Image description
দেশজুড়ে বৈরী আবহাওয়া ও ভারতের পানি আগ্রাসন সীমান্ত নদী-নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে, প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল, দেখা দিয়েছে নদীভাঙন

ভারত থেকে আসা ঢল ও টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আগাম বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ইতোমধ্যে দেশের সীমান্ত নদী-নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল, দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। এমন পরিস্থিতিতে শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাঝারি ধরনের বন্যার শঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। এদিকে টানা ভারী বর্ষণ এবং ভারতের ঢলে কুড়িগ্রামেও তিস্তা, জিঞ্জিরাম, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বাড়ছে। ইতোমধ্যে তিস্তার চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাদাম, পাট, বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, এ মাসের শেষ দিকে একটি লঘুচাপ তৈরি হতে পারে এবং এ লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।

ভারতের পানি আগ্রাসনের ফলে গত বছর বর্ষার শেষে ২১ আগস্ট হঠাৎ করে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের ১২টি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। এতে ৬৮টি উপজেলার ৫০৪টি ইউনিয়ন-পৌরসভায় প্রায় ১০ লাখ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এছাড়া ৫৭ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যায় মৃত্যু হয় ৫৯ জনের। স্মরণকালের ওই ভয়াবহ বন্যার দুর্বিষহ স্মৃতি আজও ওই এলাকার জনমনে আতঙ্ক ছড়ায়। এবারো কি ভারত পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদের ডুবাবে?

গত দু’দিন যাবৎ ভারতের মেঘালয় ও আসামে টানা ভারী বর্ষণের কারণে সিলেটের সীমান্তবর্তী নদীগুলোতে ঢল নেমেছে। বিশেষ করে, সীমান্তের গোয়াইনঘাট উপজেলার পিয়াইন ও ডাউকি নদীতে পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পিয়াইনের পানি উপচে প্রবেশ করছে লোকালয়ে। সুরমা নদীর কানাইঘাট সীমান্ত এলাকার অবস্থাও একই। মেঘালয় ও আসামে টানা ভারী বর্ষণের পানি ভারত থেকে নেমে আসছে। এতে শেরপুরে গত চার দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এরই মধ্যে চেল্লাখালী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। মহারশির নদীর দিঘিরপাড় বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাউবোর আশঙ্কা, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জেলার সব পাহাড়ি নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

গত তিন-চার দিনের টানা ভারী বর্ষণ এবং ভারতের ঢলে কুড়িগ্রামেও তিস্তা, জিঞ্জিরাম, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বেড়েছে। ইতোমধ্যে তিস্তার চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাদাম, পাট, বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ফসলি জমি ডুবে গেছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তাপারের পাঁচগাছি, গাবেরতল, দলদলিয়া, থেতরাই, বেগমগঞ্জ, মোল্লারহাট, সরিষাবাড়ী ও বিদ্যানন্দ এলাকায়। ভারী বর্ষণে রংপুর নগরীর শ্যামাসুন্দরী খাল উপচে আশপাশের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। গত সোমবার রাতভর বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় নগরীর অন্তত ২০টি মহল্লা এক থেকে দেড় ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলা সদর, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলায় ৮৪ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষেত জলমগ্ন হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, এবার দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে। এরই মধ্যে গত ২০ মে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে সিলেটে, ১৯২ মিলিমিটার। সিলেট ছাড়াও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে রংপুর ও কুড়িগ্রামের রাজারহাটে। এর মধ্যে রংপুরে ১৪৬ মিলিমিটার, রাজারহাটে ১২২ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে। এছাড়া মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৬৪ মিলিমিটার এবং ঢাকায় ২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শেরপুর, নেত্রকোনা, সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নদীতে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পাবে। এতে মাঝারি ধরনের বন্যা দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া আগামী ২৭ মে লঘুচাপ, ২৮ মে নিম্নচাপ ও গভীর নিম্নচাপ এবং ২৯ মে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করা যাচ্ছে। তখন সারাদেশে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের বেশ কয়েকটি জেলা প্লাবিত হতে পারে।