
গ্রাম্যভাষায় বহুল প্রচলিত প্রবাদবাক্য ‘গরীবের বউ সবার ভাবী’। গরিবের বউয়ের কাছে সবাই বেশি সুবিধা নেবার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ যেন সবার ভাবি হয়ে গেছে। প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে ‘সবার ভাবি’র মতো ব্যবহার করছে। হাসিনা রেজিমে হিন্দুত্ববাদী ভারত খেয়ালখুশি মতো বাংলাদেশ নিয়ে খেলেছে। এখন জাতিসংঘের ঘাড়ে বন্দুক রেখে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে গরীবের বউয়ের মতো ব্যবহারের চেষ্টা করছে। এতোদিন বাংলাদেশের গণতন্ত্র জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র মায়াকান্না করেছে। এখন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিনীদের মাথ্যাব্যাথা নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যবহার করে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে পাস করা ‘বার্মা অ্যাক্ট’ আইন বাস্তবায়নের চেষ্টায় রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ দেয়ার নামে শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশকে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত এক ব্যাক্তি মার্কিনীদের এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে কোমড় বেঁধে নেমেছেন। ভাবখানা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হলেও মার্কিন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু বেঁকে বসেছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক দল ও এমন কি দেশপ্রেমি সেনাবাহিনী। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ দেয়ার বিরুদ্ধে ঐকবদ্ধ হয়েছে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবি, বাসদ, জেএসডি, এলডিপি, জাগপা, গণফোরাম, গণসংহিত আন্দোলন, ১২ দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, খেলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটসহ ডান-বাম-মধ্যপন্থী সব রাজনৈতিক দল করিডোর দেয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। দেশের সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতিকর্মী সবাই করিডোরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন। সেনাবাহিনীসহ তিন বাহিনীর অবস্থান তথাকথিত মানবিক করিডোর দেয়ার বিরুদ্ধে। যে কক্সবাজার-বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে করিডোর দেয়ার চেষ্টা চলছে সেখানের স্থানীয় জনগণ করিডোর দেয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে। তাদের বক্তব্য ‘জান দেব তবু সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে করিডোর দেব না, কক্সবাজার অঞ্চল আরাকান আর্মি-মিয়ানমার আর্মির রণক্ষেত্রে পরিণত হতে দেব না’।
ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর গোটা জাতি যখন নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে রয়েছে; তখন গোটা জাতিকে অন্ধকারে রেখে এই করিডোর দেয়ার চেষ্টা চলছে। সার্বভৌমত্ব বিরোধী এই করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্তে মূল ভুমিকা পালন করছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান। অথচ করিডোর নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে; এমনকি উন্নয়ন সহযোগী চীন এবং আশিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে এ ব্যাপারে কিছুই অবহিত করা হয়নি। গৃহযুদ্ধে জর্জরিত মিয়ানমারের সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। মিয়ানমারের সেনাশাসকের সঙ্গে চীনের রয়েছে সুসম্পর্ক। যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ডায় আরাকানে করিডোর দেয়ার অর্থই হলো চীনকে বিগড়ে দেয়া। গত ৮ মে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, ‘চীন তথাকথিত মানবিক করিডোর ইস্যুতে জড়িত নয়’। তার বক্তব্যে পরিস্কার উন্নয়ন সহযোগী দেশটি আরাকান আর্মিকে করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্ত ভালভাবে নেয়নি। আসিয়ানভুক্ত ১০ দেশকেও করিডোর বিষয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে অবহিত করা হয়নি।
দেশের সামরিক বিশেষজ্ঞ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, ‘পাশের দেশ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলছে। আরাকান আর্মি-মিয়ানমার আর্মি যুদ্ধ চলছে। মাঝে মাঝে যুদ্ধের গোলা বাংলাদেশে এসে পড়ছে এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় গৃহযুদ্ধে জর্জরিত মিয়ানমারের আরাকানে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মানবিক করিডোর দেয়া হলে যুদ্ধের বিস্তৃতি বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় গড়াবে। এতে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে যাবে’। ‘মানবিক করিডোর’ বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান জানিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘গৃহযুদ্ধকবলিত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য মানবিক করিডোর এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়। অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের সেটাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, করিডোর কিংবা সমুদ্র বন্দর বিদেশীদের দেয়ার সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকার নিতে পারে না। এই সিদ্ধান্ত নেবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ বা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার।’
ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালানোর পর মানুষ নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা স্বল্প সংস্কারে ডিসেম্বর বেশি সংস্কারে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচন পেছানোর ইস্যু সৃষ্টির প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। একের পর এক বিতর্কিত ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে। গত রমজান মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব ঢাকা সফরে এসে কক্সবাজারে এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করেন। এরপর হঠাৎ করে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়। যেখানে ভারতের হিন্দুত্ববাদী কৃষ্টির সঙ্গে মিশে থাকা অজিত দোভালকে নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে বসানো হয়েছে; সেখানে দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ড. খলিলুর রহমানকে বাংলাদেশে ওই স্পর্শকাতর পদে বসানো হয়। তিনি গত ৪ মে এক সেমিনারে করিডোর ইস্যু সামনে নিয়ে এসে বলেন, ‘মানবিক করিডোর নিয়ে সরকার কোনো চুক্তি স্বাক্ষর করেনি’। বাংলাদেশ আমেরিকার হয়ে আরাকানে প্রক্সি যুদ্ধ শুরু করছে এমন গুজব প্রতিবেশী দেশের কিছু গণমাধ্যম ছড়াচ্ছে, যা কখনো কাম্য নয়’। কিন্তু পরের দিন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘করিডোর দেয়ার ব্যাপারে নীতিগতভাবে আমরা সম্মত’। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে ‘খবর ধামাচাপা’ দিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘সরকার জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে তথাকথিত মানবিক করিডোর নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি’। অতপর এ নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এতোদিন মায়াকাঁন্না করা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এখন বাংলাদেশে নির্বাচনের বদলে ‘মানবিক করিডোর’ অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা দৌঁড়ঝাপ শুরু করেন। পশ্চিমাদের খুশি করতে জামায়াত প্রথমে রাখাইন আলাদা রাষ্ট্রের পক্ষ্যে বক্তব্য দিলে মিয়ানমার প্রতিবাদ করে। আর অন্তর্বর্তী সরকারের ছায়ার নীচে গড়ে উঠা জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) নেতারা নতুন সংবিধান রচনার দাবি নিয়ে উচ্চবাচ্য করলেও করিডোর ইস্যুতে নীরব ছিলেন। কিন্তু দেশপ্রেমি সেনাবাহিনী, বিএনপি, বুদ্ধিজীবী, সুশীল, বামদল, ইসলামী ধারার দলগুলো করিডোর দেয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠার পর জামায়াত ও এনসিপিও করিডোরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। কক্সবাজার, বান্দরবানের স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, সেখানেও করিডোর দেয়ার বিরুদ্ধে স্থানীয় জনতা ঐকবদ্ধ্যভাবে মাঠে নেমেছেন। তাদের বক্তব্য শান্তিপূর্ণ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে কোনো ভাবেই করিডোর দেয়ার নামে আরাকাম আর্মি ও মিয়ানমার আর্মির যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতে দেব না।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সামরিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য ও ডিফেন্স রিপোর্টাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য করিডোর দেয়ার প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনী নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে ‘করিডোর’ দিতো। কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয় এমন করিডোর দেয়ার বিরুদ্ধে। দেশের সার্বভৌমত্ব নিরাপদ রাখার ব্যাপারে সেনাবাহিনী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, সাংস্কৃতি কর্মী এবং সাধারণ মানুষ করিডোর দেয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। ৫ আগস্ট যেমন ছাত্রজনতা-সিপাহী ঐকবদ্ধ্যভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে; তথাকথিত মানবিক করিডোর ইস্যুতেও সিপাহী জনতা ঐকবদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ডা ‘মানবিক করিডোর’ দেয়ার বিরুদ্ধে দেশে সিপাহী জনতার ঐক্য হয়ে গেছে। ৫ আগষ্ট সেনাবাহিনী ও ছাত্রজনতা যে ভাবে ঐকবদ্ধ্যভাবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন; করিডোর ইস্যুতে তেমনি তারা একতাবদ্ধ। দেশে প্রথম সিপাহী জনতার ঐক্য ঘটেছিল ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়। শেখ মুজিবুর রহমান যখন পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে ধরা দেন এবং আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের প্রাণ নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান তখন সেনা কর্মকর্তা মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মুক্তিযুদ্ধে কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে সিপাহী জনতা পাকিস্তান বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। অতপর ’৭৫ সালে ৭ নভেম্বর ভারতের অনুগত খালেদা মোশাররফ গংদের ক্ষমতাচ্যুত করে সিপাহী জনতার বিপ্লব ঘটায়। ঢাকার রাজপথে সেদিন সিপাহী জনতার মিছিল এবং ট্যাঙ্কের উপর জনতার বিজয় নৃত্য দেখা গেছে।
রোহিঙ্গা ইস্যু সৃষ্টি হয় জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ’৭৮ সালে। তখন বাংলাদেশে তিন লাখ রোহিঙ্গা প্রবেশ করে। সে সময়ের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দক্ষ কূটনৈতিক নেতৃত্বে রোহিঙ্গাদের একটা অংশ মিয়ানমার ফেরত পাঠানো হয়। ১৯৯১ সালে একবার যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের সহায়তায় করিডোর ইস্যু তোলেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া সেটাতে পাত্তা দেননি। ২০১৭ সালে শেখ হাসিনার শাসনামলে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশেষ প্রবেশ করে। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে সালে সন্তু লারমাদের সঙ্গে পার্বত্য শান্তি চুক্তি করে ‘নোবেল পুরস্কার’ প্রত্যাশা করেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে বিক্ষুব্ধ হন হাসিনা। তিনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে নোবেল পুরস্কারের তদবির শুরু করেন। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যপারে আন্তর্জাতিক মহলকে পাশ কাটিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করায় একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠাতে পারেননি। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন করা মিয়ানমার অশান্তির আগুনে জ্বলছে। কয়েক বছর ধরে মিয়ানমার আর্মি ও আরাকান আর্মির মধ্যে তুমূল যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধরত অবস্থায় একপক্ষকে (আরাকান) সুবিধা দিতে ত্রাণ পাঠানোর অজুহাতে বাংলাদেশ সীমান্তে করিডোর দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। প্রশ্ন হচ্ছে কার স্বার্থে দেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে যুদ্ধরত দুই পক্ষ্যের একটি পক্ষকে করিডোর দেয়ার চেষ্টা? সিপাহী জনতার বিরোধিতা উপেক্ষা করে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলে তথাকথিত মানবিক করিডোর দেয়ার ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানের কেন এতো আগ্রহ? যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কি তাকে এ পদে বসানো হয়েছে? এ প্রশ্ন তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা ঝড় তুলেছেন। তারা নানান মন্তব্য করছেন, বক্তব্য দিচ্ছেন, প্রতিবাদ করছেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো স্পর্শকাতর পদে দীর্ঘদিন য্ক্তুরাষ্ট্রে থাকা ড. খলিলুর রহমানকে বসানো হয়েছে কেন? দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এমন বহু যোগ্য লোক থাকার পরও দীর্ঘদিন বিদেশে বসবাসরত ব্যাক্তিদের অন্তর্বর্তী সরকারের এতোগুলো পদে বসানো হয়েছে কেন? দেশে অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন; তাদের গবেষণা ও কাজ আন্তর্জাতিক মানের। তারা প্রচ- জ্ঞানী ও প্রচুর পড়াশোনা করে থাকেন। তাদের মধ্যে থেকে যে কাউকে অন্তর্বর্তী সরকার নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে বসাতে পারতো।
ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্জিতের মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ছাত্রজনতা ড. ইউনূসকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের প্রতি মানুষের অগাধ আস্থা ও বিশ্বাসের কারণে এটা করেছেন। তিনিও জাতির কা-ারী হয়ে উঠেছেন। দেশের সব রাজনৈতিক দল ও ১৮ কোটি মানুষের বিরোধিতার মুখে যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে আরাকানকে তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ দেয়া হলে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জনপ্রিয়তার ইমেজ কি হুমকির মুখে পড়বে না? সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক করছেন।
সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, রাখাইনে করিডোর ও নিজস্ব সক্ষমতা ও লাভজনক থাকার পরও বিদেশি কোম্পানিকে বন্দর লিজ দেওয়া দেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্বের পরিপন্থি। করিডোর, বন্দর বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করতে শ্বেতপত্র প্রকাশ ও দেশ-মানুষের স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। যেকোনো অজুহাতে নির্বাচন বিলম্বিত করা, সাম্রাজ্যবাদী ‘প্রক্সি ওয়ারের মধ্যে দেশকে জড়িয়ে ফেলাসহ দেশ ও জগণের স্বার্থবিরোধী যেকোনো কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, মানবিক করিডরের প্রয়োজন আছে কি না, সেই করিডরের নিয়ন্ত্রণ কাদের কাছে থাকবে, সেই করিডোর দিয়ে কি পারাপার হবে, প্রত্যেকটা বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই শক্তিশালী। অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল ও আয়োতনে ছোট হলেও ১৮ কোটি মানুষের এই দেশকে কোনোভাবেই দুর্বল ভাবা টিক নয়। বিশ্বের তথা ইউরোপের অনেক উন্নত দেশের জনসংখ্যা বাংলাদেশের একটি জেলার জনসংখ্যার সমান। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে দুর্বল ও খাটো করে দেখা এবং ‘গরীবের বউ সবার ভাবি’ মনে করা উচিত নয়।