Image description
 

বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ইসি পুনর্গঠন ছাড়া এনসিপি কোনো ভোট করতে দেবে না। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে। আমরা যতদিন বেঁচে আছি, এই কমিশন পুনর্গঠন করে ছাড়বই। 

নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন এবং অবিলম্বে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এ কথা বলেন তিনি। সমাবেশে দেড় শতাধিক এনসিপি নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। 

 
 

আগের দিন মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা দেন সংগঠনের মহাসচিব আখতার হোসেন। এনসিপির ঢাকা মহানগর শাখা এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে আগতরা বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে এনসিপি নেতারা বলেন, ‌‘২০২২ এর আইনের অধীনে এ ইসি গঠন করা হয়। এনসিপি চায়, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নতুন ইসি গঠন করতে হবে। অবৈধ নির্বাচনের মেয়র কীভাবে বৈধ হয়? প্রশ্ন রেখে অবিলম্বে ইসি পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি জানান এনসিপি নেতারা। অন্যথায় তারা নির্বাচন বর্জন করবেন। 

বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকেই এনসিপির বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় সেখানে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়। সকাল থেকেই পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যদেরও নির্বাচন ভবনের সামনে মোতায়েন করা হয়েছিল। ভবনের সামনের রাস্তায় বসানো হয়েছিল কাঁটাতারের ব্যারিকেডও। বিক্ষোভ সমাবেশে রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকার প্রতিনিধিদের বক্তব্য শেষে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বক্তব্য দেন।  

সমাপনী বক্তব্যে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিএনপির দলীয় কার্যালয় হিসেবে কাজ করছে। রক্তের ম্যান্ডেড নিয়ে বিএনপির পক্ষে কাজ করতে পারেন না। ইসিকে আগে স্থানীয় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিভিন্ন জায়গা দালাল চক্র দখল করছে। উপদেষ্টা প্যানেল থেকে বিএনপিপন্থীদের বের করে দেন, আমরা দেখতে চাই। বিএনপির লাশের রাজনীতি শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের টাকায় বিএনপি বড় বড় কথা বলে। আওয়ামী লীগের টাকায় বিএনপি নগর ভবন বন্ধ করছে।  

‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হবে না’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদের এ বক্তব্যে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘আপনি ভারত থেকে এসে ভারতের দালাল হয়ে গেছেন। দেশ ধ্বংস করছেন। সালাউদ্দিন ভারতের প্রেসক্রিপশনে কাজ করছেন।’ 

আইন উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ড. আসিফ নজরুল জুলাই ঘোষণাপত্র নিয় টালবাহানা করছেন। জনগণের রক্তের সঙ্গে আপনি বেআইনি করছেন। জুলাই ঘোষণাপত্র না দিলে আপনি দেশে থাকতে পারবেন না।’

নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ২০২২-এর যে আইন রয়েছে, সেই আইনের মাধ্যমে বর্তমান নির্বাচন কমিশনার যারা রয়েছেন তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনের যারা গত তিনটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করেছিল, কর্মকর্তা-কর্মচারী অনেকে এর সঙ্গে জড়িত ছিল। জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে প্রথম দাবি হলো, ইসিকে পুনর্গঠন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা কয়েকদিন আগেও মাঠে নেমেছিলাম, আমাদের একটি দাবি আদায় হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের ইলেকশন কমিশন, সংবিধান এখনও নিষিদ্ধ হয় নাই। আমরা সংবিধান পোড়ানোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। বাংলাদেশের কোনো মুজিবীয় সংবিধান থাকবে না।

বিক্ষোভ সমাবেশে শ্রমিক উইং কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আবু আবদুল্লাহ বলেন, অবৈধ উপায়ে গঠিত এ ইসি মেনে নেব না। 

এনসিপি কেন্দ্রীয় সদস্য আল আমিন টুটুল বলেন, জনভোগান্তির আন্দোলন করে জনগণকে পাশে পাবেন না। একদল চলে গেছে, আরেক দল খাওয়ার অপেক্ষায়। আমরা চাই স্থানীয় নির্বাচন, যাতে সবাই নাগরিক সুবিধা পায়। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নতুন ইসি গঠনের দাবি জানান তিনি।

সমাবেশে এনসিপির কলাবাগান প্রতিনিধি মাসুম বিল্লাহ বলেন, বর্তমান ইসি প্রশ্নবিদ্ধ কাজ করছে, অবৈধ আইনে গঠিত হয়েছে। আমরা এ ইসি পুনর্গঠনের দাবি জানাই। আমরা চাই দ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচন।

পল্লবী থানা শাখার রেহানা আক্তার রুমা বলেন, আমরা এখানে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি। দ্রুত এ ইসির পরিবর্তন চাই। 

রমনা থানা শাখার নারী প্রতিনিধি ডা. ইশরাত জাহান বলেন, আমি একজন মা, এখানে উপস্থিত হয়েছি। বড় দলগুলোর ব্যর্থতায় আমরা এনসিপিতে যোগ দিয়েছি। এ ইসিকে ধিক্কার জানাই। 

মিরপুর মডেল থানা প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম বলেন, সারাদেশের মানুষের একই চাওয়া। ঢাকা দক্ষিণ নিয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ইসির পদত্যাগ চাই। ইসি পুনর্গঠন চাই। 

গুলশান প্রতিনিধি নূরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, আমরা যা চাই দাবি আদায় করে নিতে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিয়ে জনপ্রিয়তা যাচাই করুন।

উত্তরা পূর্ব থানার প্রতিনিধি মাহিন সরকার বলেন, ইসি পুনর্গঠন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে দিতে হবে। এই কমিশন শেখ হাসিনা সরকারের মতো চলছে। নতুন ইসি দিয়ে আগে স্থানীয় নির্বাচন দিন। এরপর জাতীয় নির্বাচন। 

গেন্ডারিয়ার নাজমুল ইসলাম বলেন, ইসির লজ্জা থাকা উচিত। নতুন বাংলাদেশে কোনো পক্ষপাতিত্ব চলবে না। 

মোহাম্মদপুর প্রতিনিধি আবু সুফিয়ান বলেন, এটা আমাদের গণদাবি। ইসি পুনর্গঠন হলে সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে। আমরা নতুন ইসি চাই। 

কামরাঙ্গীচর প্রতিনিধি মেহেদী হাসান বলেন, আপনারা হয়তো পালানোর সুযোগ পাবেন না। এ মুহূর্তে ইসি পুনর্গঠন প্রধান সংস্কার দাবিতে পরিণত হয়েছে। 

খিলক্ষেত থানার তৌফিকুল ইসলাম বলেন, বিগত আমলের আইন এখনও বলবৎ আছে। বর্তমান ইসি কখনও নির্দলীয় ভূমিকা পালন করেনি। ইশরাক অবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। 

বেলা সোয়া ১টার দিকে এনসিপির নেতারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে নির্বাচন ভবনের মূল ফটকে অবস্থান নেন। এ সময়  ইসির বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান দেন তারা।