো ব্যক্তির নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বিদ্যমান প্রক্রিয়া মেনে বাংলাদেশ তাঁদের ফেরত নেবে। এর ব্যত্যয় হলে দুই দেশের বোঝাপড়ার মধে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে। একইভাবে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশের পরিবর্তে তাঁদের আদি নিবাস মিয়ানমারেই ফেরত পাঠানো উচিত ভারতের। কোনোভাবে ভারতীয় নাগরিকদের জোর করে বাংলাদেশে পুশ ইন করাটা উচিত হবে না। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে এ ধরনের পুশ ইন অগ্রহণযোগ্য এবং তা পরিহার করা উচিত।
চিঠিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারতকে পুশ ইনের পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে বলেছিল বাংলাদেশ। পাশাপাশি পুশ ইনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছিল।
ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে ইতিপূর্বে পাঠানো ২ হাজার ৪৬১ ব্যক্তির পরিচয় যাচাইয়ের বিষয়টি ঝুলে আছে। অবিলম্বে বাংলাদেশের নাগরিকদের পরিচয় যাচাইপ্রক্রিয়া শেষ করা জরুরি।
শেষ চিঠিতে যা বলেছে দিল্ল : বাংলাদেশের পাঠানো প্রথম চিঠির জবাবে ভারত ১৫ মে একটি চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, কোনো প্রমাণ ছাড়া বাংলাদেশ যে অভিযোগ করছে, তা ভারত প্রত্যাখ্যান করে।
বাংলাদেশ ২০ মে আবার পুশ ইন বিষয়ের সুরাহার জন্য চিঠি দেওয়ার পর ২১ মে পাল্টা কূটনৈতিক পত্র দিয়েছে ভারত। দেশটি আবার বাংলাদেশের বক্তব্য এবং অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। উল্টো ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে ইতিপূর্বে পাঠানো ২ হাজার ৪৬১ ব্যক্তির পরিচয় যাচাইয়ের বিষয়টি ঝুলে আছে। অবিলম্বে বাংলাদেশের নাগরিকদের পরিচয় যাচাইপ্রক্রিয়া শেষ করা জরুরি।
বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘তারা তাদের অবস্থান কিছুটা জানিয়েছে। আমরা আমাদের অবস্থান তাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছি, এভাবে দেওয়াটা (ঠেলে পাঠানো) ঠিক না, এটা আমরা তাদের বোঝাচ্ছি। আমরা বলছি যে আমাদের একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (মানসম্মত পরিচালনা ব্যবস্থা) আছে। সেই প্রসিডিওর অনুযায়ী আমরা যাব। তারা তালিকা দিয়েছে। আমরা সেই তালিকাগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করছি।’
উৎস: প্রথম আলো।