Image description

পাশে সরকারি ইজারাকৃত জমি , তবে সেখানে হাট বসানো হয়নি । ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাছে থাকা নিজের মালিকানাধীন জমিতে বসানো হয়েছে সেই ‘ পল্লী হাট ’ । কাজটি করেছেন সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক । স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ , ইজারার জমি পড়ে রয়েছে । হাট বসানো হয়েছে মন্ত্রীর কেনা জমিতে । প্রতিদিন হাট থেকে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা খাজনা ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে , ২০২১ সালে মন্ত্রী থাকাকালে জাহিদ মালেক মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের কামতা এলাকায় প্রায় ৫ একর জমি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করান । পরে সেখানে ইটের সলিংসহ স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করে গড়ে তোলেন এই পল্লী হাট । হাটটিকে বৈধতা দিতে প্রায় ৩০০ ফুট দূরে ২৬ শতাংশ সরকারি জমি সরকারের নামে ওয়াফ দেখিয়ে সেখানে হাটের কাগজপত্র তৈরি করা হয় এবং সেটি তাঁর ছেলে ইজারা নেন । কিন্তু বাস্তবে হাট বসানো হয় মন্ত্রীর কেনা জমিতে । আর সরকারি ইজারাকৃত জমি পড়ে রয়েছে অবহেলায় । সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে , ২০২২- ২৩ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ( কাবিখা ) প্রকল্পের সাধারণ বরাদ্দ থেকে একটি বরাদ্দ নিয়ে ও একই অর্থবছরে আরও একটি বিশেষ প্রকল্প বরাদ্দ নিয়ে নিজ সম্পত্তির ওপর ইটের সলিং করেন জাহিদ মালেক । যদিও এ প্রকল্পের অর্থ পল্লী হাটের পাশের স্থানের নামে এসেছিল ।

কিন্তু ইউপি সদস্যদের সহযোগিতায় সাবেক এই মন্ত্রী সরকারি বরাদ্দের টাকা নিজের কবজায় নিয়ে নিজ সম্পত্তিতে ব্যয় করেছেন । খোঁজ নিয়ে দেখা যায় , সাটুরিয়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে ধানকোড়া ইউনিয়নের পল্লী হাটের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য কাবিখা প্রকল্প থেকে দুটি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় । ২০২২-২৩ অর্থবছরে কাবিখা প্রকল্পের অধীনে পল্লী হাটের উত্তর- পূর্বের ফ্ল্যাট সলিংয়ের জন্য সাধারণ বরাদ্দ থেকে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯০ টাকা দেওয়া হয় । ওই প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন ধানকোড়া ইউনিয়ন পরিষদের ( ইউপি ) সংরক্ষিত সদস্য ময়না বেগম ।

ময়না বলেন , ‘ আমাকে একটি প্রকল্পের সভাপতি করে কাজের দায়িত্ব দেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ । ' তবে এর চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না বলে মন্তব্য করেন । একই অর্থবছরে বিশেষ বরাদ্দ থেকে হাটের উত্তর পাশের ইট সলিংয়ের জন্য ৫ লাখ ৭১ হাজার ৪৯২ টাকা দেওয়া হয় । এ প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ । এ বিষয়ে জানতে রউফের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগের নেতা - কর্মী বলেন , সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে জাহিদ মালেক নিজের ভাগ্যোন্নয়নে সক্রিয় হন । যখন তাঁকে আওয়ামী লীগ সরকার মন্ত্রিত্ব দেয় , তখন থেকে মাফিয়া হয়ে ওঠেন । নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে নিজের সম্পত্তি ভরাট করেন । জমি ভরাটের পর কয়েক লাখ টাকা সরকারি বরাদ্দের অর্থ দিয়ে নিজের জমিতে ইট সলিং করে নেন ।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাবেক এই মন্ত্রী বিদেশে থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি । সার্বিক বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খলিলুর রহমান মোল্লা বলেন , ‘ এসব প্রকল্পের কাজ আমার সময় হয়নি । আমার আগের কর্মকর্তার সময় হয়েছে । তবে সরকারি অর্থে কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কাজ করার নিয়ম নেই । যদি কেউ করে থাকেন , তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে । '