এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিল ও সংস্থার চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, এনবিআর চেয়ারম্যানকে লাগাতার অসযোগিতা, অবস্থান ধর্মঘট ও পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনবিআর ইস্যুতে মঙ্গলবার (২০ মে) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এর সঙ্গে বৈঠক হলেও তা ‘ফলপ্রসূ হয়নি’ এবং উপদেষ্টা তাদের কথা শোনেন নি বলেও দাবি করেন তারা।
বুধবার (২১ দুপুরে) দুপুরে এনবিআর ভবনে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ এর ব্যানারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত কর কমিশনার হাসিনা আক্তার, উপ কমিশনার শাহাদাত জামিল শাওন ও উপ কর কমিশনার মোহাম্মদ মোস্তফিজুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখিত সংগঠনের ব্যানারেই গত পাঁচদিন ধরে কলমবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন এনবিআর এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
চার দফা দাবির অপর দুটি দাবি হচ্ছে- রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা; এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া এবং পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনাপূর্বক প্রত্যাশী সংস্থাসমূহ, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করা।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ব্রিফিংয়ের পর থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে লাগাতার অসহযোগিতা করা হবে। দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার (২২ ম) দুপুরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। সেসঙ্গে একইদিন এনবিআর এবং ঢাকা ও ঢাকার বাইরে স্ব-স্ব দফতরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে, রফতনি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এর আওতামুক্ত থাকবে।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, আগামী ২৪ মে (শনিবার) এবং ২৫ মে (রবিবার) কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনসমূহ ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। এই দুইদিন কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনসমূহে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। তবে, রফতনি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে।
ব্রিফিংয়ে আরও বলা হয়, আগামী ২৬ মে থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দফতরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে।
এদিকে মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা জানান যে, বৈঠক ‘ফলপ্রসূ হয়েছে’।
তবে এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। অর্থ উপদেষ্টা এনবিআর কর্মকর্তাদের কথাও শুনতে চান নি। মঙ্গলবার রাতেই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে এনবিআর ভবন ও সারাদেশে এর অধীনস্থ সব প্রতিষ্ঠানে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
অর্থ উপদেষ্টার সাথে মঙ্গলবারের বৈঠক প্রসঙ্গে বলা হয়, ঐক্য পরিষদের ১৩ জন প্রতিনিধির মধ্যে মাত্র ২ জন প্রতিনিধি বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। সভায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয় যে, এনবিআরের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সংস্কারের পক্ষে এবং তারা চান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পূর্ণাঙ্গ, টেকসই ও কার্যকরভাবে সংস্কার করা হোক।
পরিষদের পক্ষ থেকে দৃঢ়ভাবে বলা হয়, এনবিআর-কে অক্ষুণ্ন রেখে তাকে আরও শক্তিশালী, আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করাই হবে দেশের জন্য কল্যাণকর। এছাড়া, পরিষদ এটিও উল্লেখ করে যে, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও থিংক ট্যাংক যেমন সিপিডি, টিআইবি প্রমুখ ইতোমধ্যে প্রকাশ্য বিবৃতিতে সংস্কার প্রক্রিয়ার কাঠামো ও পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং ত্রুটিপূর্ণ দিকগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সভায় রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির সদস্যরা স্পষ্টভাবে বলেন যে, তাদের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে যেভাবে সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে, তা জারিকৃত অধ্যাদেশে প্রতিফলিত হয়নি। কমিটির সদস্যরা বলেন, যদি তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাহলে তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে এবং জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে। তারা দুটি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই নির্ধারিত হওয়া উচিত—এই বিষয়ে জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করেন।
বিফ্রিংয় লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, পরামর্শক কমিটির বক্তব্যের শেষে দুইজন উপদেষ্টা বক্তব্য রাখেন। আমরা আশা করেছিলাম যে, পরামর্শক কমিটির সদস্যদের বক্তব্যের ধারাবাহিকতা দুইজন উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্যে পাবো। কিন্তু পরিতাপের সাথে আমরা জানাচ্ছি যে, তারা জারিকৃত অধ্যাদেশের পক্ষে কথা বলেন এবং অধ্যাদেশটি ভালো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। কোনটি সঠিক, কোনটি আন্তর্জাতিক মানদন্ডে গ্রহণযোগ্য, কোনটি দেশের জন্য সর্বোত্তম হবে সে বিষয়ে তারা কিছু বলেননি। সবশেষে সভায়বিফ্রিংয় লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, পরামর্শক কমিটির বক্তব্যের শেষে দুইজন উপদেষ্টা বক্তব্য রাখেন। আমরা আশা করেছিলাম যে, পরামর্শক কমিটির সদস্যদের বক্তব্যের ধারাবাহিকতা দুইজন উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্যে পাবো। কিন্তু পরিতাপের সাথে আমরা জানাচ্ছি যে, তারা জারিকৃত অধ্যাদেশের পক্ষে কথা বলেন এবং অধ্যাদেশটি ভালো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। কোনটি সঠিক, কোনটি আন্তর্জাতিক মানদন্ডে গ্রহণযোগ্য, কোনটি দেশের জন্য সর্বোত্তম হবে সে বিষয়ে তারা কিছু বলেননি। সবশেষে সভা অর্থ উপদেষ্টা জানান যে, বাস্তবায়ন পর্যায়ে আমাদের কনসার্ন অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করবেন। মিটিং শেষে অর্থ উপদেষ্টা মহোদয় একটা বক্তব্য মিডিয়ার কাছে দিয়েছেন। তার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, অর্থ উপদেষ্টা মহোদয় বলেছেন, দেশের স্বার্থে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দশের স্বার্থে যে অধ্যাদেশ অনুমোদন হয়েছে তা থাকবে, তবে আমাদের যে জিনিসগুলে আছে তা এডভাইজরি কমিটির সাথে আলোচনা করে বিধি বা অন্য কিছু করে অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করা হবে। এ বিষয়ে আর কোন আলোচনা নয় তিনি জানিয়েছেন। আমাদের আন্দোলন চলবে কী চলবেনা সে বিষয়ে কিছু আসে যায়না মর্মে তিনি মন্তব্য করেছেন। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, জুলাই বিপ্লব ফ্যাসিবাদ উত্তর যুগে মিটিং এ সরকারের নীতিনির্ধারকগণের বক্তব্য ও সভা শেষে মিডিয়ায়্ প্রদত্ত বক্তব্য আমাদেরকে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। আমরা সবশেষে কিছু কথা বলার সুযোগ চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদেরকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তথাপি, পরবর্তীতে গণমাধ্যমে সভাটি ‘ফলপ্রসূ’ ছিল বলে মাননীয় অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য ও মন্তব্য উল্লেখ করা হয়। অর্থ উপদেষ্টা জানান যে, বাস্তবায়ন পর্যায়ে আমাদের কনসার্ন অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করবেন। মিটিং শেষে অর্থ উপদেষ্টা মহোদয় একটা বক্তব্য মিডিয়ার কাছে দিয়েছেন। তার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, অর্থ উপদেষ্টা মহোদয় বলেছেন, দেশের স্বার্থে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দশের স্বার্থে যে অধ্যাদেশ অনুমোদন হয়েছে তা থাকবে, তবে আমাদের যে জিনিসগুলে আছে তা এডভাইজরি কমিটির সাথে আলোচনা করে বিধি বা অন্য কিছু করে অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করা হবে। এ বিষয়ে আর কোন আলোচনা নয় তিনি জানিয়েছেন। আমাদের আন্দোলন চলবে কী চলবেনা সে বিষয়ে কিছু আসে যায়না মর্মে তিনি মন্তব্য করেছেন। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, জুলাই বিপ্লব ফ্যাসিবাদ উত্তর যুগে মিটিং এ সরকারের নীতিনির্ধারকগণের বক্তব্য ও সভা শেষে মিডিয়ায়্ প্রদত্ত বক্তব্য আমাদেরকে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। আমরা সবশেষে কিছু কথা বলার সুযোগ চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদেরকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তথাপি, পরবর্তীতে গণমাধ্যমে সভাটি ‘ফলপ্রসূ’ ছিল বলে মাননীয় অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য ও মন্তব্য উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে গেল ১৪ মে থেকে ১৯ মে পর্যন্ত টানা ৫ দিন কলমবিরতি পালন করে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। গেল বুধবার শুরু হওয়া ওই কলমবিরতি চলে সোমবার পর্যন্ত। অর্থ উপদেষ্টার আহ্বানে মঙ্গলবারের জন্যে কলমবিরতি স্থগিত করা হয়।
এদিকে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে ডাকা ৫ দিনের কলমবিরতি ও চলমান আন্দোলনে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে তথ্য এসেছে। এই অন্দোলন অব্যাহত থাকলে রাজস্ব আয়ে বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।