
সম্প্রতি পুলিশের ১২ জন উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শককে (ডিআইজি) পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত আইজিপি করেছে সরকার। এই তালিকায় বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১২তম ব্যাচের একজন এবং ১৫তম ব্যাচের ১১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। যারা পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদবঞ্চিত হন এবং পুলিশের কম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোতে দায়িত্ব পালন করেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তারা পদোন্নতি পেয়ে ডিআইজি হন।
রবিবার পদোন্নতি পাওয়া ১১ জনকে পর্যায়ক্রমে মেধা তালিকা ধরে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে একজনকে পদবঞ্চিত করে মেধা তালিকায় নিচে থাকা অন্য আরেকজনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়ে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনে নানা আলোচনা-সমালোচনা এখন তুঙ্গে।
জানা গেছে, বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের মেধা তালিকায় (গ্রেডেশন নম্বর) ২৩ নম্বরে মাহবুবুর রহমান। তারপরেই ২৪ নম্বরে ছিলেন সিআইডির সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। যিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত আইজিপি হন (পরে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়)। আর মাহবুবুর রহমান তখন অতিরিক্ত ডিআইজি ছিলেন। পোস্টিং ছিল নৌপুলিশে। এই পুলিশ কর্মকর্তার বার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে নেতিবাচক মন্তব্য না থাকলেও তিনি পদোন্নতি পাননি। সর্বশেষ ১৭ আগস্ট মাহবুবুর রহমানসহ একই ব্যাচের আরও বেশ কয়েকজনকে পদোন্নতি দিয়ে ডিআইজি করে সরকার।
এদিকে ৮ মে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১২জনকে অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই তালিকায় নাম রয়েছে— পুলিশের ১২তম ব্যাচের কর্মকর্তা মো. গোলাম রসুল (গ্রেডেশন নম্বর ৪), ১৫তম ব্যাচের এ কে এম আওলাদ হোসেন (গ্রেডেশন নম্বর ৮), মো. আকরাম হোসেন (গ্রেডেশন নম্বর ৯), হাসিব আজিজ (গ্রেডেশন নম্বর ১২), গাজী জসীম উদ্দিন (গ্রেডেশন নম্বর ১৩), আবু নাছের মোহাম্মদ খালেদ (গ্রেডেশন নম্বর ১৪), মো. রেজাউল করিম (গ্রেডেশন নম্বর ১৫), খোন্দকার রফিকুল ইসলাম (গ্রেডেশন নম্বর ১৭), মো. মোস্তফা কামাল (গ্রেডেশন নম্বর ১৮), মোসলেহ উদ্দিন আহমদ (গ্রেডেশন নম্বর ১৯), মো. ছিবগাত উল্লাহ (গ্রেডেশন নম্বর ২০) এবং সরদার নূরুল আমিন (গ্রেডেশন নম্বর ৩১)।
তালিকায় সর্বশেষ নাম থাকা সরদার নূরুল আমিনের মেধা তালিকা বা গ্রেডেশন নম্বর ৩১। তবে মেধা তালিকার ওপরে থাকা অনেক কর্মকর্তা পাননি পদোন্নতি। সেই তালিকায় অন্যতম সিআইডির ডিআইজি মাহবুবুর রহমান। তার মেধা তালিকা বা গ্রেডেশন নম্বর ২৩। এখন প্রশ্ন আসছে, মেধা তালিকায় ২৩ নম্বরে থাকা মাহবুবুর রহমান কিংবা অন্য ডিআইজিদের নাম বাদ দিয়ে কেন নিচের সিরিয়ালে থাকা অন্য আরেকজনকে পদোন্নতি দেওয়া হলো।
সূত্র বলছে, মেধা তালিকায় ২০ নম্বরে থাকা ছিবগাত উল্লাহ’র পরেই মাহবুবুর রহমান পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল। কারণ, মেধা তালিকায় ২১ নম্বরে থাকা শোয়েব আহাম্মদ অবসরে গেছেন। তারপরে মো. শাহরিয়ার এখনও পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এরপরেই মেধা তালিকায় ডিআইজি মাহবুবুর রহমানের নাম রয়েছে। কিন্তু মাহবুবুর রহমানকে টপকে তালিকায় ৩১ নম্বরে থাকা সরদার নূরুল আমিনকে অতিরিক্ত আইজিপি করা হয়েছে।
সরদার নূরুল আমিনের আগে মেধা তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন— ডিআইজি আলী হোসেন ফকির (৫ আগস্টের পর পদোন্নতি পান এবং এরআগে দুইবার চাকরি চলে যায়), আজিজুর রহমান আজিজ, ব্যারিস্টার জিল্লুল রহমান (তিনবার চাকরি হারান), শেখ মিজানুর রহমান, আবু সালেহ গোলাম মোহাম্মদ এবং ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. সারওয়ার। এসব কর্মকর্তাদের সবাইকে টপকে পদোন্নতি পেয়েছেন সরদার নূরুল আমিন।
এদিকে অতিরিক্ত আইজিপি পদে ১২টি পদ শূন্য ছিল। এই পদে পদোন্নতি দিতে চলতি মাসে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভা হয়। যেখানে মেধা তালিকায় নাম থাকা কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে অনুযায়ী পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের তালিকায় ১২ নম্বরে নাম থাকার কথা ছিল ডিআইজি মাহবুবুর রহমানের।
জানা গেছে, মাহবুবুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কুড়িগ্রামের এসপি হন। তারপর সিআইডি, নৌপুলিশ এবং পুলিশের ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে চাকরি করেছেন। বিএনপির ঘরানার হওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারে তাকে পদবঞ্চিত করে রাখে। তিনি চলতি বছরের ৩১ জুলাই অবসরে যাবেন।
নাম প্রকাশ না শর্তে ১৫ তম ও ১৭ তম ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে বলেন, যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হলো তাতে মনে হচ্ছে আগের আমল ফিরে এসেছে। বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের বিভিন্ন ব্যাচে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা পদোন্নতিবঞ্চিত অবস্থায় কর্মরত আছেন। আবার অনেকে বছরের পর বছর পদোন্নতিবঞ্চিত হয়ে অবসরে চলে গেছেন। অথচ তাদের সবারই পদোন্নতি পাওয়া সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ছিল।
এ বিষয়ে পুলিশের সাবেক আইজিপি মুহম্মদ নূরুল হুদা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পদোন্নতিতে মেধা এবং জ্যেষ্ঠতা আসল। পদোন্নতি কেউ দাবি করতে পারে না। পুলিশের আইজিপি যে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন এবং সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড তালিকা দেখেই পদোন্নতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।’
সাবেক পুলিশপ্রধান আরও বলেন, ‘যিনি বঞ্চিত হয়েছেন তিনি যদি মনে করেন পদোবঞ্চিত হয়েছেন তাহলে একটি আবেদন করতে পারেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করবেন আমার জ্যেষ্ঠতা আছে, মেধা আছে, আমার রেকর্ড ভালো কিন্তু আমি প্রমোশন পেলাম না— এটা পুনর্বিবেচনা করা হোক।’
(ঢাকাটাইমস